চট্টগ্রামে দশ কিলোমিটার সড়কে ধুলোর রাজত্ব

শুকনো মৌসুমে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ আর খোঁড়াখুড়ির ফলে দুর্ভোগে পড়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোমোস্তফা ইউসুফবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2017, 07:28 AM
Updated : 23 Jan 2017, 09:46 AM

কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কের মদুনাঘাট অংশ থেকে নগরীর বহদ্দারহাট পর্যন্ত প্রায় দশ কিলোমিটার সড়কে চলছে ধুলোর রাজত্ব।

কর্তৃপক্ষ বলছে, কাজের যা গতি, তাতে এই পরিস্থিতি চলবে আরও কয়েক মাস। জনভোগান্তি কমাতে কী করা যায়, তা নিয় ভাবছেন তারা।

নগরীর ওই অংশের মদুনাঘাট, নজুমিয়া হাট, কুয়াইশ, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, মৌলভী পুকুর পাড়, পুরাতন চান্দগাঁও, বাস টার্মিনাল, খাজা রোড ও বহদ্দারহাট এলাকায় প্রায় দশ কিলোমিটার সড়কজুড়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলি পানি সরবরাহ প্রকল্পের পাইপ বসানোর কাজ চলছে।

প্রকল্পের উপ-পরিচালক আরিফুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই তারা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন।

“পাইপ বসানোর পর সড়কে পাইপের চাপ সহনশীলতা ও পানির চাপ কতটা নিতে পারছে সেটা দেখার বিষয় থাকে। এখন টেস্টিং পিরিয়ড চলছে। আগামী চার মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।”

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের ওই অংশের অ্যাসফল্ট তুলে পাইপ বসানোর পর ইট ও বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। কাটা অংশে যানবাহনের চাকা গড়ালেই কুণ্ডলী পাকিয়ে উড়ছে ধুলো।

ধুলোর দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থী, অফিসযাত্রী, চালক ও পথচারীদের অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করতে বাধ‌্য হচ্ছেন। অনেক খাবার দোকানের সামনের অংশ ত্রিপল দিয়ে ঢেকে ধুলো এড়ানোর চেষ্টা চলছে।

সড়কের ওই অংশে রয়েছে দুটি কলেজসহ ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হাজারো শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন ওই ধুলোময় এলাকা পার হয়ে ক্লাসে যেতে হচ্ছে। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিলতা বাড়ার কথা বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ যেখানে ১০০ পিপিএম পার হলেই বিপদজনক মাত্রায় বলে ধরা হয়, সেখানে চলতি শীত মৌসুমে প্রায় প্রতিদিনই চট্টগ্রামের বাতাসে এই পরিমাণ ছিল ৩৫০০ পিপিএমের বেশি।

নগরীর পুরাতন চান্দগাঁও এলাকার ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাড়িতে বা পথে- যেখানেই থাকি না কেন ধুলোর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। ক্লাসরুমের জানালা খোলা রাখলেও ধুলো ঢোকে।’’

পঞ্চাশোর্ধ্ব বক্কর আলী কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কে অটোরিকশা চালান। হাঁপানির সমস‌্যা তার আগে থেকেই ছিল। এবারের শীতে ধুলোর কারণে কাজে বের হওয়াই তার জন‌্য কঠিন হয়ে উঠেছে।

আগে প্রতিদিন আট দশবার যাত্রী নিয়ে আসা-যাওয়া করলেও কষ্ট হয় বলে এখন তা কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানান বক্কর।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দীর্ঘমেয়াদে ধুলোবালির মধ্যে থাকলে ফুসফুসে সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টাইফয়েড, সর্দিকাশি ও চোখের ইনফেকশন হতে পারে। এতে বেশি ক্ষতি হতে পারে শিশুদের।

ধুলোর অত‌্যাচার থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) প্রধান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অস্বাভাবিক যে ধুলোবালি সেটা মূলত সিডিএর ফ্লাইওভার নির্মাণ ও ওয়াসার প্রকল্পের কারণে হচ্ছে। আমরা তাদেরকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তারা কতটা কি করেছে সেটা দেখা হবে।’’

শুকনো মৌসুমে সড়কে ধুলোর দাপট কমাতে ছয় বছর আগে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সুইপিং গাড়ি কেনে সিটি করপোরেশন। ২০১৩ সালে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া আরও দুটি গাড়ি যুক্ত হয় করপোরেশনের বহরে। প্রতিটি গাড়ির দাম পড়ে ৮৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে। তিনটি গাড়িই এখন অচল হয়ে পড়ে আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “ওই গাড়িগুলো উন্নত বিশ্বের মসৃণ সড়কে জমে থাকা হালকা ধুলো পরিষ্কার করার উপযোগী। আমাদের আবহাওয়ার উপযোগী গাড়ি কেনার চিন্তা আছে।”