আমার রক্তক্ষরণ হচ্ছে: প্রধান বিচারপতি

আইনজীবীদের এজলাস ভাংচুরের ঘটনা দুঃপ্রকাশ করে একে ‘ন্যক্কারজনক’ অভিহিত করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2017, 02:33 PM
Updated : 19 Jan 2017, 02:44 PM

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় নব নির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব‌্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, এ ঘটনায় তার ‘রক্তক্ষরণ’ হচ্ছে।

দীর্ঘ ৫০ মিনিটের বক্তব্যের শুরুতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের উপস্থিতিতে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এজলাস ভাংচুরের ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “আজকে আমার খুবই খুশির দিন হওয়ার কথা। কিন্তু আমি ভারাক্রান্ত এবং মর্মাহত। সিলেটের পরে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে আসছি চিটাগাংকে। ঢাকার উপরে আমি চিটাগাংকে অগ্রাধিকার দেই।

“কিন্তু সকালে যখন এয়ারপোর্টে এসে পত্রিকা পড়লাম। যে খবর পড়লাম। আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম, আমার চিটাগাং বারে এই ভবন উদ্বোধনের জন্য যাওয়া উচিত কি না? এরপরে আমি নিজেকে আবার প্রশ্ন করলাম, মান-অভিমানের চেয়ে বিচার বিভাগের স্বার্থ সবচেয়ে বড় জিনিস। আমাকে বিচার বিভাগের স্বার্থে আসতে হলো।”

মানবপাচার মামলায় গ্রেপ্তার জামাল হোসেন নামে এক আইনজীবী ও তার স্ত্রীর জামিন বুধবার বিকালে নাকচ হলে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আইনজীবীদের বিক্ষোভ ও এজলাস কক্ষে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জামিন নাকচ হলে ওই আসামির পক্ষে দাঁড়ানো আইনজীবীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে আরও আইনজীবী যোগ দেন তাদের সঙ্গে। কয়েকশ আইনজীবী এজলাস থেকে বের হয়ে বিচারকের কক্ষের জানালার কাচ ভাংচুর করেন।

ভাংচুরের ঘটনা তদন্তে তিন সদস‌্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি..গতকাল যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটলো। নিজে এতদিন গর্ববোধ করতাম, যে আমি প্রথমে একজন আইনজীবী। এরপরে আমার পরিচয় হলো বিচারক।

“যে মহান আইন পেশা..বিচার বিভাগ কোনো দিনই প্রবর্তন হতো না আপনারা এই আইনজীবীরা.. যে কমন ল সিস্টেম আছে এটা আপনারাই প্রবর্তন না করলে। সারা পৃথিবীতে আইনের শাসনের কথা বলা হচ্ছে, এটার অগ্রণী ভূমিকা হচ্ছে আইনজীবীদের।”

প্রধান বিচারপতির বক্তব্য চলাকালে পুরো অনুষ্ঠানস্থলে পিনপতন নিরবতা নেমে আসে।

আইনজীবীদের লক্ষ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আশা রাখব, মহান আইনজীবীরা আদর্শের প্রতি বিশ্বাস রেখে এই আইন পেশায় নিয়োজিত। আপনারাই এই মহান আদর্শের ধারক। আপনাদের যদি চুল পরিমাণ বিচ্যুতি হয় তাহলে কে হাল ধরবে? আমরা বিচারকরা একটা লাইনও লিখতে পারব না আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া।

“আপনারাই আমাদের প্রাণ। আপনাদের ছাড়া আমরা কোনো মতেই কোনো কিছু করতে পারব না। আপনাদের যদি একটু বিচ্যুতি হয় এটা আমাদের রক্তক্ষরণ। আমার তো হেমারেজ হচ্ছে এখন।”

বিচারকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমি প্রায়ই শুনি, হাই কোর্টের মামলা যেগুলো, ঢাকাতে। এজলাসের মধ্যে হট্টগোল হয়। কিছু আইনজীবী আছেন ৫০ জন, ১০০ জন দাঁড়িয়ে যায়। এটা ঢাকাতে হচ্ছে ইদানিং, চট্টগ্রামে হয়েছে, সিলেটে হচ্ছে।

“আপনারা এসে দেখেন আমরা কী রকম কন্ট্রোল করি। এটা আপনাদের অপারগতা। আপনাদের যদি কমান্ড থাকে, যদি ক্ষমতা রাখেন.... আমাদের সুপ্রিম কোর্টেও হয়েছিল। এক কথায় থেমে যায়।”

আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আকুল আবেদন করছি। আপনাদেরকে যথেষ্ট সম্মান করি। যদি ৫০ জন নিয়োজিত হয় আপনারা বসে শৃঙ্খলা করে একজন-দুইজন বলেন। কিন্তু কোর্টের ডেকোরাম যাতে নষ্ট না হয়। শৃঙ্খলা যাতে বজায় রাখেন।যদি না রাখেন, কোর্টের প্রতি, বিচার বিভাগের প্রতি, আইনের শাসনের প্রতি যে আস্থা সেটা বিলীন হয়ে যাবে।”

চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বক্তব্য রাখেন আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমীন এবং চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী।