স্কুলে বাড়তি ফি: চট্টগ্রামে মাঠে নেমেছে তদারক দল

স্কুলে ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ‘প্রকৃত চিত্র জানতে’ চট্টগ্রাম নগরীর স্কুলগুলোতে পরিদর্শন শুরু করেছে জেলা প্রশাসনের তদারক দল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2017, 12:17 PM
Updated : 20 Jan 2017, 11:50 AM

বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের সার্সন রোডে ইংরেজি মাধ‌্যমের চিটাগাং গ্রামার স্কুলে (সিজিএস) গিয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান ৬৩ হাজার টাকা ভর্তি ফি ও ১৯ হাজার টাকা মাসিক বেতন আদায়ের তথ্য পেয়েছেন।

তাহমিলুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অতিরিক্ত ভর্তি ফিসহ অন্যান্য ফির বিষয়ে তদারকির যে সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসন নিয়েছে তার ভিত্তিতেই আমরা কাজ করছি।

“নগরীকে পাঁচটি জোনে ভাগ করে মোট ৯৮টি স্কুলে এ তদারকির কাজ শুরু হয়েছে। এখানে (সিজিএস) কি ধরনের ফি তারা নেয় সেটা আমরা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি।”

তাহমিলুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তদারক দলটি চিটাগাং গ্রামার স্কুলে গিয়ে ভর্তি ফি, পুনঃভর্তি ফি, সেশন ফি, উন্নয়ন ফি এবং স্কুল পরিবর্তন (টিসি) ফি জানতে চায়।

এর ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে কি পরিমাণ ফি নেওয়া হয় তার একটি তালিকা করে দেয় সিজিএস কর্তৃপক্ষ। সিজিএসর অধ্যক্ষ মাহিন খানসহ কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা (সিজিএস স্কুল কর্তৃপক্ষ) মাত্র ৬৩ হাজার টাকা ভর্তি ফি এবং শ্রেণিভেদে ১৬ থেকে ১৯ হাজার টাকা মাসিক বেতন নেয় বলে জানিয়েছেন।”

সরকারি নীতিমালা অনুসারে ব্রিটিশ কারিকুলামে পরিচালিত বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই ফি কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ সেটা মিলিয়ে দেখার পাশাপাশি পরবর্তীতে অভিভাবকদের কাছ থেকেও তথ্য নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

তাহমিলুর বলেন, “কোনো অসামঞ্জস্য এবং তথ্য লুকানোর প্রমাণ পেলে শিক্ষাবোর্ডকে বলব এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে।”

এ বিষয়ে সিজিএসর অডিট ব্যবস্থাপক আজিজুর রহমান উপস্থিত সংবাদকর্মীদের বলেন, ভর্তি ফি ও বেতন নির্ধারণ করে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি। সরকারি গেজেট অনুসারে এর এখতিয়ারও কমিটির আছে।

ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তদারক দলে ছিলেন থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী মো. সাজ্জাদুল হক, জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক সাব্বির আহমেদ এবং ক্যাব সদরঘাট থানার সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস।

সহকারী পরিদর্শক সাব্বির জানান, ঢাকা মহানগরীতে ইংরেজি ভারসনে জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিচালিত কোনো স্কুলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ভর্তি ফি নেওয়া যায়।

“ব্রিটিশ কারিকুলামের ক্ষেত্রে এই ফি কতটা হতে পারে, এ বিষয়ে সরকারি নীতিমালা কী- তা খোঁজ নিয়ে জানাতে পারব।”

ব্রিটিশ কারিকুলামে পরিচালিত হলেও বেতন-ফি বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন ক্যাব প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌস।

সিজিএস স্কুল থেকে তদারক দলটি নগরীর ওয়াসা মোড় সংলগ্ন বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয় (বাওয়া) ও কলেজ পরিদর্শনে যায়।

বাওয়া স্কুলের প্রবেশ পথে কয়েকজন অভিভাবক তদারকি দলকে জানায়, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে ১০ হাজার ৩০০ টাকা ফি নেওয়া হয়।

এ সময় সড়কের বিপরীত পাশে অবস্থিত পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানায়, এবছর সাড়ে চার হাজার টাকা ভর্তি ফি দিয়ে তাকে ভর্তি হতে হয়েছে।

অন্য এক অভিভাবক জানান, পাঁচ হাজার ২০০ টাকা করে ভর্তি ফি দিয়ে তিনি তার দুই সন্তানকে পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন।

এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান বাওয়া স্কুলের ভেতরে যান।

বাওয়া স্কুলের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ারা বেগম তদারকি দলকে ষষ্ঠ থেকে দশম পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণির ভর্তি ফিসহ অন্যান্য ফি আদায়ের তালিকা ও রসিদ দেন।

এরপর ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান ফি আদায়ের ওই তালিকা ও রসিদের তথ্য থেকে সাংবাদিকদের জানান, প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে স্কুলটিতে এক মাসের বেতনসহ ১০ হাজার ৩০০ টাকা ভর্তি ফি নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, “কেউ টিসি নিয়ে চলে যেতে চাইলে ভর্তি ফি ও পুরো মাসের বেতন দিতে হয় বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এটা সরকারি নীতির সাথে সাংঘর্ষিক।”

জেলা প্রশাসনের গঠিত পাঁচটি দল পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্কুল পরিদর্শন করছে বলেও জানান তাহমিলুর রহমান।