চট্টগ্রামে আদালত ভাংচুরে আইনজীবীরা

এক সহকর্মীর জামিন নাকচ হওয়ায় আদালত ভবনে ভাংচুর চালিয়ে ক্ষোভ দেখিয়েছে চট্টগ্রামের একদল আইনজীবী।  

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2017, 01:10 PM
Updated : 18 Jan 2017, 04:17 PM

বুধবার বিকালে ওই বিক্ষোভ-ভাংচুরের পর ওই আইনজীবীর জামিন মিলেছে, যাকে মানব পাচারের অভিযোগে আগের রাতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর এলাকা থেকে সস্ত্রীক গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব।

ভাংচুরের ছবি তোলার সময় এক আলোকচিত্র সাংবাদিককে আটকে রেখে তার ক্যামেরাও কেড়ে নেন আইনজীবীরা।

আইনজীবী জামাল হোসেন ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারকে মঙ্গলবার গভীর রাতে আটকের পর পতেঙ্গা থানায় হস্তান্তর করেছিল র‌্যাবের একটি দল।

র‌্যাব কর্মকর্তারা থানায় সোপর্দের সময় মানবপাচারের ঘটনায় আটকের পর ইমিগ্রেশন পুলিশের দায়ের করা মামলায় ওই দম্পতিকে চালান দেওয়ার কথা জানান, বলেন পতেঙ্গা থানার ওসি আবুল কাশেম ভুইয়া।

বুধবার তাদের আদালতে পাঠানো হলে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। কিন্তু তা নাকচ করেন অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম শাহাদাত হোসেন ভুইয়া।

প্রত‌্যক্ষদর্শীরা জানান, তখন ওই আসামির পক্ষে দাঁড়ানো আইনজীবীরা বিক্ষোভ শুরু করে, একটু পর আরও আইনজীবী যোগ দেন তাদের সঙ্গে। কয়েকশ আইনজীবী এজলাস থেকে বের হয়ে বিচারকের কক্ষের জানালার কাচ ভাংচুর করে।

আদালত ভবনের দোতলায় ঘটনাস্থলে থাকা দৈনিক আজাদীর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সবুর শুভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা দায়িত্ব পালন করতে আসা বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফটো সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক উজ্জ্বল ধরকে ছবি তুলতে বাধা দেয় এবং ক্যামেরা কেড়ে নেয়।

পরবর্তীতে সাংবাদিক ও আইনজীবী নেতাদের সহায়তায় উজ্জ্বল ধর ক্যামেরা ফেরত পান।

তিনি বলেন, ক‌্যামেরা কেড়ে নেওয়া পর মোবাইল ফোন দিয়ে ভাংচুরের ঘটনার ছবি তোলার চেষ্টা করলে আইনজীবীরা সেটিও কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

খবর পেয়ে পুলিশ যায় সেখানে। আইনজীবী সমিতির নেতারাও পরিস্থিতি শান্ত করতে তৎপরতা চালান।

পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর সন্ধ‌্যায় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিমের সঙ্গে দেখা করতে যান বলে কোতয়ালি থানার এসআই মৃণাল কান্তি মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

সন্ধ‌্যার পর চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নেতাদের হস্তক্ষেপে আদালতে পুনরায় জামাল দম্পতির জামিন আবেদন করা হয়। তখন মহানগর হাকিম মাসুদ পারভেজের আদালত জামাল ও তার স্ত্রীকে জামিন দেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের জিম্মায় দুইজনকে জামিন দেয়া হয়।        

তিনি বলেন, “যে মামলায় দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা সন্দিগ্ধ আসামি। মামলার অভিযোগে দুজনের নাম নেই। মানবপাচারের যে কথা বলা হয়েছে, এতে তারা জড়িত নন।

“সে কারণে আইনজীবীরা এ ঘটনায় একটু আবেগী হয়ে বিক্ষোভ করেছিল। বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হয়েছে।”

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহেদ হোসেন বীরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জামাল হোসেন চট্টগ্রাম আদালতের একজন নিয়মিত আইনজীবী। মানবপাচারের ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

“আদালতে তাদের চালান দেওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে সাতদিনের রিমান্ডও চাওয়া হয়। অথচ মামলার এজাহারে তাদের নাম নেই।”

ভাংচুরের বিষয়ে তিনি বলেন, “আইনজীবীদের ভাংচুর করার কথা নয়। তারা আবেগী জায়গা থেকে বিক্ষোভের পর হয়ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।”