পাঠ্যবইয়ে ভুল নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন নাহিদ

চট্টগ্রামে এক শিক্ষক সমাবেশে প্রায় দুই ঘণ্টার বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরলেও পাঠ্যবইয়ে ভুল নিয়ে কোনো কথা বললেন না শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2017, 01:30 PM
Updated : 11 Jan 2017, 01:30 PM

সমাবেশে বক্তব্যের পর সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলেও তা এড়িয়ে গেছেন তিনি।

বুধবার সকালে নগরীর নাসিরাবাদে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে পাঁচ জেলার প্রায় ‍২০০ কলেজ এবং এক হাজার ২০০টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধানদের নিয়ে শিক্ষক সমাবেশে বক্তব্য দেন নাহিদ।

জঙ্গিবাদ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন মন্ত্রী। রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, মাছ রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

তবে স্কুলের পাঠ্যবইয়ে ভুল ও ‘সাম্প্রদায়িক উপাদান’ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা চললেও এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।

‘ভুলে ভরা’ পাঠ্যবই বাতিল চেয়ে মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় ৮৫ জন অধ্যাপক, লেখক, গবেষক, কবি, সাহিত্যিক ও গবেষণাকর্মী। পাঠ্যবইয়ে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িকতা ঢোকানোর অভিযোগ করে এর পরিণতি হিসেবে জঙ্গিবাদের উত্থানের বিষয়ে সতর্ক করেছেন তারা।

একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “আমার যা বলার বক্তব্যে বলেছি। আমি এখানে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিব না।”

পাঠ্যপুস্তকে ভুলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ বলেন, “আমি এ রকম (ভুল) আশা করি নাই। এখানে পরিপূর্ণ সকল বিষয়ে আলাপ করব না, সেটা সম্ভবও না। আপনারা (সাংবাদিক) প্রশ্ন না করলেই খুশি হব।

“অনেক ভুলক্রটি হয়েছে, সীমাবদ্ধতা আছে, ক্রটি থাকতেই পারে। শিক্ষক ঠিক করে দেবেন, যারা দায়ী তারা ঠিক করে দেবেন। … এগুলো না করে যদি ঠিক উল্টোটা করতে থাকি, তাহলে ছেলেমেয়েরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

বর্তমান সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে নানা কাজ করছে বলে জানান নুরুল ইসলাম নাহিদ।

তিনি বলেন, “আমরা ২১ মাদ্রাসাকে অনার্সের আওতায় এনেছি। যারা ইসলামের কথা বলত তারা মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য একটা ইটও দেয়নি তাদের শাসনামলে।

“বর্তমান সরকার আরও এক হাজার ৩০০ মাদ্রাসার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার সুযোগও বাড়িয়েছে।”

চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড আয়োজিত ‘শিক্ষার উন্নত পরিবেশ, জঙ্গিবাদমুক্ত শিক্ষাঙ্গন’ শিরোনামের ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।

সামাজিকভাবে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আচরণের বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

শিক্ষার্থীদের প্রতি জঙ্গিদের ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “যারা বেহেশতের লোভে শিক্ষার্থীদের জঙ্গি বানাচ্ছে তারা তো বুকে বোমা নিয়ে আত্মঘাতী হয় না। যারা আত্মঘাতী হচ্ছে তাদের লাশ পরিবারও গ্রহণ করছে না।”

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য ছিল সেটা অর্জনে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিরা নানাভাবে মাঠে আছে।

“যত বাধাই আসুক সরকার তার নির্ধারিত ভিশন-২০২১ পূরণ করবে।”

উন্নয়ন থামাতে বাংলাদেশে নানা খাতে কর্মরত বিদেশিদের উপর জঙ্গি হামলা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বিদেশিদের যাতায়াত আছে এমন জায়গায় হামলা চালাতে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জঙ্গিবাদে জড়ানো হচ্ছে।

“তাই আধুনিক ও ব্যয়বহুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করা হচ্ছিল।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গিদের সংখ্যা কমলেও তারা এখনও শেষ হয়ে যায়নি বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী।

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের যথার্থভাবে চেনা ও তাদের আস্থা অর্জনের উপর গুরুত্ব দেন তিনি।

“আপনি যদি আপনার শিক্ষার্থীকে নাই চেনেন, তাহলে সে কী করছে কীভাবে জানবেন? তাই যে পরিমাণ ছাত্রছাত্রীদের আপনি চিনবেন সে পরিমাণ শিক্ষার্থীদের আপনার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাবেন।”

শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলা, নাটক, পাঠাগার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও বিতর্ক আয়োজন বাড়াতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহেদা ইসলাম।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ) মো. সোহরাব হোসাইন, ভারপ্রাপ্ত সচিব (কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ) মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমিন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বক্তব্য দেন।