মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে জনসভায় বক্তব্যের সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হাততালি দিয়ে উঠলে তিনি বলেন, “হাততালি দিয়ে লাভ কী? তোয়ারা মারামারি গরিবা। টেন্ডার লইয়েরে একজনরে ফাঁসি দি দিবা (তোমরা মারামারি করবে। টেন্ডার নিয়ে একজনকে মেরে ফেলবে)। এই যে কাজকর্মগুলো। আমাদের সন্তান মারা যাবে, তা হবে না।”
দৃশ্যত ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মৃত্যুকে ইঙ্গিত করে মহিউদ্দিনের এই বক্তব্য। গত ২০ নভেম্বর ঘরের মধ্যে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। তার পরিবারের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্র নিয়ে দ্বন্দ্বে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ দিয়াজকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখে।
বিদেশে থাকায় মঙ্গলবারের জনসভায় উপস্থিত ছিলেন না মেয়র নাছির। এদিনই প্রথম দিয়াজের মৃত্যু ইঙ্গিত করে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য দিলেন মহিউদ্দিন।
ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের জঙ্গি দমনে প্রস্তুত হওয়ার পাশাপাশি পড়াশোনার পরামর্শ দিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, “মেধা অর্জন করুন, মেধার দরকার আছে। মেধা কী করেন? টেন্ডারবাজি করেন? কাউকে ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে আবার বৈধ করার চেষ্টা করেন, অনেক কিছু। তা মেনে নেব না।”
সমাবেশ চলাকালে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের স্লোগান ও হাততালিতে বিরক্ত হয়ে বক্তব্য না রেখেই সভা শেষ করতে চেয়েছিলেন বর্ষীয়ান এই আওয়ামী লীগ নেতা।
অনুষ্ঠানের দুই সঞ্চালক নগর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী ও প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক একাধিক বার স্লোগান বন্ধ করতে আহ্বান জানান।
মহিউদ্দিন বক্তব্য দিতে শুরু করলে এমইএস কলেজ ও সিটি কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তখনও স্লোগান দিচ্ছিল। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান তিনি।
মহিউদ্দিন বলেন, “স্লোগান-হাততালি বন্ধ থাকার কথা ছিল। স্লোগান দেবেন না। স্লোগান বন্ধ করুন। তাহলে সমাবেশে আসবেন না। সভা শেষ করে দিই তাহলে... ছাত্রদের উচ্ছৃঙ্খলতার জন্য কি.. আমি বক্তব্য না রেখে..
“তাহলে কি আলোচনা সভা বন্ধ করে দেব? এই আবার স্লোগান... আবার স্লোগান দিলে সভায় আসবেন না।”
জঙ্গি দমনে ৫ হাজার লাঠি
চট্টগ্রাম মহানগরীতে তৎপরতা চালানোর ক্ষেত্রে জঙ্গিদের হুঁশিয়ার করেছেন মহিউদ্দিন।
তিনি বলেন, “খুনিরা হুঙ্কার ছাড়ছে। মনে করেছে, কয়েকটা জঙ্গি দিয়ে দেশকে ধ্বংস করবেন। তা পারবেন না। আমাদের হিম্মত রাখতে হবে। মনে ভয়-ভীতি নেবেন না। আমরা তো আছিই।”
“লাঠি নিয়ে ওই খুনিদের মোকাবিলা করতে যাব। অসংখ্য লাঠি তৈরি করে রেখেছি। পাঁচ হাজার, লিখে রাখুন,” বলেন প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা।
“তাই ১০ জানুয়ারি ছিল আমাদের প্রকৃত বিজয়ের আনন্দের দিন। বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরে যা করে গেছেন বহু রাষ্ট্র নায়ক ৫০-৬০ বছরেও তা পারেননি।”
৫ জানুয়ারি শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে দলের নিষ্ক্রিয় নেতাদের সমালোচনা করেছিলেন মহিউদ্দিন, নাছির ও সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
মঙ্গলবার একই স্থানে সমাবেশে নগর কমিটির অধিকাংশ সহ-সভাপতি, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকলেও দুই সাংসদ এম এ লতিফ এবং আফসারুল আমীন অনুপস্থিত ছিলেন।