মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে

মিয়ানমারে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে কক্সবাজার হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার পর চট্টগ্রাম নগরীতে এসে আশ্রয় খুঁজছে রোহিঙ্গাদের ২২ জনের একটি দল।

চট্টগ্রাম ব‌্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2016, 06:52 PM
Updated : 11 Dec 2016, 07:03 PM

রোববার সন্ধ‌্যায় চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের পশ্চিম পাশের খোলা জায়গায় এই ২২ জনকে ঘিরে স্থানীয়দের ভিড় দেখা যায়।

স্থানীয় কয়েকজন কৌতূহলী হয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্যকেও আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

তারা জানান, মিয়ানমারের মংডু এলাকা থেকে পালিয়ে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার কুতুপালং হয়ে রোববার চট্টগ্রামে এসেছেন তারা।

পঞ্চাশোর্ধ্ব নাছিমা খাতুন মিয়ানমারের মংডু এলাকার হাতিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বলে জানান।

গ্রামে হামলার বর্ণনা দিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অস্ত্র নিয়ে আসা লোকজন পাড়া পাড়া ঘিরে ফেলে। পুরুষদের গুলি করে আর পিটিয়ে মারে। মেয়েদের নির্যাতন করে।

“৫০-৬০ করে পুরুষকে একসাথে ধরে নিয়ে যায়। আর মেরে গাঁতে (গর্তে) ফেলে দেয়।”

৮-১০ দিন আগে এমন হামলার পর নিজের ছেলে, ছেলের বৌ, নাতি, মেয়ে আর মেয়ের স্বামীকে নিয়ে পালিয়ে আসেন নাছিমা। পালিয়ে আসার পথে মেয়ে জুলেখাকে হারিয়ে ফেলেন বলে জানান এই নারী।

নাছিমা বলেন, নৌকায় সাগর পথে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসতে দালালকে মোট ৪০ হাজার টাকা (মিয়ানমারের মুদ্রায়) দিয়েছেন।

বাংলাদেশে ঢোকার পর কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে গিয়ে আশ্রয়ের খোঁজ করেন তারা।

নাছিমা বলেন, “সেখানে তো আমাদের কোনো ঘর নেই। এত মানুষ শুধু বসার জায়গা আছে। ঘুমানোর জায়গাও নেই। তাই এখানে চলে এসেছি।”

২২ জনের দলে পাঁচটি শিশু রয়েছে। আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ এলাকায় আশ্রয় নেওয়ার পর মুসল্লিরা সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছে।

মো. কাসেম (২৪) নামের মংডুর শিলখালী গ্রামের এক মাদ্রাসা ছাত্র এসেছেন পরিবারের নারী-শিশুসহ মোট সাতজনকে নিয়ে।

কাসেম জানান, ৩০ হাজার টাকা (মিয়ানমারের মুদ্রা) দালালকে দিয়ে তারা নাফ নদী হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন।

কাসেম জানান, তার বড় ভাই আলী জহরকে ১০ দিন আগে মিয়ানমারে অস্ত্রধারীরা মেরে ফেলার পর তারা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসেন।

কাসেমের ভাবী আনোয়ারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লোকজন এসে আমার স্বামীকে সামনে থেকে গুলি করে মেরেছে। এরপরই আমরা পালিয়ে পাশের গ্রামে আশ্রয় নেই।”

কাসেম বলেন, “কুতুপালং ছিলাম। কিন্তু সেখানে লোকজন বলল ঘর করতে টাকা লাগবে। আমাদের কাছে তো বাংলাদেশের কোনো টাকা নেই। সেখানকার (কুতুপালং) লোকজন বলল চট্টগ্রাম গেলে টাকা পাবে। তাই এখানে এসেছি। কিছু টাকা পেলে আবার কুতুপালং চলে যাব।”

 কুতুপালং থেকে স্থানীয় দুই যুবকের সহযোগিতায় সড়ক পথে চট্টগ্রামে এলেও এই নগরীতে পরিচিত কেউ নেই এসব রোহিঙ্গার।

এদের বিষয়ে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুর আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টহল দলকে সেখানে পাঠিয়েছি। পরে বিস্তারিত জানাতে পারব।”

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ‌্যে তিন মাসে আগে সেনা অভিযান শুরুর পর বহু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিতে বাংলাদেশ সীমান্তে ভিড় করলেও প্রতিদিনই বিজিবি তাদের ফেরত পাঠাচ্ছে। এর মধ্যেও নিরাপত্তার ফাঁক গলে অনেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন।

গত শতকের ৮০ এর দশকের শেষ ভাগে মিয়ানমারে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ‌্যে রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে আশ্রয় পায়। এরপর কয়েক দফায় আরও রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ে বাংলাদেশে।

শরণার্থী হিসেবে থাকা রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া এবং জালিয়াতি করে বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের বিষয়টিতে জোর দিয়ে ২০১২ সালে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আর ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এবারও একই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের জন‌্য সীমান্ত খুলে না দিলেও যারা এসে পড়েছে, তাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার কথা ইতোমধ‌্যে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।