এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুট এবং প্রিজন ভ্যান থেকে সংগঠনের নেতাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার ছক কষেছিলেন বলেও র্যাব কর্মকর্তাদের দাবি।
বৃহস্পতিবার সকালে বন্দর নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তর কাট্টলির একটি বাড়িতে ওই অভিযান চালায় র্যাব।
বছরের মাঝামাঝিতে গুলশানে জঙ্গি হামলার পর র্যাব-পুলিশের এই ধরনের কয়েকটি অভিযান নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে।
চট্টগ্রামে অভিযানে আটক একজনকেও নয় মাস আগে নীলফামারীতে তার বাড়ি থেকে ধরে নেওয়া হয়েছিল বলে তার পরিবার দাবি করেছেন।
তবে আগের সব বারের মতোই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন চট্টগ্রামের অভিযান পরিচালনাকারী র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা উদ্দিন।
অভিযান শেষে র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে, ঢাকা থেকে গিয়ে তাতে উপস্থিত হন বাহিনীর মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, সকালে প্রথমে এ কে খান গেইট এলাকা থেকে অস্ত্রসহ তাজুল ও নাজিম নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে উত্তর কাট্টলির এই বাড়ির সন্ধান পান।
হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার পর পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে অন্তত ৩০ জন নিহত হন।
তখন জেএমবি, নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের নাম আলোচিত হলেও আসেনি কারাবন্দি মুফতি আব্দুল হান্নানের গড়ে তোলা হুজির নাম।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, “অন্য জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের গ্রেপ্তারের কারণে হুজি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল।
“এই পরিস্থিতিতে নিজেদের সংগঠিত করে নাশকতার মাধ্যমে সংগঠনের সদস্যদের উজ্জীবিত করাই ছিল হুজির উদ্দেশ্য।”
গ্রেপ্তার পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে মুফতি মাহমুদ সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা কুষ্টিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করতে আঞ্চলিক ও মাঠ পর্যায়ে বৈঠক করেছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন শপিংমলেও হামলার পরিকল্পনা ছিল সংগঠনটির।
“এর অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুট এবং প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে নিজেদের নেতাদের উদ্ধারের পরিকল্পনা করেছিল।”
এদিকে সন্ধ্যায় র্যাব-৭ এর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্রেপ্তার পাঁচজনের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে।
র্যাব বলছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে মাওলানা তাজুল ইসলাম হুজির ঢাকা অঞ্চলের সম্বন্বয়কের দায়িত্বে আছেন। ফরিদপুরের বাসিন্দা তাজুল একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি ২০০৫ সাল থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত। সংগঠনের সদস্যদের অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দেন তিনি।
যশোরের বাসিন্দা নাজিম পেশায় ব্যবসায়ী। কারাগারে আটক মুফতি হান্নান ও মুফতি রউফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী নাজিম ১৯৯৮ সালে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ওই দুজনের সঙ্গে চট্টগ্রাম এসেছিলেন।
উচ্চশিক্ষিত নাজিম তথ্য প্রযুক্তিতে পারদর্শী। তিনি ‘আমাদের মারকাজ’ নামে একটি গ্রুপের পরিচালন ও সদস্য সংগ্রহ শাখার চালাতেন।
হাফেজ মো. আবু যর গিফারী হুজির কুষ্টিয়া অঞ্চলের সমন্বয়ক। চট্টগ্রামের গহীন অরণ্যে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। হুজির ‘অপারেশন’ পরিচালনার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তার।
মো. নূরে আলম ইসলাম নীলফামারীর বাসিন্দা। তিনি মুফতি মাইনুল ইসলাম পরিচালিত ‘৩১৩ বদরের সৈনিক’ নামের জঙ্গি গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য বলে র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
তবে নীলফামারী সরকারি কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নূর আলমের স্বজনদের অভিযোগ, নয় মাস আগে ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয়ে তাকে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
তার সন্ধান চেয়ে নীলফামারী সদর থানায় জিডি করেছিল পরিবার। তবে পুলিশ তার কোনো খোঁজ বের করতে পারেনি।
গ্রেপ্তার অন্যজন শেখ ইবতিসাম আহমেদ ওরফে সামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র বলে র্যাব জানিয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সামি। এরপর জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।
গ্রেপ্তারদের কেউ চট্টগ্রামের বাসিন্দা নন জানিয়ে মুফতি মাহমুদ বলেন, “তাদের সাথে চট্টগ্রামের কেউ জড়িত আছে কি না সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”