চট্টগ্রামের ৮ গুণীজনকে প্রেস ক্লাবের সংবর্ধনা

মুক্তিযুদ্ধ, মানবসেবা ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য চট্টগ্রামের আট গুণীজনকে সংবর্ধনা দিয়েছে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2016, 04:43 PM
Updated : 24 Oct 2016, 05:01 PM

সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অবহেলিত ও উপেক্ষিত থেকে যায় বলে অভিযোগও আসে।

অনুষ্ঠানে গুণীজন হিসেবে ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও কলামনিস্ট মিঞা আবু মোহাম্মদ ফারুকী (মরণোত্তর), চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালের ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন এবং বাঁশি শিল্পী ওস্তাদ ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলামকে সংবর্ধিত করা হয়।

এছাড়া সাংবাদিকতায় পাঁচজনকে সংবর্ধিত করা হয়।

এরা হলেন, আবদুল্লাহ আল ছগীর (মরণোত্তর), নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, অঞ্জন কুমার সেন, এস এম আতিকুর রহমান ও নূর সুলতান কুতুবী।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী বলেন, জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সময় যাদের সংবর্ধিত করা হয় তাদের মধ্যে চট্টগ্রামের গুণীজন ও সাংবাদিকদের ঠাঁই হয় না।

“তাই ১৯৯২ সাল থেকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সংবর্ধিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।”

এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদকের সাথে আলোচনায় চট্টগ্রামকে কেন্দ্রের ‘অবহেলার’ খেদের কথা জানিয়েছিলেন শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দিন চৌধুরীও অবহেলার অভিযোগ তোলেন।

তিনি বলেন, বৃটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, সংবাদপত্র প্রকাশ- সব কিছুতেই চট্টগ্রাম এগিয়ে ছিল।

“কিন্তু চট্টগ্রাম আজ অবহেলিত, উপেক্ষিত ও বঞ্চিত। কর্মাশিয়াল ক্যাপিটাল (বাণিজ্যিক রাজধানী) হয়েও চট্টগ্রাম কিছুই পায়নি। যেসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এখানে ছিল সেগুলোও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।”

একাত্তরে নির্যাতনের শিকার মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, সবকিছু এক কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। এক কেন্দ্রিক রাষ্ট্র যদি হয় সেটা ভালো হয় না।

সাংবাদিকতায়ও ‘বৈষম্য’ আছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, চার দশক সাংবাদিকতা করে মনে হচ্ছে বৈষম্য রয়ে গেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাব দুঃখজনকভাবে ‘ঢাকা প্রেস ক্লাব’ হয়ে গেল।

“সেখানে আমরা (চট্টগ্রাম), বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট- কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। উন্নত প্রশিক্ষণ, দূতাবাসে প্রেস মিনিস্টার হওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়া (দুয়েকটি ব্যতিক্রম বাদে)- সব ঢাকা থেকে। এত বৈষম্য কেন?”

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, “আমরা গুণীজনদের অবদানের যে স্বীকৃতি দিই সেটা রাজধানী কেন্দ্রিক। রাজধানীতে যারা বসবাস করেন তারা সেটা লক্ষ্য করেন না।

“আবার আমরা রাজধানীতে যারা বসবাস করি তারা কেউ রাজধানীর নই। ঢাকার আদি বাসিন্দারা কোথায়? সমাজের এসব বিষয় লক্ষ্য করলেও কেউ সমাধানে এগিয়ে আসি না।”

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, আমরা যদি এসব বিষয়ে দৃষ্টিপাত না করি, সেটা ঠিক না। বঞ্চনা, অবজ্ঞা, হেয় প্রতিপন্নতার জন্যই বিভিন্ন সময় বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন হয়েছে।

“আপনাদের (চট্টগ্রামবাসীর) যে অহঙ্কার ছিল- বন্দর বন্ধ করে দেবেন। সেটাও ক্রমান্বয়ে শেষ হয়ে আসছে। একটা বন্দরের ওপর দেশ নির্ভরশীল থাকতে পারে না। আরও বন্দর হচ্ছে।”

নিজের শিক্ষাজীবনে চট্টগ্রাম সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে আনোয়ার হোসেন বলেন, কর্ণফুলীর তীরে বন্দর সচল রাখতে হলে কর্ণফুলীকে সুরক্ষা করতে হবে। পলি জমে কর্ণফুলী এখন খালের মত দেখায়।

“আপনাদের হালদা নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হয়। এখন যারা নেতৃত্বে আসছেন তারা তো ‘গ্লোবাল’। আগে যারা নেতৃত্বে আসতেন তারা মানুষের কথা শুনতেন। মানুষের সাথে মেলামেশা-চেনাজানা দরকার। তাহলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিভাগীয় প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রেস ক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার।

সংবর্ধিতদের জীবনী পাঠ করেন প্রেস ক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কাজী আবুল মনসুর, কার্যকরী সদস্য ফারুক ইকবাল ও প্রকাশনা সম্পাদক আলমগীর সবুজ।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের ৩০ জন সন্তানকে মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে সংবর্ধিত করা হয়।