শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ‘ছেলে হত্যার ন্যায় বিচার ও প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে’ সংবাদ সম্মেলন করে অঞ্জন ধরের পরিবারের সদস্যরা।
এই সংবাদ সম্মেলন চলাকালে বাইরে একই দাবিতে প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করে চট্টগ্রাম মহানগরী স্বর্ণ শিল্প ঐক্য পরিষদ।
অঞ্জনের পরিবারের দাবি, স্ত্রী প্রিয়াংকা ধর পরকীয়ার জেরে এবং অঞ্জনের সম্পত্তি কুক্ষিগত করতে ‘সহযোগীদের’ নিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
তবে প্রিয়াংকার দাবি, এ অভিযোগ মিথ্যা। স্বামীর খুনের বিচার চান বলেই আপন ভাই বাবলু ধরের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেছেন।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অঞ্জন ধরের বোন বীণা ধর বলেন, প্রিয়াংকার পরকীয়ায় লিপ্ত থাকার বিষয়ে আমার মা সমিতা রাণী ধর, প্রিয়াংকার সৎ মা ও কাকী এবং ভাই বাবলু ধর জানত।
“হত্যাকাণ্ডে শুধু বাবলু ধরকে আসামি করা নিছক নাটক। হত্যাকাণ্ডে প্রিয়াংকা ধরসহ আরো একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”
গত সোমবার সকালে নগরীর কোতোয়ালি থানায় গিয়ে বাবলু ধর তার ভগ্নিপতি অঞ্জন ধরকে খুন করার কথা পুলিশকে জানায়।
বাবলু পুলিশকে বলেছিলেন, বিভিন্ন সময় তার বোনকে নির্যাতন করায় রোববার সকালে অঞ্জনকে খুন করেন তিনি।
এরপর বাবলুকে সাথে নিয়ে নগরীর টেরিবাজারের আফিনের গলি পূজার মাঠের পার্শ্ববর্তী ভবনের পাঁচতলার ভাড়ার ফ্ল্যাট থেকে অঞ্জনের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
দুই বছর আগে ভাড়া নেওয়া টেরিবাজার এলাকার বাসায় অঞ্জনের পরিবারের সাথেই থাকতেন তার মা সমিতা রাণী ধর। দুর্গা পূজার আগে বাঁশখালী উপজেলার দক্ষিণ জলদি বণিক পাড়ায় গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি।
সমিতা রাণী বলেন, আমার জামাতা আশীষ কুমার দে সোমবার রাতে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে একটি এজাহার দেয়। কিন্তু পুলিশ তা গ্রহণ না করে প্রিয়াংকার করা মামলা গ্রহণ করে।
সোমবার রাতে প্রিয়াংকা ধর বাদী হয়ে স্বামী খুনের ঘটনায় একটি মামলা করেন। এতে ভাই বাবলু ধরকেই একমাত্র আসামি করেন তিনি।
সমিতা রাণী বলেন, বাবলুর একার পক্ষে অঞ্জনকে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দি করা সম্ভব নয়। অথচ বাবলু থানায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসার চাবি জমা দেওয়ার পরও এগুলো অন্যতম সন্দেহভাজন প্রিয়াংকা ধরকে দিয়ে দেওয়া হয়।
মৃত অঞ্জনের যাবতীয় সম্পত্তি কুক্ষিগত করতেই প্রিয়াংকা পরিকল্পিতভাবে তার সহযোগীদের নিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সমিতা রাণী।
নিহত অঞ্জনের ভগ্নিপতি আশীষ কুমার দে’র করা এজাহারে প্রিয়াংকা ধর, বাবলু ধর, জুয়েল ধর এবং রানা ধর নামের চারজনকে আসামি করা হয়।
অঞ্জনের কাকাত ভাই জলসন ধর বলেন, জুয়েল ধর পাথরঘাটার বাসিন্দা। তার সাথেই প্রিয়াংকার পরকীয়া ছিল।
“আমরা মামলার কার্যক্রম সিআইডির কাছে হস্তান্তর এবং প্রকৃত খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
অঞ্জনের পরিবারের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিয়াংকা রাণী ধর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বলেন, স্বামীর সম্পত্তি তো এমনিতেই আমি এবং সন্তানরা পাব। কেন আমি স্বামীকে খুন করতে যাব? বিচার চাই বলেই ভাইয়ের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করেছি।
“তাদের লোকজন গিয়ে গতরাতে আমাকে টেরিবাজারের বাসা থেকে চলে যেতে বলে। এখন আমি পথে পথে ঘুরছি।”
কোতোয়ালি থানার ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, “বাবলু ধর খুন করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অন্য কারো বিষয়ে সে বলেনি।
“তদন্তে এখনো পর্যন্ত অন্য কারো জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। যদি কারো নাম আসে তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে। পরিবার দাবি করতেই পারে।”
ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, বাসার চাবি প্রিয়াংকাকে দেওয়া হলেও দোকানের চাবি স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির কাছে দেওয়া হয়েছে।
“বন্ধকী স্বর্ণ বাবলুই তার কাকীর বাসায় রেখেছিল বলে জানায়। অঞ্জনের দোকানের কর্মচারী হিসেবে ওইসব স্বর্ণ তার কাছে ছিল। সেগুলো স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের মাধ্যমে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বাঁশখালীর সাবেক পৌর মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনী এবং জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বক্তব্য রাখেন।