তবে চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার ওই সাংবাদিক ‘চাঁদা চেয়েছিল’ দাবি করে সাংসদ মোস্তাফিজুরের ভাষ্য, ‘চাঁদা দাবি’ করায় তাকে বকা দিয়েছেন, কোনো প্রকার হুমকি দেননি।
অভিযোগকারী সাংবাদিক রাহুল দাশ নয়নের দাবি, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিষয়ে বাঁশখালীর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) কর্মকর্তার কার্যালয়ে তথ্য চেয়ে সাংসদের রোষানলে পড়েন তিনি।
মঙ্গলবার সকালে টেলিফোনে হুমকি পাওয়ার অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেছেন রাহুল দাশ।
এদিকে এ ঘটনায় সাংবাদিক রাহুলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে শুক্রবার সাংসদকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)।
দৈনিক পূর্বদেশের স্টাফ রিপোর্টার রাহুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৫ জানুয়ারি সরকারের তিন বছর পূর্তিতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে পত্রিকায় বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়।
“বার্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত অ্যাসাইনমেন্ট পেয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর বাঁশখালীর পিআইও মাসুদুর রহমানের কার্যালয়ে তথ্য অধিকার আইন অনুসারে নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন করি।”
তিনি বলেন, “সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আমাকে নির্ধারিত সময়ে তথ্য সরবরাহ না করে সাংসদকে জানান। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে নিজের মোবাইল থেকে সাংসদ আমাকে ফোন করেন।
“তিনি আমাকে ফোনে অকথ্য ভাষায় গালিগালজ করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। এরপর বৃহস্পতিবার ঘটনার প্রতিকার ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত আবেদন করেছি। ”
এবিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) একেএম এমরান ভুঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যে কোনো নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পুলিশের। তিনি (সাংবাদিক) পুলিশি নিরাপত্তা চাইলে তা দেওয়া হবে।
হুমকির বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদনের তথ্য সংগ্রহ করছেন বললেও অভিযোগকারী সাংবাদিক কোনো মামলা করেননি জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা এমরান বলেন, “মামলা হলেই কেবল আদালতের নির্দেশ অনুসারে আমরা তদন্ত করতে পারব।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পিআইও অফিসের কর্মকর্তা আমাকে ফোনে জানায় সে (রাহুল দাশ) টাকা দাবি করেছিল।
তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, “দেশইত্ত্যা পোয়া হিসেবে তাকে আমি শোর-সার করি (স্থানীয় ছেলে হিসেবে তাকে আমি বকা দিয়েছি)।”
সাংবাদিক রাহুল দাশের বাড়ি সাংসদের নির্বাচনী এলাকা বাঁশখালী উপজেলায়।
এঘটনায় নিন্দা জানিয়ে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়েছে।
শুক্রবার সিইউজে’র প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অলোকময় তলাপাত্র স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সাংবাদিক রাহুল দাশকে ‘অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালাগাল এবং প্রাণনাশের হুমকি’ দেওয়ায় সাংসদ মোস্তাফিজুরকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে আহ্বান জানানো হয়।
পাশাপাশি ওই সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয় সিইউজে’র বিবৃতিতে।
সাংসদ নির্ধারিত সময়েরে মধ্যে ক্ষমা না চাইলে সিইউজে’র আয়োজনে রোববার দুপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
এর আগে নিজের ‘ফর্দ অনুযায়ী’ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ‘নিয়োগ না দেওয়ায়’ ১ জুন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠে।
ওই ঘটনার পর বাঁশখালীর নির্বাচন স্থগিত করে সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা করে নির্বাচন কমিশন। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বাঁশখালীর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন সাংসদ মোস্তাফিজুর।
বাঁশখালীর গণ্ডামারায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের আন্দোলনে গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার চারদিন পরও নিজ এলাকায় না গিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন এই সংসদ সদস্য।