প্রাইম মুভার-ট্রেইলর মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট স্থগিত

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর ধর্মঘট ৪ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছে প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক ঐক‌্য পরিষদ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2016, 07:01 AM
Updated : 30 Sept 2016, 11:16 AM

শুক্রবার তাদের এই ঘোষণার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহনের জটিলতার আপাত অবসান ঘটল।

নির্ধারিত পরিমাণের অতিরিক্ত ওজন বহনে জরিমানার নিয়ম বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে গত সোমবার প্রাইম মুভার-ট্রেইলার মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘটে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার জট সৃষ্টি হয়েছিল।

তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন রোববার থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল।

এই পরিস্থিতিতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচলের লক্ষ্যে ধর্মঘটীদের সঙ্গে শুক্রবার সকালে নিজ বাসভবনে বৈঠকে বসেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার চৌধুরী।  

প্রাইম মুভারগুলোতে সাড়ে ৪২ টন পর্যন্ত ওজন বহনের অনুমতি মেলার আশ্বাসে ধর্মঘট স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম মাওলা।

মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ির অতিরিক্ত চাপ কমাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ গত ১৬ অগাস্ট গাড়ি ভেদে পণ্য পরিবহনের ওজন নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে ১৪ চাকার প্রাইম মুভারকে সর্বোচ্চ ৩৩ টন পর্যন্ত মালামাল বহনের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।

প্রাইম মুভার-ট্রেইলার মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, আকস্মিক এই সিদ্ধান্তের কারণে দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতুতে তাদের যান আটকে জরিমানা করা হচ্ছিল। সেখানে তাদের মারধরও করা হয়।

তারা বলছেন, কন্টেইনারের ওজনের বিষয়ে তাদের কিছু করার না থাকলেও প্রাইম মুভারে ৩৩ টনের পর প্রতি টনের জন্য তাদের দুই হাজার টাকা করে জরিমানা গুণতে হচ্ছে।

পুলিশ কমিশনার সাড়ে ৪২ টন পর্যন্ত ওজন বহনের অনুমতি পাওয়া ছাড়াও তার চেয়ে বেশি ওজন বহনের জরিমানা কন্টেনার মালিকদের কাছ থেকে আদায়ের ব‌্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে গোলাম মাওলা জানান।

চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার-ট্রেইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ৪ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। সেই পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।”

সিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, “একটি কন্টেইনার আন্তর্জাতিকভাবে কত ওজন নিয়ে কীভাবে আসে এটি নির্ধারিত। এ বিষয়টি খেয়াল রেখে আইনটি যেন যথাযথভাবে হয় সেজন্য আগামী ৪ তারিখের মিটিং।

“আশা করি, সকল কিছু বিশ্লেষণ করে এর একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যাতে ভবিষ্যতে এ সমস্যা আর না হয়।”

বন্দরে কন্টেইনার জট

এই ধর্মঘটের ফলে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ৪০ হাজার ২৫৯টি কনটেইনার জমে গিয়েছিল।

চট্টগ্রাম বন্দরে মোট কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ৩৬ হাজার ৩৫৭ টিইইউস (টোয়েন্টি ফুট ইকুইভেলেন্ট ইউনিট), ফলে অতিরিক্ত কন্টেইনার নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষকে।

এই পরিস্থিতি উদ্বেগ জানিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক করতে ধর্মঘট অবসানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

ধর্মঘট অবসানে বৃহস্পতিবার দুপুরে ও রাতে দুই দফা মুভার-ট্রেইলর মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক শামসুল আরেফীন।

শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন বলেন, “বৈঠক থেকে পুলিশ কমিশনার মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এসময় তিনি ৩৩ টন থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৪২ টন ওজনের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।”

তিনি জানান, আগে ৩৩ টনের পরে প্রতি টনে দুই হাজার টাকা এবং স্তর ভেদে মোট ১২ হাজার টাকা জরিমানার নিয়ম ছিল। এখন সাড়ে ৪২ টনের ওপরে যত পরিমাণ হয় তার জন্য মোট দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।

হুমায়ুন বলেন, “আগে মহাসড়কে প্রত্যেকটি স্কেলে ওজন মাপা হলেও এখন যে কোনো একটি স্কেলে ওজন মাপার কাগজ অন্য স্কেলে দেখানোর পর সেখানে কোনো ওজন মাপা হবে না বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে আমাদের।”

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ওজনের অন্যতম দাবিসহ অন্য ছয় দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান মালিক-শ্রমিক নেতারা।