মিয়ানমারমুখী রেল প্রকল্পের দরপত্র ‘এ মাসেই’

গতি পাচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের গুনধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কাজ।

মিন্টু চৌধুরী, চট্টগ্রাম ব‌্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2016, 03:27 PM
Updated : 25 Sept 2016, 03:27 PM

চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই রেললাইন ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জানালেন রেল কর্মকর্তারা।

ছয় মাসের মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করতে পারলে আগামী বছরের এপ্রিল-মে নাগাদ নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন তারা।

এই প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩১ কিলোমিটার (কিলোমিটার) এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের কাছে গুনধুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭৫২ কিলোমিটার মিলিয়ে ১২৯ দশমিক ৫৮৩ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন এবং অবকাঠামো তৈরি করা হবে।

প্রথম দফায় চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন ও অবকাঠামো নির্মাণ হবে।

এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ‌্যে ১৩ হাজার কোটি টাকা দেবে এশীয় উন্নয়ন ব‌্যাংক-এডিবি।

চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মফিজুর রহমান রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে রেলপথ নির্মাণের জন্য টেন্ডার এ মাসের মধ্যেই আহ্বান করা হবে।

“দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ হতে ছয় মাসের মতো সময় লাগতে পরে। সব ঠিকঠাক এগুলে আগামী বছরের এপ্রিল বা মে মাসে রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে।”

তিনি বলেন, প্রথম দফায় চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। পরে কক্সবাজারের রামু থেকে গুনধুম পর্যন্ত রেললাইন ও অবকাঠামো নির্মাণ হবে। 

রেল কর্মকর্তারা জানান, পুরো প্রকল্প শেষ করতে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় রাখা হলেও সব ঠিকঠাক মতো চললে ২০১৮ সালের মধ্যে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজ শেষ করা যাবে। 

চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন ব্রিটিশ আমল থেকে থাকলেও কক্সবাজার পর্যন্ত লাইন নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। 

এডিবির অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ‘টেকনিক্যাল অ্যাসিস্টেন্স ফর সাব-রিজিওনাল রেল ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি’ শীর্ষক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও শেষ হয়েছে।

আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি হবে বলে আশা করছেন রেল কর্মকর্তারা।

ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সঙ্গে সংযোগ, পর্যটক, সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ের আওতায় আনতে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে গুনধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৮ সালে পূর্ব বাংলা রেলওয়ের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের দক্ষিণ অংশ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য প্রথমবার সমীক্ষা হয়েছিল। পরে ১৯৭১ সালে জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান লাইনটির ট্রাফিক সম্ভাবনার সমীক্ষা চালায়।

১৯৭৬-৭৭ সালে পুনরায় প্রতিষ্ঠানটি তথ্য সংগ্রহরে কাজ করলেও পরে তা আটকে যায়। ১৯৯২ সালের এপ্রিলে এটি ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের রুট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ১৯৯৫ সালে মিটারগেজ রেললাইন নির্মাণের লক্ষ্যে আরেকটি সমীক্ষা চালানো হয়।

২০১০ সালে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮৫২ কোটি টাকা। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম বিলম্ব হয়।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে একনেক সভায় দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে গুনধুম পর্যন্ত লাইনকে মিটারগেজের বদলে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এ বছরের এপ্রিলে একনেক সভায় নতুন করে এ প্রকল্পের ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করে ‘ফাস্টট্রেক প্রকল্প’ হিসেবে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

পূর্ব রেলের কর্মকর্তারা জানান, অর্থের সংস্থান না হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে এ প্রকল্পের কাজ পেছালেও এবারে আর সে সুযোগ নেই। প্রথম দফায় কক্সবাজার পর্যন্ত লাইন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ হবে।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ প্রকল্পের অধীনে রেল লাইনের পাশাপাশি অবকাঠামোর অংশ হিসেবে ৫২টি মেজর ব্রিজ, ১৯০টি মাইনর ব্রিজ ও কালভার্ট, ১১৮টি লেবেল ক্রসিং, দুটি আন্ডার পাস, হাতি চলাচলের জন্য ওভার পাসসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় বেশ কয়েকটি নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হবে।