চট্টগ্রামে বীরকন্যা প্রীতিলতার আত্মাহুতি দিবস পালিত

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৮৪তম আত্মাহুতি দিবসে তার স্মৃতি বিজড়িত চট্টগ্রামের ‘ইউরোপিয়ান ক্লাবকে’ প্রীতিলতা স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণার দাবি উঠেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2016, 01:38 PM
Updated : 24 Sept 2016, 01:38 PM

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মৃতি বিজড়িত ‘ইউরোপিয়ান ক্লাবকে’ প্রীতিলতা স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।

শনিবার প্রীতিলতার ৮৪তম আত্মাহুতি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে এ দাবি জানানো হয়।

দিনব্যাপী নানা আয়োজনে অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এই অগ্রপথিককে স্মরণ করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এবং বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র।

এছাড়া শনিবার সকালে বীরকন্যার জন্মস্থান চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাটে প্রীতিলতার ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।

সকাল ৮টায় নগরীর পাহাড়তলিতে প্রীতলতা ভাস্কর্য্য চত্বরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় কয়েকটি সংগঠন।

এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নগর সভাপতি আল কাদেরী জয় বলেন, “বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী শোষণ রুখে দিতে মাস্টারদা-প্রীতলতা জীবন উৎসর্গ করেছেন। আজ ইংরেজ নেই তবু সমাজে অন্যায়, শোষণ-বঞ্চনা কমেনি।

“অবিলম্বে পাঠ্যপুস্তকে অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের জীবনগাঁথা অর্ন্তভুক্ত করা এবং সেই ইউরোপিয়ান ক্লাবকে (বর্তমানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একটি অফিস) প্রীতলতা স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চিকিৎসক আসিফ খান, বাসদ নেতা নুরুল হুদা নিপু, আকরাম হোসেন, হেফাজ চৌধুরী, সাদিয়া লাকী, নাজিম উদ্দিন বাপ্পি, আহমেদ কায়সার ও পার্থ প্রতীম নন্দী।

এদিকে সকাল ১০টায় পাহাড়তলিতে প্রীতলতার ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে সম্মান জানায় বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলা শাখা।

সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে কেন্দ্রের জেলা শাখার সভাপতি পপী চাকমা বলেন, প্রীতিলতা প্রমাণ করেছিলেন সংগ্রাম যত কঠিনই হোক স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে নারীরাও অংশ নিতে পারে।

“ইউরোপিয়ান ক্লাবকে জাদুঘর হিসেবে এবং বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত সব স্থান সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।”

সভায় অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদাউস পপি এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক পূরবী চক্রবর্ত্তী বক্তব্য রাখেন।

১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের ধলঘাটে জন্মগ্রহণ করেন প্রীতিলতা। বাবা সেসময়ের মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানি জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার ও মা প্রতিভা দেবী। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে প্রীতিলতা ছিলেন দ্বিতীয়।

নগরীর আসকার দীঘির উত্তর-পশ্চিম পাড়ের একটি দোতলা বাড়িতে থাকত ওয়াদ্দেদার পরিবার।

১৯২৮ সালে চট্টগ্রামের ড. খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় মেট্রিক, ১৯৩০ সালে ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে আইএ এবং কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে ১৯৩২ সালে ডিসটিংশানসহ বিএ পাস করেন প্রীতিলতা।

তবে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ততার কারণে তার ফল স্থগিত করা হয়। ২০১২ সালের ২২ মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রীতিলতাকে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা ও চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের কান্ডারি মাস্টারদা সূর্যসেনের নির্দেশে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সেসময়ের ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে ১৫ জনের বিপ্লবী দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রীতিলতা।

পাহাড়তলিতে তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাবের একটি সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’।

১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ১১টায় প্রীতিলতার নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ক্লাবে আক্রমণ করা হয়। বিপ্লবীদের আক্রমণে একজন বৃটিশ নারী নিহত হয়। চারজন বৃটিশ পুরুষ ও সাতজন নারী আহত হয়। ইংরেজ সৈন্যের গুলিতে প্রীতিলতার শরীরের বাঁ-পাশে আঘাত পান।

ইউরোপিয়ান ক্লাবের ১০০ গজ দূরেই পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহুতি দেন প্রীতিলতা।

তার মরদেহ তল্লাশি চালিয়ে বিপ্লবী লিফলেট, অপারেশন পরিকল্পনা, রিভলবারের গুলি, বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ছবি এবং একটি হুইসেল পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তে জানা যায়- গুলি নয়, সায়ানাইডই ছিল মৃত্যুর কারণ।

দেশের জন্য আত্মদানের কথা মৃত্যুর একদিন আগে ২৩ সেপ্টেম্বর নিজ হাতে লিখেছিলেন প্রীতিলতা। সেই চিঠিও পরে উদ্ধার করে আদালতে উপস্থাপন করা হয়।