শনিবার সকালে পূর্ব খৈয়াছড়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে হাইওয়ে পুলিশের জোরারগঞ্জ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফরিদ উদ্দিন জানান।
নিহতরা হলেন- চট্টগ্রামের কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) মহাব্যবস্থাপক (এমটিএস) প্রকৌশলী সৈয়দ আহমদ (৫০), কেপিএমের অবসরপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মো. সোহরাওয়ার্দী (৬২), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাওকির তাজাম্মুল সুস্মিত (২১), শাহিদা আক্তার (২৪) ও বাসচালকের সহকারী মো. আলী।
পুলিশ কর্মকর্তা ফরিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহনের বাসটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ায় রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে সেটি সারানো হচ্ছিল।
“এসময় চট্টগ্রামগামী একটি কভার্ড ভ্যান বাসটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই পাঁচজন মারা যান।”
ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতায় থাকা চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বাসটি রাস্তার পাশে রেখে মেরামতের সময় কয়েকজন যাত্রী নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
“এসময় পেছন থেকে আসা কভার্ড ভ্যানটি দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিকে ধাক্কা দেওয়ার সঙ্গে লোকজনকেও চাপা দেয়।”
কভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় বাসটি রাস্তার পাশে গাছের সাথে কাৎ হয়ে পড়ে বলে জানান তিনি।
পরিদর্শক ফরিদ জানান, কেপিএম’র দুই কর্মকর্তার লাশ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি ও আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
চুয়েট শিক্ষার্থী তাজাম্মুল এবং শাহিদা লাশ নিতে তাদের পরিবারকে খবর দেয় পুলিশ।
পরীক্ষা দেওয়া হলো না সুস্মিতের
দিনাজপুরে দাদার বাড়িতে ঈদ করে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সুস্মিত।
রোববার থেকে তার অসমাপ্ত সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা আবার শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই পরীক্ষায় বসার আগেই পৃথিবী ছাড়লেন সুস্মিত।
গাজীপুরে কর্মরত পুলিশ সদস্য আবদুস সাত্তারের বড় ছেলে সুস্মিত। তারা থাকেন ঢাকার মিরপুর ৭ নম্বর সেকশনে।
শুক্রবার রাতের চট্টগ্রামের বাসে ছেলেকে তুলে দিয়েছিলেন সাত্তার। পরদিন দুপুরে সেই সন্তানের লাশ নিতে চট্টগ্রাম আসতে হল তাকে।
সাত্তার বলেন, “ছেলেকে হারিয়েছি, কিছু বলার নেই। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।”
চুয়েটের ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. মশিউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদের আগে যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের চারটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। রোববার পঞ্চম পরীক্ষাটি হওয়ার কথা ছিল।
নিহত সৈয়দ আহমদের বাড়ি নাটোরের কাঁঠালবাড়িয়া এলাকায়। তবে তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে থাকতেন।
দাপ্তরিক কাজে ঢাকায় গিয়ে কর্মস্থলে ফিরছিলেন কেপিএম’র এই কর্মকর্তা।
সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. খান জাবেদ আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিষ্ঠানের কাজেই তিনি ঢাকায় এনবিআর এবং বিসিআইসিতে গিয়েছিলেন। কাজ শেষে তিনি চট্টগ্রামের কর্মস্থলে ফিরছিলেন।”
কেপিএম’র সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. সোহরাওয়ার্দী রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা। অবসর নেওয়ার আগে তিনি বিসিআইসি ও টিএসপিতেও দায়িত্ব পালন করেন।
জাবেদ আনোয়ার বলেন, “আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে মো. সোহরাওয়ার্দী চট্টগ্রামে আসছিলেন।” বর্তমান ও সাবেক দুই কর্মকর্তাকে হারিয়ে কেপিএম কারখানায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নিহত শাহিদা আক্তার বরিশালের বাসিন্দা এবং তার স্বামীর নাম মো. রেজা বলে মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহত মো. আলী দুর্ঘটনাকবলিত শ্যামলী পরিবহনের ওই বাসের সহকারী।