ডালিম হোটেল জাদুঘর করার দাবি চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চের

মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলী চট্টগ্রামের যে ভবন দখল করে নির্যাতন সেল বানিয়েছিলেন, কুখ্যাত সেই ‘ডালিম হোটেল’কে জাদুঘর বানিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইতিহাস সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2016, 07:49 AM
Updated : 30 August 2016, 07:49 AM

মঙ্গলবার আপিল বিভাগে মীর কাসেমের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রামে মঞ্চের সমাবেশ থেকে এ দাবি তোলা হয়।

এর আগে আনন্দ মিছিল করে গণজাগরণ মঞ্চ।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা মীর কাসেমের নির্দেশেই চট্টগ্রাম টেলিগ্রাফ অফিসসংলগ্ন এলাকায় হিন্দু মালিকানাধীন মহামায়া ভবন দখল করে নাম দেওয়া হয় ডালিম হোটেল।

সেখানে গড়ে তোলা হয় বদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঘাঁটি এবং বন্দিশিবির। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে এই ডালিম হোটেলকে ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ কাসেমের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়।

খবর শুনে উৎফুল্ল চট্টগ্রাম গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা চেরাগীর মোড়ে জড়ো হয়ে উল্লাস করেন। বিতরণ করা হয় মিষ্টি।

এরপর একটি আনন্দ মিছিল নগরীর বিভিন্ন রাজপথ ঘুরে ডালিম হোটেলের সামনে এসে শেষ হয়।

সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ডালিম হোটেলে নির্যাতিত রাজনীতিক সাইফুদ্দিন খানের স্ত্রী নুরজাহান খান ‘প্রত্যাশিত রায়ে’ স্বস্তি প্রকাশ করে এই হোটেলে সংরক্ষণের দাবি জানান।

তিনি বলেন, “মীর কাসেমের তত্ত্বাবধানে ডালিম হোটেলে আমার স্বামীসহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। এজন্য স্থাপনাটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে ইতিহাস সংরক্ষণের অনুরোধ জানাচ্ছি।”

মঞ্চের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান যুদ্ধাপরাধের বিচারের সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেওয়া, ডালিম হোটেল অধিগ্রহণ ও কাসেমের রায় দ্রুত বাস্তবায়নে সরকারের আহ্বান জানান।

মীর কাসেমের রিভিউ খারিজে সন্তোষ প্রকাশ করে মঞ্চের সদস্য সচিব চন্দন দাশ বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফরে খানিকটা ‘শঙ্কা’ তৈরি হলেও রায় পুনর্বহাল থাকায় তা কেটে গেছে।

“মুক্তিযুদ্ধে বিজয় যখন দ্বারপ্রান্তে তখন আমেরিকা সপ্তম নৌবহর পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষে। তাই রায়ের আগের দিন জন কেরির সফরে উদ্বিগ্ন ছিলাম। এখন স্বস্তি পাচ্ছি।”

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবসার দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে আইন প্রণয়নের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে হবে। তা না হলে তারা যেকোনো সময় আবারও সংগঠিত হতে পারে।”

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা তপন দস্তিদার, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান, সুনীল ধর।