পড়া শেষ না করেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন মারজান

গুলশান হামলার আরেক ‘হোতা’ হিসেবে চিহ্নিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের ছাত্র নুরুল ইসলাম মারজান মাঝ পথে লেখাপড়া ছেড়ে দেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2016, 08:36 AM
Updated : 16 August 2016, 01:43 PM

পাবনার হেমায়েতপুরের আফুরিয়া গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে মারজান ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় বর্ষের ষষ্ঠ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর থেকে তার আর খোঁজ নেই।

“তৃতীয় বর্ষে পুনঃভর্তি না হওয়ায় নুরুল ইসলাম আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন।”

গণমাধ্যমে মারজানকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তার সনদ ও ছবি দেখে তাকে নুরুল ইসলাম হিসেবে শনাক্ত করা হয় বলে উপাচার্য জানান।

জানা গেছে, নুরুল ইসলাম মারজানের সহপাঠীরা এখন আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষে রয়েছে। তিনি প্রথম বর্ষের সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় বর্ষে ১০টি বিষয়ের পরীক্ষার মধ্যে ছয়টিতে অংশ নিয়েছিলেন।

গুলশানে গত ১ জুলাই ক‌্যাফেতে জঙ্গি হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত‌্যার ঘটনায় সন্ত্রাস সমন আইনে করা মামলাটির তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।  

হলি আর্টিজানে হামলার প্রায় দেড় মাস পর গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ওই ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ মারজানের নাম ও ছবি প্রকাশ করেন।

নুরুল ইসলাম মারজানের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়ের ছবি

এর পর সোমবার আফুরিয়া গ্রাম থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার বাবা নিজাম উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যায় বলে খবর আসে।

তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে অধ্যয়নরত মারজান আট মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেনি।

এদিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের করা ছয় নিখোঁজ ছাত্রের তালিকায় তার নাম নেই।

সোমবার আটক হওয়ার আগে নিজাম সাংবাদিকদের বলেন, পত্রিকায় ছবি প্রকাশের পর তিনি ছেলের বর্তমান অবস্থার কথা জানতে পারেন।

প্রতিবেশীরা জানান, হোসিয়ারি শ্রমিক নিজামের ১০ সন্তানের মধ‌্যে দ্বিতীয় মারজান আর্থিক অনটনের মধ‌্যেই বেড়ে ওঠেন। আফুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে তিনি পাবনা শহরের পুরাতন বাঁশবাজার আহলে হাদিস কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলেন।

এরপর পাবনা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে দাখিল ও আলিম পাস করেন।

নিজাম বলেন, বিশ্ববিদ‌্যালয়ে ভর্তির পর বাড়ির সঙ্গে মারজানের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু বছর খানেক আগে বিয়ে করার পর যোগাযোগ কমিয়ে দেয়।

ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাতে কষ্টের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “খুব কষ্ট করে তাকে পড়াশুনা করাতাম।

“আলিম পাস করার পর সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়। ভালো ছাত্র হওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। আমি বলেছিলাম টাকা তো নেই, কী করে তোমারে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াব। সে বলেছিল, কয়েক মাস চালালে আমি প্রাইভেট ঠিক করে নিব।”

“ভর্তির প্রথম প্রথম ভালোই যোগাযোগ ছিল, বেশ কিছু দিন ধরে সে যোগাযোগ করত না। আমাদের ধারণা ছিল, বিয়ে করার কারণেই হয়ত আমাদের এখানে আসে না।”

নিখোঁজদের তালিকা না দেওয়াদের শোকজ

হলি আর্টিজানে হামলার পর পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের তালিকা চাওয়া হলে বিভাগগুলোর কাছ থেকে পাওয়া ছয় শিক্ষার্থীর তালিকা জমা দেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে তাদের সবারই খোঁজ পাওয়া যায়।

কিন্তু আরবী বিভাগসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি বিভাগ তাদের নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের তালিকা জমা দেয়নি বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার।

তিনি বলেন, “যে কয়েকটি বিভাগ তালিকা দেয়নি, সেগুলোর মধ্যে আরবী বিভাগ অন্যতম। তাই এটিসহ যারা নাম জমা দেয়নি তাদের শোকজ করা হচ্ছে।”

এছাড়া সব বিভাগের প্রধানদের নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী সেল গঠন করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।