জলাবদ্ধতার সমাধান পেতে অপেক্ষা করতে হবে: নাছির

জলাবদ্ধতা নিরসনে বড় প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে জানিয়ে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেছেন, জলাবদ্ধতার সমাধান পেতে হলে নগরবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2016, 01:19 PM
Updated : 25 July 2016, 01:40 PM

সোমবার নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তিতে এক আয়োজিত সুধী সমাবেশে নগরবাসীকে ‘ধৈর্য্য ধরার’ অনুরোধ জানান তিনি।

নির্বাচনের আগে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক ‘মেগা প্রকল্পে’ ভরসা রাখছেন মেয়র নাছির।

তিনি বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মদুনাঘাট থেকে নেভাল একাডেমি পর্যন্ত বেড়িবাধ নির্মাণ ও কর্ণফুলি নদীর সাথে সংযুক্ত ছোট-বড় ২৬টি খালের ড্রেজিং এবং এসব খালের মুখে রেগুলেটর স্থাপনের ডিপিপি চূড়ান্ত করা হচ্ছে।

প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান আ জ ম নাছির উদ্দিন, যার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন।

“আগামী এক মাসের মধ্যে ডিপিপি চূড়ান্ত হয়ে প্রকল্পটি প্রি-একনেকে যাবে। এ বছরের মধ্যে একনেকে সেটা অনুমোদন পেয়ে যাবে। এরপর বাস্তবায়নে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময় নগরবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে।”

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর জলাবদ্ধতার দীর্ঘস্থায়ী একটা সমাধান হবে বলে দৃঢ় আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া ও মোহরার বিশাল এলাকায় জোয়ারের পানির যে সমস্যা সেটাও এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অনেকাংশে কেটে যাবে বলে জানান মেয়র।

এত বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার মতো সক্ষমতা সিসিসি’র নেই উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এটা যেহেতু জোয়ারের পানি তাই এটার সমাধানের এখতিয়ার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওপরও পড়ে।

“জাতীয় পার্টির সাংসদ জিয়াউদ্দিন বাবলু ও আমি পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে কনভিন্স করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে এ প্রকল্প প্রণয়নের বিষয়টিতে রাজি করিয়েছি।”

মেয়র ও সাংসদকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে মন্ত্রী পরিদর্শন করে ডিপিপি তৈরির জন্য আলাদা কমিটি করে দিয়েছেন বলে জানান আ জ ম নাছির উদ্দিন।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে শুরু থেকে নিজেকে আন্তরিক দাবি করে মেয়র বলেন, বর্ষায় সিসিসি’র প্রস্তুতির কারণে এ বছর যথেষ্ট বৃষ্টিপাতেও জলজটের ঘটনা ঘটেনি।

‘আবর্জনা পরিষ্কারে ব্যর্থতা সিসিসি’র নয়’

উন্নত দেশের মত চট্টগ্রামেও সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে রাখার আইন চালু করলেও সেটা পালন না করায় নগরবাসীকে দোষ দিচ্ছেন মেয়র।

সুধী সমাবেশে মেয়র বলেন, নগরবাসীর সহযোগিতা না পেলে যেরকম পরিকল্পনাই হোক, সেটা বাস্তবায়ন করা সহজ না।

“ময়লা-আবজর্না নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে আমরা লিফলেট, স্থানীয় পত্রিকা এবং সিসিএল ও সিএমসিএলে (কেবল অপারেটর) বিজ্ঞাপন দিয়েছি। ছয়-সাত সপ্তাহ ধরে মাইকিংও করা হয়েছে জনগণকে সচেতন করার জন্য।”

এতকিছুর পরেও লোকে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে ময়লা ফেলে আর গণমাধ্যমে দোষ দেওয়া হয় সিসিসি’র। যারা ময়লা ফেলে তাদের বিরুদ্ধে কিছু লেখা হয় না বলে খেদোক্তি করেন মেয়র।

ডোর টু ডোর ময়লা সংগ্রহে দুই হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ছয়টি ওয়ার্ডে শুরু হতে যাওয়া এ কাজে দুই হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পেছনে সিসিসি’র প্রতি মাসে দুই কোটি টাকা খরচ হবে।

শুধুমাত্র শহরকে পরিষ্কার করতে নগরবাসীর স্বার্থে এ টাকা সিসিসি খরচ করছে বলে জানান তিনি।

পরামর্শ নেবেন মেয়র

সিসিসি’র বিষয়ে যে কোনো পরামর্শ দিতে তার ব্যক্তিগত টেলিফোনে এসএমএস বা কল পাঠাতে নাগরিকদের অনুরোধ করেন মেয়র।

তিনি বলেন, এ নগরীর স্বার্থে যে কোনো মূল্যবান পরামর্শ আমি শুনব।

“যেই হোন না কেন- ধর্ম, বর্ণ ও অর্থনৈতিকভাবে অবস্থান যাই হোক… আপনার পরামর্শ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সে পরামর্শ নিতে প্রয়োজনে আপনার বাসায় ও কর্মস্থলে গিয়ে হাজির হব আমি।”

গত এক বছরে প্রশাসনিক শৃংখলা ও গত অর্থবছরের তুলনায় ৪৯ কোটি টাকার বেশি কর আদায় ও বিলবোর্ড উচ্ছেদকে বড় সফলতা হিসেবে দেখছেন মেয়র।

তবে পুরোদমে কাজ শুরুতে পুরনো অর্গানোগ্রামকে বাধা জানিয়ে নাছির বলেন, অর্গানোগ্রামের কারণে লোকবলের নিয়োগ দিতে পারছে না সিসিসি। যে লোকবল আছে সেটা প্রয়োজনের অর্ধেক।

‘মন্ত্রী স্ট্যাটাস মুখ্য বিষয় না’

সম্প্রতি ঢাকার দুই সিটি মেয়রকে মন্ত্রীর মর্যাদা ও নারায়ণগঞ্জের মেয়রকে উপমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি সমাবেশে বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে।

নাছিরকে এ ধরনের কোনো ‘স্ট্যাটাস’ না দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে দুয়েকজন বক্তা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে মেয়র নাছির বলেন, “আমি তো মেয়র নির্বাচন করেছি। আপনারা নির্বাচিত করেছেন। স্ট্যাটাস দায়িত্ব পালনে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেনি, করছে না, করবেও না।

“স্ট্যাটাস আমার কাছে মুখ্য বিষয় না। নগরবাসীর প্রত্যাশা ও অধিকার যদি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পূরণ করতে পারি এটাই সবচেয়ে বড় স্ট্যাটাস হবে।”

এক বছর মূল্যায়নের জন্য খুব বেশি সময় না মন্তব্য করে মেয়র বলেন, ভেতরে-বাইরে এত প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে এক বছরে এর চেয়ে বেশি কেউ কিছু করতে পেরেছে বলে মনে হয় না।

সামনের দিনগুলোতে চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক মানের শহরে পরিণত করতে নগরবাসীর আন্তরিক সহযোগিতা চান আ জ ম নাছির উদ্দিন।

গতবারের মেয়র মনজুর আলমের সময় বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত থাকতেন।

তবে সোমবারের অনুষ্ঠানে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মনজুর আলম উপস্থিত ছিলেন না।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং (ইউএসটিসি) উপাচার্য ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মাইনুদ্দিন আহমদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার, সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের নগর সম্পাদক এম নাসিরুল হক, চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ ও বিএমএ’র চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মুজিবল হক খান বক্তব্য রাখেন।