সমালোচনায় খেদ মেয়র নাছিরের

চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালনকালে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ‘অযৌক্তিক’ সমালোচনা হয়েছে দাবি করে খেদোক্তি করেছেন আ জ ম নাছির উদ্দিন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2016, 02:15 PM
Updated : 23 July 2016, 03:14 PM

শনিবার নগরীর চেরাগী পাহাড়ে দায়িত্ব নেওয়ার বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক নাগরিক সংলাপে বিভিন্নজনের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আ জ ম নাছির মেয়র… সেটাই অপরাধ।”

‘মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর’ শিরোনামে চট্টগ্রামের দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ আয়োজিত এই সংলাপ সঞ্চালনা করেন কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন।

নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত করার বিষয়ে নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজি ও স্থপতি জেরিনা হোসাইনের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে নাছির বলেন, তাদের পুরোপুরি উচ্ছেদ করা হবে না। ফুটপাতের এক তৃতীয়াংশে তাদের সন্ধ্যা ও রাতে বসার ব্যবস্থা করা হবে। পরিচয়পত্র দেয়া হবে।

“হকারদের নিয়ে একাধিক সভা করেছি। তাদের কাউন্সিলিং করছি। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

আ জ ম নাছির বলেন, “উচ্ছেদ করতে গেলে আমার বিরুদ্ধে অনেকে দাঁড়িয়ে যাবে। আমাকে ব্যর্থ করার জন্য। দলের ভেতরে ও বাইরে।”

সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “অথচ গত ২০/৩০ বছরে যিনি আপনাদের কোনো পরামর্শই গ্রহণ করেননি, তাকে তো আপনারা হিরো-সুপার হিরো বানিয়েছেন। এখনও বানাচ্ছেন… প্রতিটি ক্ষেত্রেই।”

‘নাগরিক কমিটির’ পক্ষ থেকে মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে তিনবার মেয়র নির্বাচিত হন মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে মহিউদ্দিন বিরোধী হিসেবে পরিচিত নাছির।

মেয়র পদে নাছির দলীয় সমর্থন পেয়ে প্রার্থী হন। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর কিছুদিন দুই নেতার বিরোধ প্রকাশ্যে ছিল না। তবে সম্প্রতি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব এবং নগরীর হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে আবার দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন ‍দুই নেতা।

শনিবারের অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতি ইঙ্গিত করে নাছির বলেন, ‍“আমি অন্যায় করলে অবশ্যই নির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন, বলতে হবে। এখানে নাগরিক সমাজ বলে কিছু নেই, আত্মীয় সমাজ আছে।

“যাকে পছন্দ করি, তার হাজার ভুলেও আমরা কিছু বলি না। যাকে পছন্দ করি না, তার অনিচ্ছাকৃত ভুলও মেনে নিই না। তার দায়িত্ব আপনাকে ব্যর্থ করা। কেন বিরোধিতা সেটাও বলবে না।”

চলতি বছর সিটি করপোরেশন পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোর বেতন বাড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করে মেয়র নাছির বলেন, অনেক বেসরকারি স্কুলে হাজার হাজার টাকা বেতন বেড়েছে।

“সেসব নিয়ে কোনো পত্রিকায় লেখা হলো না। সিটি করপোরেশন কেন ২০/৫০ টাকা বেতন বাড়ালো তা নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়ে গেল। আ জ ম নাছির মেয়র সেটাই অপরাধ।”

তিনি বলেন, “কে খুশি, কে বেজার- সেটা দেখব না। আমি দায়িত্ব পালন করব। গত এক বছরে কেউ কি অনিয়ম দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি আত্মীয়প্রীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পেরেছে?

“পারেনি… এটাই আমার এক বছরের বড় সফলতা। আমাদের বড় বাধা- সংকীর্ণতা। সমাজের পদে পদে এই বাধা।”

নাম উল্লেখ না করেই হোল্ডিং ট্যাক্স বিষয়ক বির্তক নিয়ে নাছির বলেন, ৩১ জানুয়ারি নতুন গেজেটে হোল্ডিং ট্যাক্স ১৭ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।

“স্বাস্থ্যখাতে ৮ শতাংশ ও শিক্ষাখাতে ৫ শতাংশ করারোপের অনুমোদন হয়েছে। কোনোটাই বাস্তবায়ন করিনি। না করেই সমালোচনা হচ্ছে। যদি করতে যাই, এই চেয়ারেও হয়ত বসতে পারব না।”

সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারদের বকেয়া ও অনিয়ম বিষয়ে নাছির বলেন, ‍“১৫৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। এরপরও ২০০৫ সালে মহিউদ্দিন ভাইয়ের সময়ের বকেয়া টাকা ঠিকাদাররা পাবে।

“কাজ না করেও বিল নিয়েছে, করপোরেশনে এই অনিয়ম ছিল… বন্ধ করেছি। অনিয়ম বন্ধ করলে একটু স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। আমি থেমে নেই। কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। প্রয়োজনে আরও কঠোর হব।”

নগরীর জাতিসংঘ পার্কে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আধুনিকায়ন প্রকল্প নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে তার ‘সম্পর্কে চিড়’ ধরানো হয়েছে বলেও দাবি করেন নাছির।

তিনি বলেন, “যখন করপোরেশনের পাঁচ-ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে ব্যবহার অনুপযোগী জিমনেসিয়াম ও সুইমিং পুল করা হয়েছিল তখন কথা হয়নি। যেই পুনরুদ্ধার করতে গেছি, বিরুদ্ধে বলা হল।

“পার্ক তো নষ্ট করিনি। করলে সাবেক মেয়র করেছেন। নতুন করতে চেয়েছি। মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের সাথে আমার দীর্ঘ দিনের পিতা-পুত্র সম্পর্ক। তাতে চিড় ধরানো হয়েছে।”

সংলাপে অংশ নেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া ও আলী আশরাফ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব চন্দন দাশ, ইতিহাসবিদ শামসুল হোসাইন, বিজিএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী, আইনজীবী আখতার কবির চৌধুরী ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব মোজাম্মেল হক।