বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনার এখতিয়ার সিসিসি’র নেই

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনার এখতিয়ার চট্টগ্রাম সিটি করপোরশনের (সিসিসি) নেই বলে বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মালিকানা দ্বন্দ্ব’ নিয়ে করা এক রিটের পূর্ণাঙ্গ রায়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে আদালত।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2016, 06:19 PM
Updated : 29 June 2016, 06:22 PM

নিজে মেয়র থাকাকালে সিসিসি’র উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে করপোরেশনের ‘হস্তক্ষেপ’ ঠেকাতে গত বছর ডিসেম্বরে উচ্চ আদালতে ওই রিটটি করেছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জাফর আহমদের হাই কোর্ট বেঞ্চ সম্প্রতি ওই রিটের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে।

রায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনার এখতিয়ার সিসিসির নেই বলে সিদ্ধান্ত দেওয়া হলেও উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দেওয়ানী আদালতের দারস্থ হতে বলেছে উচ্চ আদালত।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রায়ে আদালত বলেছেন- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার কোনো এখতিয়ার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) নেই।

“চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন অর্ডিন্যান্স (১৯৮২), বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন (১৯৯২) ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন (২০১০) পর্যালোচনা করে আদালত এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।”

মহিউদ্দিন চৌধুরীর রিটের পর গত ৯ ডিসেম্বর বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের বেঞ্চ ওই রিটের শুনানি করে।

সেদিনই আদালত বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় করপোরেশনের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) দেওয়া চিঠির কার্যক্রম স্থগিত করে।

পাশাপাশি প্রিমিয়ারের সব কার্যক্রমে উদ্যোক্তা মহিউদ্দিন চৌধুরীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং এ বিষয়ে কোনো বাধাদানের ব্যাপারে করপোরেশনের ওপর ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করে। 

চট্টগ্রামের রাজনীতির মাঠে মহিউদ্দিন বিরোধী শিবিরের নেতৃত্বে থাকা আ জ ম নাছির উদ্দিন মেয়র হওয়ার পরপরই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা নিয়ে জটিলতার শুরু হয়।

গত বছরের ১৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড বিষয়ে সিসিসি’র মেয়রের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠি নিয়ে মেয়র নাছির ২৮ জুলাই প্রিমিয়ারের উপাচার্য অধ্যাপক অনুপম সেন ও ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন।  

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ট্রাস্টি বোর্ড নিবন্ধন করা হয়নি জানিয়ে ইউজিসি’র ওই চিঠিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইন অনুযায়ী ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের বিষয়ে বলা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয় বিগত মেয়র মনজুর আলমের সময়ে। সেসময় মনজুর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মহিউদ্দিন উদ্যোক্তা হিসেবে সেই বোর্ডের সদস্য ছিলেন।

এছাড়া চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ প্যানেল প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পাশাপাশি ২০১১-১৪ সালের নিরীক্ষা সিএ প্রতিষ্ঠান দিয়ে করতে বলে ইউজিসি।

মহিউদ্দিনের আইনজীবী আবুল কালম আজাদ বলেন, সিসিসিকে দেওয়া প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত চিঠিটি ইউজিসি প্রত্যাহার করে নিতে আগ্রহী বলে শুনানিতে আদালতকে জানিয়েছেন ইউজিসি পক্ষের আইনজীবী।

“সে অনুসারে সিসিসি মেয়র আ জ ম নাছিরকে দেওয়া চিঠিটি গত ৬ জুন বাতিল করে ইউজিসি। পরবর্তীতে ইউজিসি যাতে মেয়রকে এ ধরনের কোনো চিঠি না দেয় সে বিষয়েও আদালত তাদের সর্তক করেছে।”

আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড গঠন ও নিবন্ধন এবং উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর অংশগ্রহণ বিষয়ে আদালত বলেছেন- এগুলো দেওয়ানি বিষয়।

“বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব বিষয় রিটের মাধ্যমে নিষ্পতিযোগ্য নয়। প্রয়োজনে রিটকারীকে দেওয়ানি আদালতের দারস্থ হতে বলেছেন আদালত।”

মেয়র থাকাকালে প্রবর্তক মোড়ে নালা ভরাট করে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন মহিউদ্দিন। বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশেও তিনি করপোরেশনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন।