মীর গ্রুপকে এবার চিনির সঙ্গে তেল কিনতে ‘বাধ্য করায়’ জরিমানা

খুচরা বিক্রেতাদের চিনির সঙ্গে তেল কিনতে ‘বাধ্য করায়’ চট্টগ্রাম নগরীর খাতুনগঞ্জে অবস্থিত মীর গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইবনাত ট্রেডার্সের কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2016, 12:07 PM
Updated : 27 June 2016, 07:09 PM

সোমবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমানের নেতৃত্বে চালানো ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ইবনাত ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মীর গ্রুপের পরিচালক মীর মোহাম্মদ হোসাইনকে জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এদিকে এক কর্মচারী মালিকপক্ষ তাদের ওই নির্দেশনা দিয়েছিল বলে স্বীকার করলেও সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

কর্মচারীদের পক্ষে জরিমানার ওই টাকা মালিকপক্ষকেই দিতে হবে বলে রায় দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, মীর গ্রুপের আরেক পরিচালক ও ইবনাত ট্রেডার্সের কর্মকর্তা জানে আলমকে ২০ লাখ টাকা এবং অন্য দুই কর্মচারী কাঞ্চন মজুমদার ও আবুল কাশেমকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। জরিমানা আদায়ের পর তাদের তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

একই অপরাধে ইবনাত ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মীর গ্রুপের পরিচালক হোসাইনকে এক মাস কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা দেওয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গত ৮ জুন মিল থেকে ৪৬ টাকা কেজিতে কেনা চিনি পাইকারিতে ৫৮ টাকায় বিক্রি করায় খাতুনঞ্জের হাজী মীর আহমদ ট্রেডার্সকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হাজী মীর আহমদ ট্রেডার্স এভাবে প্রতিদিন দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছিল বলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অনুসন্ধানে জানা গিয়েছিল।

অভিযানে ইবনাত ট্রেডার্সের কর্মকর্তা জানে আলমকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা আদায়ের পর তাকে ছেড়ে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে শীর্ষস্থানীয় চিনি বিক্রেতা মীর গ্রুপ সম্প্রতি বাজারে ইবনাত ব্র্যান্ডের তেল বাজারে আনে।

বাজারজাতকরণের শুরুতেই তারা ‘চিনির সঙ্গে তেলও কিনতে হবে’ বলে ব্যবসায়ীদের শর্ত জুড়ে দেয়। এতে চট্টগ্রামের চিনির বাজার ‘অস্থিতিশীল’ হয়ে পড়ে।

তাহমিলুর বলেন, “এভাবে নন ব্র্যান্ডের একটি তেল তো খুচরা বাজারে বিক্রি হতে পারে না। খুচরা বিক্রেতারা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তেলের বিনিময়ে চিনির দাম হুট করে বাড়িয়ে দিলেন। নানা মহল থেকে এরপর অভিযোগ আসতে থাকে। আজ আমরা অভিযোগের সত্যতা পেলাম।”

ইবনাত ট্রেডার্স থেকে নিয়মিত চিনি কিনতেন নগরীর বহদ্দারহাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।  

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মীর গ্রুপ হঠাৎ ঘোষণা দেয়, চিনির সঙ্গে আমাদের তেলও কিনতে হবে। তেল না কিনলে আমাদের চিনি দেবে না বলেও জানিয়েছে তারা। আমাদের কোনো আপত্তিই তারা শুনতে চাইল না।”

খোরশেদ আলম বলেন, ৭ হাজার ৮০০ টাকা দরে প্রতি তিন বস্তা চিনির সঙ্গে ১৪০০ টাকা দরে এক টিন তেল কিনতে তাদের ‘বাধ্য’ করা হয়। পাঁচ বস্তা চিনির সঙ্গে কিনতে হত দুই টিন তেল।

মীর গ্রুপের কর্মচারী কাঞ্চন মজুমদার বলেন, “মালিকপক্ষ আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে চিনির সঙ্গে তেলও বিক্রি করতে হবে। না হলে ব্যবসায়ীদের চিনি দেওয়া হবে না।”

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মীর গ্রুপের পরিচালক হোসাইন বলেন, “কর্মচারীরা আসলে আমার নির্দেশনা ঠিকমতো বুঝতেই পারেননি। আমি বলেছি, যারা চিনির সঙ্গে তেল নিতে চাইবে, তাদের দেওয়া যেতে পারে। কাউকে বাধ্য করার নির্দেশনা দিইনি আমি।”

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের জানিয়েছেন, ‘এমন ঘটনা আর হবে না’।