বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে পুলিশের রাখঢাক

মাহমুদা আক্তার মিতুর দুই ‘খুনিকে’ গ্রেপ্তারের তথ্য জানালেও তার স্বামী এসপি বাবুল আক্তারকে কী নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, সে বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছে না পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2016, 05:15 PM
Updated : 27 June 2016, 11:57 AM

শুক্রবার রাতে আকস্মিকভাবে ঢাকায় শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুলকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হলে তা নিয়ে নানা আলোচনা ডালপালা গজায়।

এরপর শনিবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কয়েকজন আসামির সামনে মুখোমুখি করে বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সন্দেহের তালিকায় বাবুলও বলে গুজব ছড়ানোর প্রেক্ষাপটে রোববার ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তের ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ’ হিসেবে মামলার বাদী বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

কিন্তু ঘটনা ও মামলার তদন্তস্থল চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা স্বীকার করতেই নারাজ।

তিনি রোববার তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ বলতে আমি প্রস্তুত না। বাদীর সঙ্গে মামলা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ, দীর্ঘসময় আলোচনা হতে পারে, হবে। এটাকে জিজ্ঞাসাবাদ বলার কোনো সুযোগ নেই।”

চট্টগ্রামে মামলা হলেও ঢাকায় কেন ডেকে নেওয়া হল- সেই প্রশ্নে কমিশনার বলেন, “বাদীকে নিয়ে যে কোনো জায়গায় কথা বলা হতেই পারে।

“ঘটনার পর থেকে বাবুল আক্তারের অবস্থানস্থলে পুলিশ আছে তার নিরাপত্তার জন্য। মুভমেন্টের সময়ও পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া হয়। সেটাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার সুযোগ নেই।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন কি না, কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, কী নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে- এসব প্রশ্নে তার উত্তর, ‘তদন্তের স্বার্থে’ জনসমক্ষে দেওয়া যাবে না।

বাবুল আক্তার

পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত বাবুল কিছু দিন আগেও ছিলেন চট্টগ্রামে। সেখানে জঙ্গি দমনে বেশ কিছু অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি ঢাকায় বদলি হলেও স্ত্রী ও দুই সন্তান চট্টগ্রামেই ছিলেন।

গত ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের কাছে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মিতু। তাকে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যার পর খুনিরা মোটর সাইকেলে পালিয়ে যায়।

হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রামে গিয়ে নিজেই মামলা করেন পুলিশ সুপার বাবুল। এরপর দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। থাকছিলেন বনশ্রীতে শ্বশুরবাড়িতে।

বাবুলের শ্বশুর পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশারফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতে তার জামাতাকে ডেকে নিয়ে যান খিলগাঁও থানার ওসি মঈনুল হোসেন ও ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার আনোয়ার হোসেন।

শনিবার বিকালে তিনি বাসায় ফেরার আগ পর্যন্ত পরিবার তার কোনো খবর না পাওয়ায় এবং পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের ফোন না ধরায় নানা প্রশ্নের উদয় হয়। বাবুল গ্রেপ্তার হয়েছেন বলেও এক পর্যায়ে গুজবও ছড়িয়ে পড়ে।

বাসায় ফেরার পর বাবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যারা তদন্ত করছেন, তারা বিভিন্ন বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা করেছেন।”

আলোচিত এই মামলাটি তদন্ত করছেন চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাহবুব আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার এ হত্যা মামলার বিষয়ে বাবুলের সঙ্গে কথা বলার জন্য রাতে তার কক্ষটি চেয়ে নিয়েছিলেন।

স্ত্রী মিতুর সঙ্গে বাবুল আক্তার

ডিবি কার্যালয়ে কী নিয়ে কথা হয়েছে, সে বিষয়ে বাবুল কিছু বলেননি বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে গুজব ছড়ানো হয় বলে তাদের সন্দেহ।

এদিকে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি ‘জড়িত’ দুজনকে তারা গ্রেপ্তার করেছেন। এরা দুজন ‘পেশাদার অপরাধী’।

সাত থেকে আটজন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে দাবি করে তিনি বলেন, বাকি যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টাও চলছে।

বাবুলের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কারণে মিতু হত্যাকাণ্ডে উগ্রপন্থিরা জড়িত ধরেই তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশ। কিন্তু যে তা থেকে সরে এসেছে, তা চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনারের কথায় স্পষ্ট।

তবে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তদন্ত থেকে এখনই বাদ দিতে চাইছেন না তিনি। “ঘটনাটা টার্গেট কিলিং। তবে জঙ্গি সম্পৃক্ততা, ব্যক্তিগত, চোরাচালান, ব্যবসা সংক্রান্ত কি না, নিশ্চিত না হয়ে বলা যাবে না।”

“হত্যাকারীরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। কার নির্দেশে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এটি আমরা পর্যায়ক্রমে বের করব,” বলেন ইকবাল বাহার।