‘অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভক্তি ভুলতে হবে সাংবাদিকদের’

অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভক্তি ভুলে সারা দেশের সাংবাদিকদের এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2016, 03:37 PM
Updated : 28 May 2016, 03:37 PM

শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) আয়োজিত ‘সাংবাদিকদের মর্যাদা, শ্রম আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

ইকবাল সোবহান বলেন, “পাকিস্তানি শোষণ থেকে শুরু করে নব্বইয়ের আন্দোলন সবসময়ই এদেশের গণমানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে সাংবাদিকরা।

“কিন্তু নব্বইয়ের দশকের পর ধীরে ধীরে রাজনৈতিক মতাদর্শের দ্বন্দ্বে সাংবাদিকরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।”

এই অন্তর্কোন্দলের কারণে সাগর-রুনির হত্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিচারের আন্দোলন তৈরি করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন এক সময়ের এই সাংবাদিক নেতা।

সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড গঠনের কার্যক্রম চলছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান।

“প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নে খুবই সংবেদনশীল। তিনি গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান না, গণমাধ্যমকে শৃঙ্খলবদ্ধ করতে চান না। গণমাধ্যমের বিকাশকে সংরক্ষণ করতে চান তিনি।

“সম্প্রতি সরকারি কমকর্তাদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করায় সাংবাদিকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামোর যৌক্তিকতা আরও বেড়েছে।”

গণমাধ্যম মালিক আর রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা অর্থনৈতিকভাবে শোষিত হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। আর এ জন্য সাংবাদিকরাই দায়ী বলে মন্তব্য তার।

“একসময় মানিক মিয়া, মাওলানা আকরাম খাঁ, আবদুস সালাম, জহুর হোসেন চৌধুরীর মতো সাংবাদিকদের হাত ধরে যে সম্পাদকীয় ইনস্টিটিউশন গড়ে উঠেছিল- তা আজ মালিকের স্বার্থ আর রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। এজন্যই দেখি মালিকের স্বার্থরক্ষা করতে এক পত্রিকা আরেক পত্রিকার বিরুদ্ধে লিখছে।”  

নারায়ণগঞ্জে শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করানোসহ এক-এগারোর সময় রাজনীতিবিদদের মর্যাদাহানি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন সময়ে আসা আঘাতের প্রতিবাদে সাংবাদিকরা লেখনির মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছে উল্লেখ করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদেকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইকবাল সোবহান।

“নিজেদের অধিকার রক্ষায় আমরা সচেতন নই। একের পর এক সাংবাদিকের চাকরি যাচ্ছে, তাতে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। সাংবাদিকরা স্কেল অনুযায়ী বেতন না পেলেও কারও প্রতিবাদ নেই। এ অবস্থা নিরসনে আমাদের আন্দোলন করতে হবে। আর ত্যাগ ছাড়া কোনো আন্দোলনই সফল হয় না।”

অনুষ্ঠান উদ্বোধকের বক্তব্যে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক অনুপম সেন বলেন, “গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের ফোর্থ স্টেট ধরা হয়। এদেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে করতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিকল্প নেই।

“পাকিস্তান শাসনামল থেকে এদেশের সাংবাদিকরা অসাধারণ সংগ্রাম করেছেন, তা এখনও করে চলেছেন। সাংবাদিকদের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই সংগ্র্রামের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিএফইউজে সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম বলেন, “সংবাদপত্র এখন বিজ্ঞাপনপত্রে পরিণত হয়েছে। আমরা কারও লেজুড়বৃত্তি করব না। অষ্টম ওয়েজ বোর্ডে যে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে তা নবম ওয়েজ বোর্ডে থাকলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”

সিইউজে সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং স্বরুপ ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সিইউজে সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও রূপালী ব্যংকের পরিচালক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার,  সিইউজের সাবেক সভাপতি অঞ্জন কুমার সেন, এম নাসিরুল হক, প্রতিনিধি ইউনিট প্রধান সমীর কান্তি বড়ুয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কমিটির আহ্বায়ক সেকান্দর চৌধুরী, জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নিয়াজ মোরশেদ এলিটসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।