দেশ অচলের হুমকি হেফাজতের

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার পক্ষে উচ্চ আদালতের রায় না এলে দেশ অচল করার হুমকি দিয়েছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2016, 12:10 PM
Updated : 25 March 2016, 12:39 PM

সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের অন্তর্ভুক্তির বিধান চ্যালেঞ্জ করে ২৮ বছর আগের এক আবেদনের ভিত্তিতে দেওয়া রুল নিয়ে শুনানি শুরুর দুই দিন আগে শুক্রবার এই হুমকি দিল তিন বছর আগে মতিঝিলে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো এই সংগঠন।

চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চত্ত্বরে সমাবেশে হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, “আগামী ২৭ মার্চ উচ্চ আদালত সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে বাদ দিলে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”

সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে কার্যত বিরোধী দলবিহীন চতুর্থ জাতীয় সংসদে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী অনুমোদন হয়। সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২-এর পর ২ (ক) যুক্ত করে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’।

ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ১৯৭১ সালে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে এই পরিবর্তনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তখনই ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করেন।

রিট আবেদনকারীদের ‘মস্তিক বিকৃত’ আখ্যায়িত করে সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ‘সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন থেকে আদালতকে ‘জনগণের ভাষা’ বুঝে রায় দিতে বলে হেফাজত।ওই দিন চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

শুক্রবার সমাবেশে বাবুনগরী বলেন, ২৭ মার্চ উচ্চ আদালতের রায়ে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে বাদ দেওয়া হলে রক্ত দিয়ে তৌহিদী জনতা সেটা ‘প্রতিহত’ করবে।

“রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলে দেশের আইন শৃঙ্খলা ও শান্তি রক্ষা হবে, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরা শান্তিতে থাকবে।”

মতিঝিলে হেফাজতি তাণ্ডবের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা বাবুনগরী বলেন, “সংবিধান থেকে ইসলামকে বাদ দিলে ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে মানুষ মুসলমান থাকলেও সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো মুসলমান মুসলমান থাকবে না।”

দেশে এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে মন্তব্য করে সংগঠনের যুগ্ম-মহাসচিব মাঈনুদ্দিন রুহী বলেন, “শাপলা চত্বরে রক্ত দিয়েছি। রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম রাখায় প্রয়োজনে আবারও রক্ত দেওয়া হবে।”

দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে সংবিধানে বহাল রাখার বিরুদ্ধে তৎপরতাকে ‘পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র’ বলে মন্তব্য করেন।

রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে সংবিধানে বহাল রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন  তিনি।

অন্যদের মধ্যে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থসচিব ইলিয়াছ ওসমানি ও ঢাকা মহানগর কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মখরুল ইসলামসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।