প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ, মামলা তুলতে ‘হুমকি’

চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলা তুলে নিতে স্থানীয় এক ‘কাউন্সিলর’ হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে মেয়েটির পরিবার।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2016, 09:23 AM
Updated : 10 Feb 2016, 11:43 AM

বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বেসরকারি সংস্থা ‘নারী যোগাযোগ কেন্দ্রের’ সহায়তায় সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ তুলে ধরা হয়।

ওই কিশোরীর মায়ের অভিযোগ, পটিয়া পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রূপক সেন মামলা তুলে নিতে তাদের চাপ দিচ্ছেন।

“আমি সুষ্ঠু বিচার চাই। মামলা তুলে নিতে আমাকে সবসময় হুমকি দিচ্ছে। আমাদের পেছনে লোক লাগিয়ে রেখেছে। আমাকে মারধরও করেছে।”

তবে কাউন্সিলর রূপক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নারী যোগাযোগ কেন্দ্রের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সমন্বয়কারী নাদিরা সুলতানা হেলেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, তারা ‘সুবিচার পেতে’ ওই কিশোরীর পরিবারকে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন।

ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মা সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের ২১ জুন ছয়জন যুবক তাদের বাসায় ঢুকে তার ১৭ বছর বয়সী মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে ধর্ষণ করে। তার মেয়ে বর্তমানে আট মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা।

“ঘটনার পরপরই স্থানীয় সালিশে ছয়জন ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করে আপসের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি রাজি হইনি। পরে পটিয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করতে বলে।”

এরপর গত ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন কিশোরীর মা।

মামলায় পিয়াল দে (২০), ইমন দে (২০), জনি দে (২৬), সুজন দে (২২), সজীব দে (২২) ও নয়ন দে (২০)- নামের ছয় যুবককে আসামি করা হয়।

এদের মধ্যে তিনজন একই এলাকার, যারা কিশোরীর বাবার দিকের দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।    

প্রতিবন্ধী কিশোরীর বাবাও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তার মা এলাকায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। কিশোরীর কলেজপড়ুয়া এক বোন রয়েছে।

কিশোরীর মা বলেন, “ওই দিন আমি বাসায় ছিলাম না। বাসায় এসে ঘটনা জানতে পারলেও অসহায় আমরা কিছুই করতে পারিনি।”

মেয়ে ঘনঘন অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে তার মা অন্তঃস্বত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন।

তিনি বলেন, “ওয়ার্ড কাউন্সিলর রূপক সেন বলছে- মামলায় কিছুই হবে না। আমার অন্য মেয়ে কলেজে পড়ে। আসামিরা তার কলেজে যাওয়ার সময় অনুসরণ করছে। আমার এক মেয়ের ক্ষতি হয়েছে। এই মেয়ের কিছু হলে কি করব?”

মামলা হওয়ার পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কিশোরীর মা। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রূপক সেন টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই কিশোরীকে প্রতিবন্ধী হিসেবে ভাতা দিতে সরকারি তালিকায় আমিই নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়েছি। এটা মীমাংসাযোগ্য কোনো বিষয় না। মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।”

স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত এই কাউন্সিলর বলেন, গত নির্বাচনে তিনি আবারও নির্বাচিত হওয়ায় ‘ঈর্ষান্বিতরা’ অপপ্রচার চালাচ্ছে।

আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পটিয়া থানার ওসি রেফায়েত উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালত ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে।

“আমরা প্রতিবেদন দেব। এরপর আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে কি না। এখন তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া ছাড়া আমাদের কিছু করণীয় নেই।”