মন্ত্রীর ভাগ্নে হত্যায় স্বীকারোক্তি আদায়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ভাগ্নে ওবায়দুল হক হত্যায় স্বীকারোক্তি আদায়ে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2016, 02:10 PM
Updated : 8 Feb 2016, 05:35 PM

সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ২৬ বছর বয়সী তাসমিন খাদিজা সোনিয়া।

দেড় মাস বয়সী শিশু কোলে নিয়ে সোনিয়া সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ করেন, আট মাস আগে তার স্বামীর হত্যাকাণ্ডের পর স্বীকারোক্তি আদায়ে অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় তাকে হেফাজতে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে গোয়েন্দা পুলিশ।

এ ঘটনায় তাকে ‘হয়রানিমূলকভাবে’ মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে নেপথ্যে ওবায়দুলের ভাই ও পরিবারের সদস্যদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন সোনিয়া।

গত বছরের ২৬ জুন রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার সার্কুলার রোডের বাসায় ফেরার পথে কলাবাগান থানার অদূরে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন ওবায়দুল। সেই রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।

ওবায়দুল চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসির মালিকানাধীন সানোয়ারা গ্রুপের ড্রিংকস অ্যান্ড বেভারেজ (কোয়ালিটি আইসক্রীম) ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপক ছিলেন। পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে ছিল তার অফিস।

পিতৃহীন ওবায়দুল মামার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পাশাপাশি সার্কুলার রোডে তার বাড়িতেই থাকতেন। তার স্ত্রী থাকতেন চট্টগ্রাম নগরীতে ভাড়া বাসায়।

ঘটনার রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাই। পরের মাসে সোনিয়ার কথিত প্রেমিক সাইফুল্লাহ ওরফে রুবেলের দুই ভাগ্নে মাহমুদুল হাসান মিঠু এবং তানভীর আহমেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। এ ঘটনায় পাপ্পু নামে রুবেলের আরেক ভাগ্নেও জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এরপর ২৩ জুলাই চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা এলাকা থেকে সোনিয়াকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় নিয়ে যায় পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশ সেসময় গ্রেপ্তার মিঠু ও তানভীরের বরাত দিয়ে জানিয়েছিল, সোনিয়া ও রুবেলের পরিকল্পনা অনুসারেই তারা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় এবং এজন্য ৬০ হাজার টাকায় অস্ত্র কেনে।

সোমবার সংবাদ সম্মেলনে সোনিয়া বলেন, “হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করার জন্য রিমান্ডে পুলিশ আমাকে শারীরিক ও মানসিক চাপ প্রয়োগ করে। আমি যেন স্বীকার করি, রুবেল নামে এক সহপাঠীর সাথে আমার প্রেমের সর্ম্পক আছে।

“তখন আমি অন্তঃসত্ত্বা। ওই অবস্থায় দুই মাস হাজতবাসের পর হাইকোর্ট আমাকে জামিন দেয়।”

ঢাকায় ডেফোডিল ইউনিভার্সিটিতে এলএলএম ক্লাস করার সময় রুবেল নামে এক ছেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল বলে জানান সোনিয়া।

“মাঝে মাঝে পড়ার বিষয়ে তার কাছ থেকে জেনে নিতাম। এর বাইরে আমাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।”

‘আমি কি আরেক জজ মিয়া’- এ প্রশ্ন করে সোনিয়া বলেন, “যে রুবেল হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে পুলিশ বলছে, তাকেই এখনো গ্রেপ্তার করেনি।”

সোনিয়া অভিযোগ করেন, ওবায়দুলের মৃত্যুর পর তার বড় ভাই শেখ আহম্মদ এবং ফুফাত ভাই নেছার আহমদ তাকে গর্ভপাত ঘটানোর জন্য চাপ দিয়েছিল।

“এতে রাজি না হওয়ায় শেখ আহম্মদ গোয়েন্দা পুলিশ দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করিয়েছেন। তিনি আমার কাবিননামা, স্বর্ণালঙ্কার, টাকা ও ব্যাংকের বই সব নিয়ে গেছেন।”

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোনিয়া বলেন, “বাবা বেঁচে নেই বলে কি সন্তানের জন্মগ্রহণ করা পাপ। কেন এত জোর-জবরদস্তি? এর মূল রহস্য কোথায়?”

সোনিয়ার অভিযোগ, ওবায়দুলের অন্য তিন ভাই জোর করে তাদের পৈত্রিক বাড়ি দখল করে রেখেছিল বলে বিয়ের পর তাকে চট্টগ্রামে ভাড়া বাসায় রাখেন ওবায়দুল।

এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে খুনের মূল হোতাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রী হস্তক্ষেপ কামনা করেন সোনিয়া।