কোকেন মামলায় পাঁচজনকে নুরের মুখোমুখি করবে র‌্যাব

চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের সঙ্গে তরল কোকেন আনার মামলায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ ও অন্য পাঁচ আসামিকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে র‌্যাব।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2016, 04:07 PM
Updated : 7 Feb 2016, 04:07 PM

রোববার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক নুরুল আলম মোহাম্মদ নিপু তাদেরকে একদিন রিমান্ডে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন মঞ্জুর করেন।

ওই পাঁচ আসামি হলেন- আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল, মো. মোস্তফা কামাল ও আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেদী আলম এবং গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান ও কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন) এ কে আজাদ।

পুলিশ জানিয়েছে, নুর মোহাম্মদ ও তাদের পাঁচজনকে একত্রে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানায় র‌্যাব।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার আটক করে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

বলিভিয়া থেকে মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের নামে আমদানি করা সূর্যমুখী তেলবাহী কনটেইনারটি জাহাজে তোলা হয় উরুগুয়ের মন্টেভিডিও বন্দর থেকে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে গত ১২ মে পৌঁছায় চট্টগ্রাম বন্দরে।

পরে আদালতের নির্দেশে কন্টেইনার খুলে ১০৭টি ড্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বন্দরের পরীক্ষায় কোকেনের উপস্থিতি না মেলায় ঢাকার বিসিএসআইআর এবং বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে তরলের নমুনা পুনরায় পরীক্ষা করা হয়। দুই পরীক্ষাগারেই তরল কোকেনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে।

এ ঘটনায় ২৮ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ ও কর্মচারী গোলাম মোস্তফা সোহেলকে আসামি করে মাদক আইনে একটি মামলা করে পুলিশ। পরে আদালত মামলাটিতে চোরাচালানের ধারা সংযোগের নির্দেশ দেয়।

গত ১৯ নভেম্বর এ ঘটনায় মাদক আইনে করা মামলায় আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ) মো. কামরুজ্জামান। এতে ৫৮ জনকে সাক্ষী করা হয়।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান ‍নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয় অভিযোগপত্রে। 

মামলায় অভিযুক্ত আটজনের মধ্যে যুক্তরাজ্যের নাগরিক ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া পলাতক এবং সাইফুল ইসলাম গত ২ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতের জামিন নিয়ে কারাগার থেকে ছাড়া পান।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রশিকিউশন) নির্মলেন্দু চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, র‌্যাবের পক্ষ থেকে নুর মোহাম্মদের উপস্থিতিতে অন্য আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের প্রত্যেককে দুই দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়।

“আদালত প্রত্যেক আসামির একদিন করে মঞ্জুর করেছেন। নুর মোহাম্মদকে দ্বিতীয় দফায় এখনও রিমান্ডে নেওয়া হয়নি। তাদের সবাইকে একসাথে রিমান্ডে নেওয়া হবে বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়।”

১ ফেব্রুয়ারি তাকে দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর হয়।

কোকেনবাহী কনটেইনার জব্দের সাত মাস পর গত ১৫ জানুয়ারি র‌্যাব-৭ সদর দপ্তরে ডেকে নেওয়ার পর গ্রেপ্তার করা হয় নুর মোহাম্মদকে। সেদিনই আদালতের নির্দেশে তাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

এরপর র‌্যাব-৭ এর পক্ষ থেকে তাকে তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ১৭ জানুয়ারি তিন দিনই মঞ্জুর করে আদালত। পরদিন আসামি পক্ষের করা আবেদনে রিমান্ড স্থগিত করা হয়। এ বিষয়ে শুনানি শেষে ২০ জানুয়ারি আসামি পক্ষের করা রিমান্ড বাতিলের আবেদন খারিজ করে আদালত।

এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর এ মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণের বিষয়ে শুনানির ধার্য দিনে অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে মামলাটি অধিকতর তদন্ত করতে র‌্যাবকে নির্দেশ দেয় আদালত।

মামলার এক আসামি ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উল্লেখ করেন জানিয়ে আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেনি। 

পাশাপাশি র‌্যাবকে কমপক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে এ তদন্ত করতে নির্দেশ দেয় আদালত।