চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার মচ্ছব, প্রশাসনও নীরব 

চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকায় পাহাড় কাটার রীতিমতো মহোৎসব চললেও তা বন্ধে নেই প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2016, 01:40 PM
Updated : 25 Jan 2016, 02:24 PM

অবশ্য প্রশাসন বলছে, তারা থেমে নেই; সময় মতো অভিযান চালানো হবে।

আর স্থানীয়রা বলছেন, প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় বিরামহীনভাবে এই পাহাড় কাটা হচ্ছে প্রশাসনের চোখের সামনেই, যা তারা নিজেরাও জানেন। 

খুল অল্প সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) অধীন ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড ও এর আশেপাশের ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ বসতি, ইটভাটা, মুরগি ও মাছের খামার।

শনিবার সরেজমিনেও দেখা গেল এই চিত্র। ১ নং দক্ষিণ পাহাড়তলী পাহাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তিনটি এক্সকেভেটর দিয়ে সমানে পাহাড়ের মাটি কাটা চলছে।

সাত থেকে আটটি ট্রাক সে মাটি নিয়ে যাচ্ছে বাইরে। এর পাশেই রয়েছে দুটি এবিএআই ও চট্টলা নামের ইটভাটা। রাত ৯টা পর্যন্ত ওই এলাকায় এক্সকেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটতে দেখা গেছে।

পাশাপাশি পুরো পাহাড়ি এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে অবৈধ বসতি, যার পেছনে একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট রয়েছে বলে অনেকেই জানিয়েছেন। অন্তত ১২টি কলোনি গড়ে তোলা হয়েছে নানা নামে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কয়েকদিন আগে অভিযোগ পেয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের দল ঘটনাস্থলে যাবে।

“ঘটনাস্থলে গিয়ে সবার সাথে কথা বলে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ পাহাড় কাটা বন্ধ করা হবে।”

দেখা গেছে, ওই এলাকায় আমতলী কলোনি ১, আমতলী কলোনি ২, ৩ নম্বর কলোনি, সেকান্দর কলোনি, মালা কলোনি, বাগানবাড়ি কলোনি, হাতিয়া কলোনি, ফোরকান কলোনি, বাইল্লাছড়ি কলোনি ও সন্দ্বীপ কলোনি গড়ে উঠেছে পাহাড় কেটে।

এসবের পেছনে দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকা থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলরের আশ্রয়-প্রশ্রয় রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন কয়েকজন।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোয়াজ্জেম হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক দিন ধরে পাহাড় কাটাসহ নানান অপকর্ম করে আসছে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে থাকা একটি সিন্ডিকেট।”

সিন্ডিকেটের সহায়তায় অবৈধ বসতি তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ‘গডফাদার’ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বিশাল একটি চক্র এটার সাথে জড়িত।

নতুন করে যাতে আর কোনো পাহাড় কাটা বা বসতি স্থাপন করা না হয় সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন এই উপজেলা নির্বাহী।

ওই এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের সদস্য জাফর আলম চৌধুরীর কণ্ঠেও শোনা গেল একই অভিযোগ।

তিনি বললেন, “আওয়ামী লীগের নাম বিক্রি করে এসব অপকর্ম চালানো হচ্ছে। প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। দেশের কোথাও এরকম বিশাল জায়গা জুড়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চলছে না।”

“আমি অনেক চেষ্টা করেছি। এখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়।”

স্থানীয় কয়েকজন জানান, ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি সিন্ডিকেট যাদের নেতৃত্বে রয়েছে শাহেদ, রাশেদ, মনিরুল আলম নামের কয়েকজন। এদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বর্তমান কাউন্সিলর তৌফিক আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৌফিক চৌধুরী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এরকম কোনো অন্যায় হলে প্রশাসন তো ব্যবস্থা নিত। ওই এলাকায় প্রশাসন খুব সক্রিয়।”

অবৈধ বসতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর বলেন, “ওরকম কোনো ঘটনা ঘটছে না। আর দুর্গম এলাকায় বসতি হলে সেটা তো আমাদের কারো নজরে আসবে না।”