চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের মিছিল-সমাবেশ

চট্টগ্রাম কলেজে নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনসহ আট দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশ করেছে নগর ছাত্রলীগ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2016, 01:28 PM
Updated : 2 Jan 2016, 01:49 PM

শনিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে এই মিছিল ও সমাবেশ করেন নেতাকর্মীরা; পরে দুপুরের দিকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে রক্ত ঢেলে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে শিবিরের উগ্রপন্থি কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানান তারা।

১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার সময় ছাত্রলীগের ওপর শিবিরের হামলা হলে এক পর্যায়ে সেটি দুইপক্ষের সংর্ঘষে রূপ নেয়। ওই দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ চারটি ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়।

আর পরদিন ১৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় কলেজের শীতকালীন ছুটি।

ছুটির পর প্রথম দিনে নগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নিয়ে স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনসহ আট দফা বাস্তবায়নের দাবি জানায়।

এক পর্যায়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতারা অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেন।

ছাত্রলীগের আটটি দাবির মধ্যে রয়েছে- কলেজ ক্যাম্পাসে স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, মূল ফটক ছাড়া অন্য ফটকগুলো বন্ধ রাখা, চট্টগ্রাম ও মুহসীন কলেজের সব ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস বন্ধ রাখা, ক্যাম্পাসের ভেতর আবাসিক স্থাপনা না রাখা, 'শিবিরের তল্পীবাহক' হোস্টেল সুপার ও মসজিদের ইমামকে অপসারণ করা, অস্থায়ী ও খণ্ডকালীন কর্মচারীদের অপসারণ এবং ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে দোকান অপসারণ।

নুরুল আজিম রনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কলেজ প্রশাসন দায়ী। তারা যদি দাবি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিত তাহলে এ অবস্থা হতো না।

“ইতিপূর্বে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়ার ছাত্র শিবিরের ক্যাডার এবং শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত হল প্রভোস্টদের বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আলোচনায় অধ্যক্ষ আমাদের আশ্বস্তও করতে পারেননি।”

শীতকালীন ছুটির পর চট্টগ্রাম কলেজ খোলার প্রথম দিনে নগর ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশ ও শিবিরের হামলায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে

শীতকালীন ছুটির পর চট্টগ্রাম কলেজ খোলার প্রথম দিনে নগর ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশ ও শিবিরের হামলায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে

এরপর বেলা ১টায় অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনের করিডরে রক্ত ঢেলে প্রতিবাদ জানায় নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও কলেজের মোট ৮৩ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সিরিঞ্জের মাধ্যমে এই রক্ত নেওয়া হয় বলে জানান নুরুল আজিম রনি।

তিনি বলেন, "প্রতীকী এ কর্মসূচির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছি- রক্ত দিয়ে হলেও আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। শিক্ষকরা আশ্বাস দেওয়ায় পরে আমরাই রক্ত মুছে দিয়েছি।"

ছাত্রলীগের কর্মসূচি চলাকালে কলেজে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও বেলা আড়াইটার দিকে নেতাকর্মীরা মিছিল করে ক্যাম্পাস ছেড়ে গেলে বিকালে তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।

এদিকে বন্ধের পর প্রথম দিনে কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা ছিল হাতেগোনা, কোনো বিভাগে ক্লাশ হতে দেখা যায়নি। তবে কয়েকটি বিভাগে পরীক্ষা ও ফরম পূরণ করেছেন ছাত্রছাত্রীরা।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে বিকালে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন অধ্যক্ষ জেসমিন আক্তার।

বৈঠকে কলেজ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় রোববার কলেজের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

অধ্যক্ষ জেসমিন আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "তারা (ছাত্রলীগ) আজ এসেছিল, কথা হয়েছে। তাদের এমন কিছু দাবি আছে যা কলেজ প্রশাসনের পক্ষে পূরণ সম্ভব নয়। এটা আপনারাও বোঝেন।

“কলেজে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সেটা দুঃখজনক। সুষ্ঠুভাবে যাতে কলেজ চলে সেই চেষ্টাই সবাই মিলে করব।”

এদিকে চট্টগ্রাম কলেজে কর্মসূচি শেষ করে পাশের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজ ক্যাম্পাসেও মিছিল করে নগর ছাত্রলীগ।

চকবাজার থানার ওসি আজিজ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "চট্টগ্রাম কলেজের মূল ফটক ছাড়া অন্য ফটকগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। কলেজের আশেপাশে পুলিশের টহল আছে। "

বিজয় দিবসে শিবিরের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংর্ঘষের পর চট্টগ্রাম কলেজের চারটি ছাত্রাবাস বন্ধের পাশাপাশি নিকটবর্তী মহসিন কলেজেরও দুটি ছাত্রাবাসও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।