‘অপারেশন জ্যাকপট’র নৌ কমান্ডোদের সম্মাননা

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্ণফুলি চ্যানেলে পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসে অংশ নেওয়া ‘অপারেশন জ্যাকপট’র নৌ কমান্ডোদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2015, 01:52 PM
Updated : 10 Dec 2017, 06:33 AM

ওই অভিযান সফল করতে ভূমিকা রাখা ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং কমান্ডোদের আশ্রয় দেওয়া চারটি বাড়ির মালিককে বুধবার বন্দরনগরীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিললেও তাদের জন্য এ ধরনের নাগরিক আয়োজন এটাই প্রথম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “মাত্র তিনমাসের ট্রেনিংয়ে একদিনে শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে এতো বড় সাফল্য পাওয়া বিশ্বে একটি বিরল ঘটনা। সাহসী জাতি গঠনে মুক্তিযুদ্ধে এমন দুঃসাহসী অভিযানের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।”

নৌ কমান্ডোদের সংগঠন ‘নেভাল কমান্ডো অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা অপারেশন জ্যাকপটের অধিনায়ক অবসরপ্রাপ্ত কমোডর আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী বলেন, “অভূতপূর্ব সাহসিকতা ও মনোবল সম্বল করে এ অভিযানকে সফল করেছিল নৌ কমান্ডোরা। এ সফল অভিযান মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে বিশ্ববাসীর মনোভাব পরিবর্তন করে দিয়েছিল।

“অভিযানে অংশ নেওয়া পুরো টিম অক্ষত থেকে কর্ণফুলি চ্যানেলে ১১টি যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসের পর এ চ্যানেলে আর কোনো জাহাজ প্রবেশ করেনি সে সময়।”

‘অপারেশন জ্যাকপট’-এ অংশ নেওয়া নৌ কমান্ডো এ এইচ এম জিলানী আক্ষেপ করে বলেন, “পৃথিবীর কয়েকটি দেশ আমাদের এই বীরত্বপূর্ণ অভিযান তাদের নিজস্ব বাহিনীর প্রশিক্ষণে পাঠ্যসূচি হিসেবে রাখলেও আমাদের দেশে জনসাধারণের কাছে পৌঁছানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

“ভারতের নৌ বাহিনীর এডমিরাল মীর কে রয়ের ‘ওয়ার ইন ইনডিয়ান ওসান’ বইতে এ অপারেশন নিয়ে আলাদা অধ্যায় আছে। এমনকি আমেরিকাও তার বাহিনীকে সফল নৌ অপারেশন হিসেবে এ ঘটনার উদাহরণ দেয়।”

১৯৭১ সালে ফ্রান্সে পাকিস্তান নৌবাহিনীর সাবমেরিনার হিসেবে ‘মাংরো সাবমেরিন’-এ প্রশিক্ষণকালে নয়জন বাঙালি নৌ সেনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার কথা জেনে গোপনে লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসে আশ্রয় নেন।

এরপর মাদ্রিদ, জেনেভা, রোম ও বার্সেলোনায় ভারতীয় দূতাবাসে আশ্রয় নিয়ে দিল্লি পৌঁছায় নয়জনের এ দলটি।

পরে ভারতের ঐতিহাসিক পলাশীর ভাগীরথির তীরে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ওই নয়জনসহ মোট ১৬০ জন নৌ কমান্ডো অপারেশন জ্যাকপটের জন্য প্রস্তুত হন।

১৯৭১ সালের ১০ অগাস্ট কমান্ডোরা দেশে প্রবেশ করেন। ১৫ অগাস্ট মধ্যরাতে অপারেশন পরিচালনার জন্য চূড়ান্ত সংকেত পান তারা।

পরিকল্পনা অনুযায়ী কমান্ডোরা কর্ণফুলি চ্যানেলে পাকিস্তানি জাহাজগুলোর গায়ে তিনটি করে মাইন স্থাপন করে নয়টি জাহাজ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেন। বাকি দুটি জাহাজ চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

চট্টগ্রামের সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা মঈন উদ্দিন খান বাদল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।