চট্টগ্রামে জেএমবির সংগঠিত হওয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার দাবি

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির চট্টগ্রামে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা ভেস্তে দেওয়ার দাবি করেছে পুলিশ।

উত্তম সেন গুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2015, 07:37 PM
Updated : 6 Oct 2015, 07:50 PM

তারা বলছে, জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) চট্টগ্রাম শাখার দ্বিতীয় শীর্ষনেতা বুলবুল আহমেদ সরকার ওরফে ফুয়াদসহ অন্যদের গ্রেপ্তার এবং সামরিক কমান্ডার জাভেদ নিহত হওয়ায় তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি ভেঙে গেছে।

সংগঠনের অর্থ সংগ্রহের জন্য জেএমবি সদস্যরা কিছুদিন আগে নগরীর মাঝিরঘাট এলাকায় গ্রেনেড ফাটিয়ে ছিনতাই করতে গিয়েছিল। তখন তাদের দুই সদস্য নিহত হন বিস্ফোরণে।

পুলিশ বলছে, গত ২৩ মার্চ নগরীর আকবর শাহ এলাকায় বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার জেএমবি সদস্য এরশাদ হোসেন মামুন সেসময় ফুয়াদের কথা জানিয়েছিলেন।

সোমবার সন্ধ্যায় কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর এলাকার একটি বাসা থেকে জেএমবির সামরিক কমান্ডার তৌফিকুল ইসলাম ওরফে জাভেদ ওরফে রানাসহ পাঁচজনকে নয়টি হ্যান্ডগ্রেনেড, একটি পিস্তল, ১২০ রাউন্ড গুলি, বোমা ও অস্ত্র তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

মঙ্গলবার ভোররাতে অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে অস্ত্র-বোমা উদ্ধার করতে গেলে গ্রেনেড বিস্ফোরণে জাভেদ নিহত হন বলে পুলিশের দাবি।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রামে জেএমবির প্রধান হিসেবে ফারদিন নামের একজনের কথা এসেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা তার কথা বললেও তাকে পাওয়া যায়নি।

“জেএমবি তাদের অবস্থান জানান দিতে নানা পরিকল্পনা করলেও তা ভেস্তে গেছে।”

তিনি জানান, জেএমবির সদস্যরা কয়েকটি স্তরে ভাগ হয়ে কাজ করলেও এক স্তরের সদস্যরা অন্য স্তরের কর্মীদের চিনতেন না বলে গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে জেএমবি’র দ্বিতীয় শীর্ষনেতা ফুয়াদের আসল নাম বুলবুল আহমেদ। সাংগঠনিকভাবে সে কারও কাছে ফুয়াদ, অন্য কারও কাছে মেহেদি, রকি ও আপেল নামে পরিচিত।

‘একে অপরকে চেনেন না’

গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাবুল আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে তারা একজন সংগঠনের অন্য নেতাদের চেনেন না।

সংগঠনে কর্মীরা কয়েকটি স্তরে ভাগ হয়ে কাজ করে জানিয়ে তিনি বলেন, “এদের দাওয়াতী, ফিল্ড অপারেশন ও বিস্ফোরক নামে তিনটি শাখা রয়েছে।”

“গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সুজন ওরফে বাবু ফিল্ড অপারেশন শাখা, জাভেদ বিস্ফোরক শাখায় কাজ করেন। এছাড়া পলাতক ফারদীন পুরো সংগঠনের দায়িত্বে এবং ফুয়াদ তার সেকেন্ড ইন কমান্ড।”

গ্রেপ্তার ফুয়াদ বলেন, সংগঠনে ফারদীন ও জাবেদ ছাড়া আর কাউকে তিনি চেনেন না। নিহত জাভেদ কী কাজ করতেন, তাও জানেন না।

পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল বলেন, জেএমবি সদস্যরা মোটর সাইকেল ও বাইসাইকেলে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করত। মোটর সাইকেলে যাতায়াতে পুলিশি তল্লাশিতে পড়া এড়াতে বাইসাইকেল ব্যবহার করত।

জেএমবি সদস্যরা আগে নগরীর রহমান নগর এলাকায় থাকলেও এ মাসের শুরুতে বাসা পাল্টে কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর আজিমপাড়া  এলাকার আইয়ুব বিবি সিটি করপোরেশন কলেজ রোড সংলগ্ন হাজী নুর  আহম্মদ টাওয়ারের নিচতলায় চলে যায়।

খরচ দিতেন ফারদীন  

গ্রেপ্তার ফুয়াদ জানিয়েছেন, তাদের সংগঠনের কর্মীদের সকল খরচ দিতেন ফারদীন। তবে সে টাকা কীভাবে আসত, তা তার জানা নেই।

২০১২ সালে বগুড়ার মহাস্থানগড় শাহ সুলতান কলেজের বিএসএস প্রথম বর্ষে পড়াকালীন নজরুল নামে এক ব্যক্তির পরিচয় হয় ফুয়াদের। তিনিই তাকে জেএমবিতে যোগ দিতে উৎসাহিত করে চট্টগ্রামে আসতে বলেন বলে তার দাবি।

ফুয়াদ আরও জানান, ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম আসার পর ফারদীন তার দায়িত্ব নেন এবং এনআইটি নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডেন্টাল টেকনোলজিতে ভর্তি করিয়ে দেন। তার পরামর্শে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য ফুয়াদ নগরীর বিশ্বকলোনি এলাকার এক মেয়েকে বিয়ে করেন।

ফারদীন তাদের কর্মীদের সবকিছু দেখভালের পাশাপাশি খরচও দিয়ে থাকেন। তবে তিনি কর্মীদের খবরাখবর রাখতেন বলে পুলিশকে জানায়।

মাঝিরঘাটে ছিনতাইয়ে ছিল আটজন

ফুয়াদ পুলিশকে জানিয়েছে, ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে মাঝিরঘাটে ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনিসহ আটজন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ফারদীনসহ ছয়জন দুটি মোটর সাইকেলে এবং তিনি ও রফিক আলাদা করে সেখানে গিয়েছিলেন।

তার বক্তব্য অনুযায়ী, ছিনতাইয়ের কাজে যাওয়ার জন্য তারা নতুন দুটি মোবাইল ফোন কিনেন, যার একটি ছিল তার কাছে।

ফুয়াদের ভাষ্যমতে, গুলি ছুড়ে টাকা লুটের পর লোকজন এগিয়ে এলে তারা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটান। এসময় সে তার কাছে থাকা মোবাইল ফোনটি নদীতে ফেলে পালিয়ে যান।

ওই দিন দুই ছিনতাইকতারী নিহত হন এবং সাহা করপোরেশন নামক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সত্য গোপাল ভৌমিক দুদিন পরে মারা যান।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাবুল আক্তার বলেন, নিহত দুই ছিনতাইকারীর লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হলেও তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের মধ্যে একজন মো. রফিক ও অন্যজন মো. রবিউল।

রফিক সোমবার গ্রেপ্তার হওয়া মাহবুবুর রহমান ওরফে খোকন এবং মো. শাহজাহান ওরফে কাজলের ছোট ভাই।

কাজল সাহা করপোরেশনের কর্মচারী ছিলেন জানিয়ে বাবুল আক্তার বলেন, তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটিতে জেএমবি সদস্যরা ছিনতাই করতে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, কাজল তার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করলেও পরিচয় গোপন করে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করেন।

গ্রেপ্তার মাহবুব, কাজল ও নিহত রফিক সম্পর্কে জেএমবি নেতা ফুয়াদের মামা শ্বশুর বলেও পুলিশ জানিয়েছে।