ফকিরের আস্তানায় জোড়া খুনেও জেএমবি?

চট্টগ্রামে এক মাস আগে কথিত এক ফকিরের আস্তানায় দুজনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির জঙ্গিরা জড়িত বলে দাবি করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2015, 04:57 AM
Updated : 6 Oct 2015, 01:24 PM

নিষিদ্ধ সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধানসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর এই তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে বলে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তার জানিয়েছেন।

সোমবার সন্ধ্যায় কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর আজিমপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান মো. জাবেদকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে বিস্ফোরক উদ্ধারে অভিযানের সময় মঙ্গলবার ভোররাতে জাবেদ গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হন বলে পুলিশের দাবি।

ছিনতাইয়ের তদন্তে গ্রেপ্তার সুজন ওরফে বাবুসহ চারজনের দেওয়া তথ্যে জাবেদের আস্তানার সন্ধান মেলে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

বাবুই শেরশাহ বাংলাবাজারের ফকিরের আস্তানায় জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাবুল জানান।

গত ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে শেরশাহ বাংলাবাজারের পূর্বাচল এলাকায় ওই ঘটনায় স্থানীয়ভাবে ‘লেংটা মামু’ নামে পরিচিত ফকির রহমত উল্লাহ (৬০) ও তার খাদেম মো. আব্দুল কাদেরকে (৩০) গলা কেটে হত্যা করা হয়।

স্থানীয়রা ধাওয়া করলে হাতবোমা ফাটিয়ে পালিয়ে যায় খুনি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ওই এলাকা থেকে আবদুল মান্নান মনা (৪০) নামে একজনকে আটক করে পুলিশ।

ওই ঘটনার পর নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “ফকিরের সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ আছে কি না অথবা মাজারবিরোধী গোষ্ঠীর কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

এর এক মাসের মাথায় জেএমবির সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানাল পুলিশ। 

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল বলেন, “মাজার সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম ইসলামবিরোধী এবং ন্যাংটা থাকার বিষয়টিও ইসলামে হারাম, ইসলাম ও শরিয়তবিরোধী লোকদের খুন করলে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়- এ ধারণা থেকে বাবু নিজেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়।”

ফকির ‘লেংটা মামু’ খুন হওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন এক ভক্ত।

 

বাবুকে উদ্ধৃত করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,অক্সিজেন এলাকা থেকে ৩০০ টাকায় একটি ছুরি কিনে একটি সাইকেল চালিয়ে ওই দিন জুমার নামাজের সময় পীরের আস্তানায় যান এই জেএমবি সদস্য। প্রথমে লেংটা ফকির ও পরে তার খাদেমকে গলা কেটে হত্যা করে চলে আসেন তিনি।

বাবুল আক্তার বলেন, “সে ফকির ও তার খাদেমকে হত্যা করে পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে রাত যাপন করে সকালে ওই এলাকা ছেড়ে চলে আসে।”

বাবুর (২৮) বাড়ি ঝিনাইদহে। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন ফুয়াদ (৩৩), মাহবুব (৩৭) ও কাজল (৪০)।

মঙ্গলবার সকালে নগর পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম শহীদুর রহমান বলেন,  গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে সদরঘাট এলাকার ছিনতাইয়ের তদন্ত করতে গিয়ে জঙ্গি আস্তানা উদ্ধারসহ বিভিন্ন দিক বের হয়ে আসে।

পুরো অভিযানের নেতৃত্বে থাকা বাবুল আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সে রাতে ছিনতাইয়ের জন্য ব্যবহার করা হয় গ্রেনেড ও একে-২২ রাইফেল।

“নিজেদের বোমায় দুই ছিনতাইকারী নিহত হওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে দুটি একে-২২ রাইফেল উদ্ধার করা হয়, যা তারা ব্যবহার করেছিল। এছাড়াও তাদের ব্যবহৃত বোমাগুলোও সাধারণ বোমা ছিল না।”

বিষয়টি ধরে তদন্ত করতে গিয়ে জঙ্গি আস্তানাসহ বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম, গ্রেনেড, পিস্তল উদ্ধার করা হয় বলে জানান বাবুল আক্তার।

তিনি বলেন, “রাতে গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে একজন ন্যাংটা ফকির হত্যাকাণ্ড বাবু ঘটিয়েছে বলে জানায়। এরপর বাবু ঘটনার পুরো বর্ণনা দেয়।”

বাবুর দেওয়া তথ্যে লেংটা ফকির ও তার খাদেম হত্যায় ব্যবহৃত দা ও বাইসাইকেল মঙ্গলবার বিকালে উদ্ধার করা হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. ইলিয়াছ জানান, পীরের আস্তানার পাশে একটি নালা থেকে দা এবং সেখানে ফেলে আসা সাইকেলটি জব্দ করা হয়েছে।

এছাড়া অক্সিজেন এলাকার বক্স নগরের হক টাওয়ারের বাবুর বাসা থেকে সেদিন তার পরনে থাকা প্যান্ট ও গেঞ্জিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।