ফোন পেয়ে রায় লেখার দিন নেই: প্রধান বিচারপতি

টেলিফোনে নির্দেশনা শুনে রায় লেখার দিন চলে গেছে মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগে সেদিন ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2015, 11:57 AM
Updated : 3 Oct 2015, 01:04 PM

শনিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত এ কে খান আইন অনুষদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্যে এ কথা বলেন।

এস কে সিনহা বলেন, “এখানে একটা বিষয় এসেছে, তাই বলতে চাই। আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন।

“আমার বিচারকরা এখন আর হুটহাট কোনো টেলিফোন ধরেন না। টেলিফোনে কথা বলে বিচারকরা জামিন দেবেন বা রায় লিখবেন, সেদিন চলে গেছে। বাংলাদেশে সেদিন আর আসবে না।”

এর আগে মিজানুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা এমন বিচারক দেখতে চাই না, যারা কোনো মন্ত্রণালয় থেকে টেলিফোন আসবে বা কোনো মন্ত্রণালয় থেকে টেলিফোন আসতে পারে সে আশঙ্কায় বিচার করবেন। এমন বিচারক দেখতে চাই যারা বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন, যারা আইনের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।”

এ কে খান ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন অনুষদের নতুন এই ভবন নির্মিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্ব চলে।

আলোচনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংসদের উদাহরণ টেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের শতকরা ৯০ ভাগ সদস্য আইনের ছাত্র। ইউরোপের দিকে দেখেন, যুক্তরাজ্যে পার্লামেন্টের ৮০ ভাগ সদস্য আইনের ছাত্র, আইনের শিক্ষক বা আইনজীবী।

“আর আমার বাংলাদেশের ৮০ ভাগ সংসদ সদস্য হলেন ব্যবসায়ী, দুই থেকে তিনভাগ আইনজ্ঞ।”

আইনের শাসন ও গণতন্ত্র রক্ষায় আইন বিভাগের স্নাতকদের এগিয়ে আসতে হবে মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “৮০ ভাগ ব্যবসায়ী দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে না।”

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, “এমন আইনজীবী দেখতে চাই যারা সাক্ষীকে মিথ্যা কথা বলতে শেখাবে না। এমন আইনজীবী দেখতে চাই যারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে আইনকে ব্যবহার করবে; কোনো ক্ষুদ্র স্বার্থে আইনকে ব্যবহার করা থেকে যারা সবসময় নিজেকে বিরত রাখবে।”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে কারো মৃত্যু হবে, তা তোমরা মেনে নেবে না । প্রতিবাদ করতে হবে। কোনো হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা তা চলতে পারে না।

“এমন আইনের শিক্ষা চালু করতে হবে যাতে বাংলাদেশে ক্ষমতাহীনের বঞ্চনা আর দীর্ঘায়িত না হয়। এমন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের জন্ম যেন এ বিভাগ থেকে না হয় যে বলবে- আমি তো নির্দেশ দিইনি, গুলি কে চালাল?”

আলোচনা পর্বে এ কে খান ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি সেক্রেটারি সালাউদ্দিন কাশেম খান, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, আইন কমিশনের সদস্য ও চবি আইন অনুষদের প্রতিষ্ঠাতা ডিন এম শাহ আলম,  চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ নূরুল হুদা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।