কথিত ফকিরের আস্তানায় দুইজনকে গলা কেটে হত্যা

চট্টগ্রামে কথিত এক ফকিরের আস্তানায় ঢুকে ফকিরসহ দুইজনকে গলা কেটে হত্যা করে বোমা ফাটিয়ে পালিয়েছে খুনি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2015, 09:36 AM
Updated : 4 Sept 2015, 05:17 PM

শুক্রবার দুপুরে বায়েজিদ থানার শেরশাহ বাংলাবাজারের পূর্বাচল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ- কমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ জানান।  

নিহতরা হলেন- ফকির রহমত উল্লাহ ওরফে লেংটা মামু (৬০) ও খাদেম মো. আব্দুল কাদের (৩০)।

রহমত উল্লাহ ওরফে লেংটা মামুর ‘আস্তানাটি’ স্থানীয় লোকজনের কাছে ‘লেংটা মামুর মাজার’ নামে পরিচিত।

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সন্ধ্যায় ওই এলাকা থেকে আবদুল মান্নান মনা (৪০) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে বলে উপ-কমিশনার পরিতোষ জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে কি না তা খতিয়ে দেখতে তাকে আটক করা হয়েছে।”

হত্যাকাণ্ডের পর নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফকিরের সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল কি-না, অথবা ‘মাজারবিরোধী গোষ্ঠীর’ কেউ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কি না- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, দুপুরে জুমার নামাজের সময় এক যুবক এসে রহমত ও তার খাদেমকে খুন করে পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে জামতলা হয়ে পালিয়ে যায়।

জোড়া খুনের পর বোমা ফাটিয়ে পালিয়ে যায় হত্যাকারী। স্থানীয় এক বাসিন্দার হাতে বিস্ফোরিত সেই বোমার অংশ বিশেষ।

এ সময় স্থানীয় লোকজন তাকে ধাওয়া করলে সে দুটি হাতবোমা ফাটায়। বোমার স্প্লিন্টারে মো. মনির (২৬) ও মো. মুন্না (৭) নামে দুই জন আহত হন।

আহত মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নামাজ শেষে বাসায় ফেরার সময় তিনি এক যুবককে ছুরি ও একটি ব্যাগ হাতে হেঁটে আসতে দেখেন।

“লোকজন তখন চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করলে ওই যুবক দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। আমি রাস্তার মধ্যে তাকে জাপটে ধরতে গেলে সে ব্যাগ থেকে বের করে পর পর দুটি বোমা ফাটায়।”

আনুমানিক ২৭ থেকে ২৮ বছর বয়সী ওই যুবকের পরনে প্যান্ট ও লাল গেঞ্জি ছিল বলে জানান মনির।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, স্থানীয় বাসিন্দারা দুপুরে কাদেরকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

উপ-কমিশনার পরিতোষ ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আস্তানার ভেতরে গলা কাটা ‘লেংটা মামুকে’ শোয়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়। বেলা দেড়টা থেকে পৌনে ২টার মধ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

“প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, ঘুমন্ত অবস্থায় লেংটা মামুকে হত্যা করা হয়েছে। তার খাদেম ‘হত্যাকারীকে’ ধরে ফেললে তাকেও গলায় ছুরি মারা হয়।”

রহমত উল্লাহ ফকিরের ‘আস্তানাটি’ স্থানীয় লোকজনের কাছে ‘লেংটা মামুর মাজার’ নামে পরিচিত।

হত্যাকাণ্ডটি ‘পরিকল্পিত’ মন্তব্য করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “লেংটা মামুর গলার ডান দিকে ছুরি মারা হয়েছে। শরীরে অন্য কোনো স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।”

এদিকে ওই আস্তানার ভেতর থেকে একটি লাল-সবুজ-কালো গেঞ্জি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যুবকটি গেঞ্জি পাল্টে চলে যায় বলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) শরীফুল ইসলামের ধারণা। 

স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহাবউদ্দিন ওই আস্তানায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, গত ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে রহমত উল্লাহ ওই এলাকায় থাকেন। খাদেম কাদেরও তার সঙ্গে আছেন প্রায় ১০ বছর ধরে।

আগে পাশের একটি টিনের চালা দেওয়া বেড়ার ঘরে থাকলেও চার-পাঁচ বছর আগে তারা পাকা ঘরে উঠে আসেন।

প্রতি বৃহস্পতিবার ওই আস্তানায় জিকির ও মাহফিল হতো জানিয়ে শাহাবউদ্দিন বলেন, “এলাকার বাইরে থেকেও অনেক লোক মাহফিলে আসতেন।”

ফকির ‘লেংটা মামু’ খুন হওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন এক ভক্ত।

দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আস্তানার মেঝেতে প্লাস্টিকের মাদুর বিছানো, পাশে রক্তের দাগ। আস্তানার বাইরেও ছোপ ছোপ রক্ত দেখা যায়। তবে আস্তানার দানবাক্স দেখে অক্ষতই মনে হয়।

আস্তানার বাইরে লেংটা মামুর ভক্ত অনেক নারী-পুরুষকে ভিড় করে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়।

নগর পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এবং র‌্যাব কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।