মামলাজট নয়, ‘ব্যাকলগ’ আছে: প্রধান বিচারপতি

দেশে ৩১ লাখ মামলা বিচারাধীন থাকলেও একে ‘মামলাজট’ বলতে রাজি নন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2015, 04:47 PM
Updated : 2 Sept 2015, 07:34 PM

বুধবার চট্টগ্রামে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “৩১ লাখ মামলা আছে। অনেকে বলেন এটি মামলার জট। এটা সত্যের অপলাপ। আমাদের কাছে এটা মামলাজট না, এটা ব্যাকলগ। এরমধ্যে পাঁচ-ছয় লাখ মামলা ব্যাকলগ।

“ধরেন, মহানগর দায়রা জজ আদালতে আজ ৫০টা মামলা হল। উনি যদি ৪০টা নিষ্পত্তি করেন, ১০টা বাকি। সেগুলো ব্যাকলগ। এ হিসাবে খুব বেশি ব্যাকলগ নেই।”

চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় আইনজীবী ভবনে ‘জেলা আইনজীবী সমিতি’ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি।

তিনি বলেন, “কিছু মহল থেকে বলা হচ্ছে বিচার বিভাগ এত মামলার ভার নিতে পারছে না। এ মামলা খুব বেশি না। ভারতের তুলনায় অনেক কম।

“প্রতি দশ লাখ মানুষের তুলনায় গড়ে যে বিচারক থাকার কথা তার অর্ধেক আমাদের আছে। পৃথিবীতে সবচেয়ে কম বিচারক আমাদের দেশে। তারপরও আমরা দেখিয়ে দিয়েছি কম বিচারক নিয়ে কীভাবে মামলা নিষ্পত্তি করতে হয়।”

প্রধান বিচারপতি বলেন, বিভিন্ন সময় নতুন গেজেট করে যেমন ভেস্টেড প্রপার্টি, সেটেলমেন্ট মামলা- এরকম লাখ লাখ মামলা চাপিয়ে দেওয়া হয়।

“এখনই বিচারক নিয়োগ করলে সে তো এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবে না। এসব মামলা নিষ্পত্তিতে তার ১০ থেকে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা লাগবে। বিভিন্ন আইন করে আমাদের উপর মামলা চাপানো হচ্ছে।”

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা (ফাইল ছবি)

মামলার সংখ্যা কমাতে দায়িত্ব গ্রহণের পর আমূল পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছেন জানিয়ে এসকে সিনহা বলেন, ২০১৪ সালে যত মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, এখন তার তুলনায় ৩০-৪০ ভাগ বেশি নিষ্পত্তি হচ্ছে।

“৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে গত বছরের তুলনায় ৫০-৬০ ভাগ বেশি মামলা নিষ্পত্তি হবে।”

অনেক বিচারককে বসার জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমান বিচারক দিয়েই ২-৩ বছরে ৩১ লাখ মামলা নিষ্পত্তি সম্ভব, যদি কোর্ট দেওয়া হয়।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে এস কে সিনহা বলেন, “কিছু বুদ্ধিজীবী, কিছু গণমাধ্যম বলে বিচারকরাই আইনের শাসন নিশ্চিত করবে। এটা সত্য না।

“বিজ্ঞ আইনজীবীদের সহযোগিতা ছাড়া বিচারকরা বিচার শেষ করতে পারবে না। আপনারা সাক্ষ্য যোগাড় করে দেন। তার ভিত্তিতেই আমরা বিচার করি।”

মামলা পরিচালনার কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হবে জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, সিলেটে ডিজিটালাইজেশন প্রায় শেষ পর্যায়ে।

“সাক্ষী যা বক্তব্য দেবে তা ডিসপ্লেতে উঠবে। আইনজীবীরা দেখতে পাবেন। এরপর চট্টগ্রাম ও ঢাকা কোর্টে ডিজিটালাইজেশন করা হবে।”

এর আগে সকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে কয়েকটি আদালতে বিচারিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন প্রধান বিচারপতি।

বক্তব্যে এ বিষয়ে তিনি বলেন, “দেখলাম ১৯৯৪-৯৫ সালের মামলা আছে। আসামি, সাক্ষী হয়ত মারা গেছেন। যত দ্রুত পারা যায় নিষ্পত্তি করে দেবেন। ৩১ লাখ মামলার বদনাম ঘুচাতে চাই।”

আইনের শাসনের মাধ্যমে কল্যাণকর রাষ্ট্র

বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জুডিশিয়াল কনফারেন্সে প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব।

এজন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আইনজীবী, পেশাজীবী ও জনগণ সবার সহেযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এস কে সিনহা বলেন, “সরকারি খাস জমি, নদী-নালা দখল আর দুর্নীতিতে সব আমরা শেষ করে দিচ্ছি। সাগর পথে চোরাচালান হচ্ছে।

“দুর্নীতি যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ২০১৮-১৯ সালের মধ্যেই মধ্য আয়ের দেশ হওয়া সম্ভব।”

স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, এখন পরিবেশ বিষয়ে সবাই আগ্রহী।

“সীতাকুণ্ডে শিপ ইয়ার্ডের জন্য বন বিভাগের জমি নষ্ট করা হচ্ছে। বনের জমি কোনোভাবেই যেন শিপ ইয়ার্ডের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়া না হয়।”

এছাড়া মেডিকেল সনদ যথাযথভাবে প্রদান, জখমের সুনির্দিষ্ট উল্লেখ, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন যথাযথভাবে তৈরি করা, এফআইআর সঠিকভাবে করা, সাক্ষ্যগ্রহণ দ্রুততম সময়ে শেষ করা, জব্দ তালিকা প্রণয়ন এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের জেলা জজ নুরুল হুদা, মহানগর দায়রা জজ মো. শাহে নুর, বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ, ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল মন্ডল, জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, জেলা পিপি আবুল হাশেম, মহানগর পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মুজিবুল হক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল গণি, র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।