ম্যাচের আগের দিন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, টপ অর্ডারে ব্যাট করবেন ডি ভিলিয়ার্স। ফতুল্লায় প্রস্তুতি ম্যাচে ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। তবু দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানকে প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও ওপেনিংয়ে নামাবে দক্ষিণ আফ্রিকা, এটা অনেকের কাছেই ছিল অপ্রত্যাশিত।
রোববার ডি ভিলিয়ার্সকে ওপেনিংয়ে দেখে চমকে গিয়েছিলেন তাই অনেকেই। একটু অবাক হয়েছিলেন আরাফাত সানিও। রোববার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের প্রথম ওভারটি করেছিলেন তিনিই। বল করার জন্য যখন গা গরম করছেন সানি, স্ট্রাইকে দেখলেন তখন ডি ভিলিয়ার্সকে। দেখে চমকে গিয়েছিলেন, তবে ভড়কে যাননি।
“আমি জানতাম যে আমিই প্রথম ওভার করব। কিন্তু ডি ভিলিয়ার্সকে শুরুতেই পাব, এটা অপ্রত্যাশিত ছিল। তবে নার্ভাস হইনি। আমার বিশ্বাস ছিল, নিজের মত বোলিং করতে পারলে ভয়ের কিছু নেই।”
এমনিতে নতুন বল হাতে নেওয়া বা পাওয়ার প্লেতে বোলিং করা নতুন কিছু নয় সানির জন্য। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে আগেও করেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে করে আসছেন বছরের পর বছর ধরে। তার পরও, স্ট্রাইকে ডি ভিলিয়ার্সের মত কেউ থাকলে পেটে প্রজাপ্রতির নাচন অনুভব করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। নিজের দিনে বিশ্বের সেরা বোলিং আক্রমণকেও তুড়ি বাজিয়ে উড়িয়ে দেন ডি ভিলিয়ার্স।
তবে সানির দাবি, ডি ভিলিয়ার্সের নাম তার স্নায়ুকে দুর্বল করেনি।
“ডি ভিলিয়ার্স কি করতে পারে, এসব নিয়ে আমি ভাবিনি। জায়গামত বল ফেলতে পারলে গেইল হোক বা ডি ভিলিয়ার্স বা অন্য যে কেউ, কোনো ব্যাটসম্যানই সহজে খেলতে পারে না।”
ওভারের প্রথম চার বলেই ডি ভিলিয়ার্সকে কোনো রান নিতে দেননি সানি। পঞ্চম বলে লফটেড শটে দুটি রান নেন ডি ভিলিয়ার্স। ওভারের শেষ বলে একটু থেমে আসা লেংথ বলে আবার লফটেড শট খেলতে গিয়ে কাভার পয়েন্টে মাশরাফির হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
ডি ভিলিয়ার্সকে উইকেটে বেধে রাখা এখন ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। শুধু সময়ের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানদের একজনই নন, ডি ভিলিয়ার্স সবচেয়ে পরিপুর্ণ ব্যাটসম্যানও। সব ধরনের কন্ডিশন-উইকেটে, সব পরিস্থিতিতে খেলতে পারেন। ক্রিকেট বইয়ের সব শট যেমন আছে তার হাতে, উদ্ভাবনী সব শট খেলতেও তার জুড়ি নেই।
এজন্যই খুব বেশি পরিকল্পনার জটিল পথে হাঁটেননি সানি। তার ভাবনা ছিল সহজ, সাধারণ।
“আমি সবসময়ই রান বাঁচানোর বোলিং করি। ডি ভিলিয়ার্সের বিপক্ষেও এটিই ছিল পরিকল্পনা। ওকে সহজে রান করতে না দিয়ে চাপে ফেলা। চেয়েছি একদমই জায়গা না দিতে, উইকেট টু উইকেট বল রাখতে। অন্য আরেকদিন হয়ত এসবে কাজ হবে না, ডি ভিলিয়ার্স সফল হবে। কিন্তু কাল (রোববার) এতেই কাজ হয়েছে।”
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কেবল পায়ের নিচে শক্ত জমিন খুঁজে পেতে শুরু করেছেন সানি। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি মিলে খেলেছেন ১৭টি ম্যাচ, উইকেট ২৮টি। ক্যারিয়ারের শুরুতেই পেয়েছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা, তিলকরত্নে দিলশানের উইকেট। কিন্তু ডি ভিলিয়ার্সের উইকেটকেই সানি বলছেন এখনও পর্যন্ত তার সেরা অর্জন।
“সাঙ্গাকারার উইকেট পেয়ে দারুণ লেগেছিল। গ্রেট ব্যাটসম্যান। কিন্তু ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাপারটিই আলাদা। এর উইকেটই এখনও পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে আমার সেরা।”
নিজের দারুণ পারফরম্যান্সের তৃপ্তি অবশ্য সানির অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে দল বাজে ভাবে হারায়। পরের মাচে তাই দলের হাসিতে খুঁজে নিতে চান নিজের খুশি।
“আমরা সবাই দলের জন্যই খেলি। দল হারলে তাই নিজে ভালো করা না করার মূল্য বেশি নেই। আশা করি, ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের ম্যাচে আমরা কাজে লাগাব।”