সাহস নিয়ে দ. আফ্রিকার মুখোমুখি বাংলাদেশ

ভারত-পাকিস্তানকে হারানোর পর বাংলাদেশ ওয়ানডেতে এখন সমীহ করার মতো দল হলেও টি-টোয়েন্টিতে তা বলা যাচ্ছে না মোটেও। ক্রিকেটের স্বল্প দৈর্ঘ্যের এই সংস্করণে পরিণত হতে অনেক পরীক্ষায় উতরাতে হবে মাশরাফি বাহিনীকে, যার প্রথমটিতে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা। অতিথিদের বিপক্ষে বিব্রতকর রেকর্ডও যখন প্রতিপক্ষ, তখন মাশরাফিদের অস্ত্র সাহস আর মনোবল।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2015, 03:13 PM
Updated : 5 July 2015, 05:51 AM

রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বেলা একটায় প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা।  

কাগজে-কলমে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। ইতিহাসও মাশরাফিদের বিপেক্ষই। অতিথিদের বিপক্ষে সব ধরনের ক্রিকেটে ২৪ ম্যাচ খেলে জয় মাত্র একটিতে, সেও আট বছর আগে। 

টেস্ট ও ওয়ানডের চেয়ে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে বেশি সাফল্য পেলে স্বাভাবিকই হত। কিন্তু উল্টো এই সংস্করণেই টাইগারদের রেকর্ড সবচেয়ে খারাপ। এর মূল কারণ অবশ্যই বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়া। আন্তর্জাতিক ম্যাচ বছরে সচরাচর দুই-তিনটার বেশি খেলার সুযোগ মেলে না। আর ২০১৩ সালের পর থেকে নেই কোনো ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট।

বাংলাদেশ টেস্ট খেলুড়ে অন্য দলগুলোর চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। এই ব্যবধান ঘুচাতে বেশি ম্যাচ খেলার পরামর্শ দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি। বেশি ম্যাচ দূরে থাক, কোনো ম্যাচ না খেলিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নামিয়ে দিতে হচ্ছে সম্ভাবনাময়দের। আন্তর্জাতিক ম্যাচ দিয়েই টি-টোয়েন্টি অভিষেক ঘটাতে হচ্ছে তরুণদের! পাকিস্তানের বিপক্ষে যা হয়েছে মুস্তাফিজুর রহমানের ক্ষেত্রে, একই অভিজ্ঞতা হতে পারে জুবায়ের হোসেনেরও।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা যা, দক্ষিণ আফ্রিকার তাই সবচেয়ে বড় শক্তি- অভিজ্ঞতা। এবি ডি ভিলিয়ার্স, দু প্লেসি, জেপি দুমিনি, ডেভিড মিলারদের আছে অনেক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা। ওয়েইন পার্নেল, রাইলি রুশো, কুইন্টন ডি ককরাও খুব পিছিয়ে নেই।

২০১১ সালের বিশ্বকাপের পর এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কোনো ম্যাচ খেলবে বাংলদেশ। চার বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে স্বাগতিক দলে। এই সময়ে দলে আসা স্বাগতিকদের অনেক ক্রিকেটার সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই অতিথিদের। এই অজানাকেই সবচেয়ে বড় ভয় দক্ষিণ আফ্রিকার।

অতিথিদের ভয় আরও বাড়াতে সতীর্থদের বুক ভরা সাহস আর বুদ্ধি দিয়ে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার কথা বলেছেন মাশরাফি। অভিজ্ঞতার ঘাটতি মনোবল দিয়ে পুষিয়ে নিতে চান নড়াইল এক্সপ্রেস।

“দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। ওদের ৮/১০ ক্রিকেটার আছে যারা প্রতিনিয়ত সারা বিশ্বে খেলছে। ওদের ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব বিভাগই ভালো। ফিল্ডিংয়ে ১৫/২০ রান আটকাতে পারে, বোলিং অসাধারণ। ব্যাটিংয়ে ওদের দুই-তিন জন ব্যাটসম্যান আছে যারা একাই ম্যাচ জেতাতে পারে, কিন্তু দিন শেষে ওরাও কিন্তু মানুষ।”

সে অর্থে কোনো টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ নেই বাংলাদেশের। ম্যাচ জেতার জন্য দলগত পারফরম্যান্সের দিকেই নির্ভর করতে হয় তাদের। আর অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে এগিয়ে থাকা সাকিব আল হাসানের দিকে তাকিয়ে থাকবে তারা।

ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু চান মাশরাফি। তামিম ইকবাল-সৌম্য সরকারের সেই সামর্থ্য আছে। ছন্দে থাকা এই দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের যে কোনো একজন বড় ইনিংস খেললে লড়াই করার মতো পুঁজি পাওয়া সহজ হবে স্বাগতিকদের জন্য।

টি-টোয়েন্টিতে তিন নম্বরে ব্যাট করেন সাকিব, এরপর দলের ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহিম আসবেন। সাব্বির রহমান-নাসির হোসেনের সামর্থ্য আছে শেষটা রাঙিয়ে দেওয়ার। বিস্ফোরক সব ব্যাটসম্যান আছে স্বাগতিকদের, প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর তারা চড়াও হতে পারলে মাশরাফির বিশ্বাস, রোমাঞ্চকর লড়াই দেখা যেতে পারে মিরপুরে।

“আমরা যদি দল হিসেবে ভালো খেলতে পারি এবং ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি তাহলে আমার বিশ্বাস আমরা ভালো করতে পারবো। ইতিবাচক দিক হচ্ছে সাহস নিয়ে খেলতে পারা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট হচ্ছে সাহস নিয়ে খেলা, আর এখানে আপনি আপনার বুদ্ধি খাটাতে পারবেন।”

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বদলাবে বাংলাদেশের অস্ত্র। অতিথিদের বিপক্ষে নিজেদের শক্তি অনুযায়ী খেলবেন বলে জানিয়েছেন মাশরাফি। দু প্লেসিদের বিপক্ষে নিশ্চিতভাবেই তাদের শক্তি হবে স্পিন। সাকিবের সঙ্গে আরাফাত সানি ও সোহাগ গাজী থাকবেন স্পিন আক্রমণে। প্রয়োজনে নাসির-সাব্বিরের সহয়তাও পাবেন তারা।

পেসাররা সাম্প্রতিক সময়ে খুব ভালো করলেও মাশরাফির কাছে এখনও বাংলাদেশের মূল শক্তি স্পিন, “শেষ দশ/পনের বছর ধরে আমরা স্পিনের উপর নির্ভর করে আসছি। জিম্বাবুয়ে সিরিজে পেস বোলিংয়ে কিছুটা আমরা পজিটিভ চিন্তা করেছি, সুফলটা এখন পাচ্ছি। শক্তি আমাদের স্পিনেই।”

মাশরাফির সঙ্গে দ্বিতীয় পেসার হিসেবে খেলতে পারেন মুস্তাফিজুর রহমান। সেক্ষত্রে বাইরে থাকতে হবে রুবেল হোসেনকে।

প্রস্তুতি ম্যাচে ৮ বল খেলে এক রান করা রনি তালুকদারের অপেক্ষা আরও বাড়ছে। কিপিং না করলে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলতে পারেন লিটন দাস। ভারতের বিপক্ষে আগের সিরিজেই টেস্ট ও ওয়ানডে অভিষেক হয় এই তরুণের।

বিধ্বংসী ডি ভিলিয়ার্স বা ‘কিলার’ মিলার সমৃদ্ধ দলকে হারাতে বোলারদেরই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য আছে নিজেদের ইনিংস শেষেই ম্যাচের ফলাফল মোটামুটি নিশ্চিত করে ফেলার। তাই বোলাদের কাছে সামর্থ্যের শেষ বিন্দুটুকুও চান মাশরাফি।

“বোলাররা টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ জেতাতে পারে। আমরা যদি তাদের ১৫০/১৬০ এর ভেতর রাখতে পারি তাহলে ব্যাটসম্যানদের সুযোগটা থাকবে।”

বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ মেলে না বলে টি-টোয়েন্টির কম্বিনেশন ঠিক করতে এই সিরিজ বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে। এখনই বিশ্বকাপ ভাবনা মাথায় আনতে চাননি অধিনায়ক, “বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কম্বিনেশন ঠিক করা যেতে পারে। অতিরিক্ত চিন্তা না করে, স্বাভাবিক খেলা খেলি, খেলাকে উপভোগ করি-এটাই চাই।”