দলে ডাক পেয়ে অবাক সোহাগ

দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের জন্য বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের প্রথম থেকেই ছিলেন সোহাগ গাজী। টি-টোয়েন্টির দলে ডাক পেয়ে তবুও অবাক হয়েছেন এই অফ স্পিনার!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2015, 04:44 PM
Updated : 1 July 2015, 04:44 PM

প্রায় ১০ মাস পর আবার বাংলাদেশ দলে ফিরে সোহাগ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, টি-টোয়েন্টিতে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি ফিরতে চান ওয়ানডে ও টেস্ট দলেও।

সোহাগ টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ খেলেছেন গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। আর দেশের জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলেছেন গত অগাস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের তৃতীয় ওয়ানডেতে।

দক্ষিণ আফ্রিকা দলে বেশ কজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আছেন বলে এবার শোনা যাচ্ছিল একজন স্পেশালিস্ট অফ স্পিনার দলে রাখা হবে। সেই নামটি হবে ‘সোহাগ’, ভাবতে পারেননি তিনি নিজেই।

“সত্যি বলতে, দলে ডাক পেয়ে চমকে গেছি। ফেরার আশা তো সব সময়ই করতাম। কিন্তু এখনই এতটা আশা করিনি। দল এত ভালো করছিল, এই সময় দলে পরিবর্তন হবে ভাবিনি। অপ্রত্যাশিত ছিল বলেই হয়তো বেশি খুশি লাগছে। আশা করি, নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিতে পারব।”

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সোহাগের আবির্ভাব ছিল সাড়া জাগানিয়া। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একই ম্যাচে হ্যাটট্রিক ও শতক করে প্রথম আলাদা করে নজর কেড়েছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফরম্যান্সে দ্রুতই সুযোগ মিলেছিল বাংলাদেশ দলে। সোহাগকে পেয়ে থেমেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের দীর্ঘদিনের এক হাহাকার। বাঁহাতি স্পিনারদের দলে অবশেষে পাওয়া গিয়েছিল একজন অফ স্পিনার।

সোহাগকে নিয়ে জেগে ওঠা সেই রোমাঞ্চ খুব দ্রুতই ছুঁয়েছিল নতুন উচ্চতা। ২০১২ সালের নভেম্বরে অভিষেক টেস্টেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। অভিষেক ওয়ানডেতে ৪ উইকেট। পুরো সিরিজে ক্রিস গেইলকে একদম বোতলবন্দি করে রেখে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন ক্রিকেট বিশ্বে। পারফরম্যান্সের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিলেন পরের সিরিজগুলোতেও। ২০১৩ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে গড়লেন ইতিহাস। একই টেস্টে করলেন শতক ও হ্যাটট্রিক, টেস্ট ক্রিকেটের দীর্ঘ ইতিহাসে যেটির নজির আর নেই একটিও।

উত্থানের মতো সোহাগের পতনটাও ছিল নাটকীয়। বোলিংয়ে হঠাৎই ধার হারিয়ে ফেলেছিলেন। গত আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রশ্নবিদ্ধ হলো বোলিং অ্যাকশন। সেপ্টেম্বরে অ্যাকশনের পরীক্ষা দিলেন কার্ডিফে। যেটির ফলাফল, অবৈধ অ্যাকশনের কারণে নিষিদ্ধ হলো বোলিং। পরে অ্যাকশন সামান্য বদলে আবার পরীক্ষা দিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে অনুমতি পেলেন বোলিংয়ের।

নতুন অ্যাকশনের সোহাগের ওপর ভরসা করতে পারছিলেন না নির্বাচকেরা। একটু সময় নিচ্ছিলেন পরখ করে দেখার জন্য। অবশেষে ফুরিয়েছে সোহাগের অপেক্ষা। তার বিশ্বাস, নতুন অ্যাকশনেও বোলিংয়ে থাকবে সেই শুরুর ধার।

“অ্যাকশন খুব বেশি বদলাতে হয়নি। শুধু পায়ের অবস্থান একটু বদলেছি। নতুন অ্যাকশনে অনেক দিনই হলো বোলিং করছি, ঘরোয়া ক্রিকেটে সফলও হয়েছি যথেষ্ট। আমি তো বলব, আগের চেয়েও বরং ভালো হয়েছে এখন।”

রাতারাতি পাদপ্রদীপের আলো থেকে প্রায় একদমই আড়ালে চলে যাওয়া সোহাগকে শিখিয়েছে কঠিন বাস্তবতা।

“কতটা যে খারাপ লেগেছে, বলে বোঝানো যাবে না। কিছুই ভালো লাগত না। সব সময় কেমন খালি খালি লাগত। টিভিতে বা মাঠের বাইরে থেকে খেলা দেখতাম আর প্রচণ্ড খারাপ লাগত। ওই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। এক কথায় বললে, ভীষণ কষ্টের সময় গেছে, ভীষণ কষ্ট!’’

‘অভিশপ্ত’ ওই সময়টায় আর ফিরে যেতে চান না ২৩ বছর বয়সী অফ স্পিনার।

“গত কয়েক মাসে আমাদের দল দুর্দান্ত পারফর্ম করছে। দলের জন্য গর্ব হতো, নিজের জন্য কষ্ট। এই সময়ই আমি দলে নেই! মানতেই পারতাম না। হতাশ লেগেছে, জেদও চেপেছে দলে ফেরার।”

প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ বলেছেন, সোহাগের ফেরায় বোলিংয়ের পাশাপাশি সোহাগের ব্যাটিংটাকেও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। গত জাতীয় লিগে ৬ ম্যাচে ২৫৮ রান করেছিলেন, উইকেট নিয়েছিলেন ২৮টি। বিসিএলে তিন ম্যাচে উইকেট ৯টি, টানা দুই ম্যাচে করেছিলেন শতক।

সোহাগ অবশ্য অতকিছু ভাবতে চান না। ক্যারিয়ারের নতুন শুরুর পথে আর পেছন ফিরে তাকাতে চান না।

“বোলিং করি বা ব্যাটিং, আমি শুধু দলে অবদান রেখে যেতে চাই। দলের চাওয়া পূরণ করতে চাই। কারণ শুধু এই টি-টোয়েন্টি সিরিজই নয়, আমার দৃষ্টি আরও অনেক দূরে। অনেক দিন বাংলাদেশ দলে খেলতে চাই। আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই সামনে।”