অতি লোভ ভালো নয়: মাশরাফি

‘বাংলাওয়াশ’ না হওয়ায় চারপাশে আক্ষেপ আর হাহাকারে অবাক মাশরাফি বিন মুর্তজা। অতিরিক্ত প্রত্যাশা না করতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2015, 11:17 AM
Updated : 26 June 2015, 04:18 AM

ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের তৃপ্তি নিয়ে হোটেল ছেড়েছেন মাশরাফি। এই জয়কে তিনি দেখছেন নিজের অধিনায়কত্বের সেরা অর্জন হিসেবে। কিন্তু এমন অর্জনের পরও ঠিক মানসিক শান্তি পাচ্ছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। ‌‘বাংলাওয়াশ’ না হওয়ায় চারপাশে যেসব আক্ষেপ, আলোচনা দেখছেন আর শুনছেন, তাতে একই সঙ্গে অবাক ও হতাশ মাশরাফি।

টেলিফোনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারতের বিপক্ষে সিরিজের আগে সবাই বলাবলি করছিল, অন্তত একটা জয় চাই। ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ মিলিয়ে দুটি জয় পেলেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পারব আমরা; সেটুকু হলেই অনেক। সেখানে আমরা প্রথম দুই ম্যাচেই সিরিজ জিতে গেলাম। অথচ শেষ ম্যাচের পর থেকে সব জায়গাতেই দেখছি বাংলাওয়াশ হলো না, এই আলোচনা। আমাদের সিরিজ জয়ের চেয়ে বাংলাওয়াশ না হওয়ার আলোচনাই বেশি।”

‘বাংলাওয়াশ’ ব্যাপারটি নিয়ে অতি বাড়াবাড়িতেও বিরক্তি মাশরাফির কণ্ঠে।

“কথায় কথায় ‘বাংলাওয়াশ’, ‘বাংলাওয়াশ’ করা ঠিক নয়। সব সিরিজেই তো আর আমরা সব ম্যাচ জিততে পারব না! সবসময় বাংলাওয়াশের প্রত্যাশা করা একটা চাপও। আমাদের প্রতিপক্ষও দলও জিততে মাঠে নামে; তারাও জিততে পারে, এটা মাথায় রাখা উচিত সবার।”

বাংলাদেশ অধিনায়কের মতে, ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশার সীমা বাড়া উচিত আস্তে আস্তে। আর শুধু সমর্থকদের কাছ থেকেই নয়, সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকেও এই ব্যাপারে একটু সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করেন মাশরাফি।

“মিডিয়ারও এই ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখা উচিত। মিডিয়ায় যখন এসব বেশি বেশি লেখা বা বলা হয়… এমনকি ম্যাচের পরও যখন বাংলাওয়াশ হলো না বলে লেখালেখি বা আলোচনা হয়, তখন তা আসলে মানুষদের প্রভাবিত করে।”

বুধবার তৃতীয় ওয়ানডে শেষে সন্তানদের সঙ্গ পেতে সকালের অপেক্ষাও করেননি মাশরাফি। হোটেলে ফিরে শেষ রাতে সেহেরি খেয়েই বাসায় ফিরে যান তিনি। মেয়েটা তার একদম বাবা ন্যাওটা। ছোট ছেলেটাও বাবাকে চিনতে শুরু করেছে। দ্রুত ফিরে গেছেন বাসায়। কিন্তু পরিবারিক আবহের প্রশান্তির মাঝেও মনটা তার একটু অস্থির চারপাশে এই ‘বাংলাওয়াশ’ না হওয়া নিয়ে হাহাকার দেখে।

বাংলাদেশ অধিনায়ক তাই সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন বাস্তবতা।

“অনেকের কথা শুনে বা দেখে মনে হচ্ছে, আমরা বিশ্বজয় করে ফেলেছি। বাস্তবতা হলো, এই টানা জয়ের পরও আমরা কিন্তু এখনও র‌্যাঙ্কিংয়ের সাতে! আবার দেখুন, আমাদের মতো র‌্যাঙ্কিংয়ের অনেক নিচে থাকা দলের কাছে হারের পরও ভারত এখনও দুইয়ে। কারণ ওরা অনেকদিন থেকে জিতছে। আমরা যদি লম্বা সময় ধরে টানা জিততে পারি, তাহলেই কেবল ওই জাগাটায় যেতে পারি।”

একটি সিরিজ শেষ না হতে না হতেই আরেকটি সিরিজ দোরগোড়ায়। মাশরাফি জানেন, লোকের প্রত্যাশার ঘোড়া ছুটবে আবার। অধিনায়ক তাই আগেই অনুরোধ করছেন সেটায় লাগাম দিতে।

“একটা কথা মনে রাখা উচিত সবার, অতি লোভ কখনওই ভালো নয়। এটা ওপরওয়ালাও পছন্দ করেন না। আর ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বললে, দলের তরুণদের ওপরও এটা বাজে প্রভাব ফেলতে পারে। অবশ্যই আমরা সব ম্যাচ জিততে চাই এবং জয়ের জন্য সর্বস্ব উজার করে দেই। কিন্তু সব সময় সব ম্যাচ আমরা জিতব না, এটাও ভুলে যাওযা উচিত নয়।”