ভারতকে গুঁড়িয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

মুস্তাফিজুর রহমান ছাড়িয়ে গেলেন আগের ম্যাচের স্বপ্নের অভিষেককে। ভয়হীন ব্যাটিং চালিয়ে গেলেন সৌম্য-সাকিব-সাব্বিররাও। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬ উইকেটের সহজ জয়ে প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতে নিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2015, 08:36 AM
Updated : 21 June 2015, 09:18 PM

টানা পঞ্চম এই জয়ে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গাও নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের।

ভারত ইনিংসের ৪৪তম ওভারে বৃষ্টি নামলে প্রায় দুই ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। তার আগেই অবশ্য মুস্তাফিজের তোপে আট উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত মহেন্দ্র সিং ধোনির দল।

আবার খেলা শুরু হলে ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪৭ ওভারে। কিন্তু ৪৫ ওভারে ২০০ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত। ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্য এক রান কমে দাঁড়ায় ২০০ রান। ৩৮ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে অনায়াসে এই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

দেশের মাটিতে ওয়ানডেতে এটি মাশরাফি বিন মুর্তজাদের টানা দশম জয়।

মাঝারি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের শুরুতেই তামিম ইকবাল আউট হলেও বাংলাদেশকে ভিত গড়ে দেন দুই তরুণ লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। এই দুই জনের অর্ধশত রানের জুটিতে ভর করে জয়ের পথে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা।

দুই তরুণের আউটের পর মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৫৪ রানের জুটিতে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন সাকিব।

রান আউট হয়ে মুশফিক ফিরে গেলেও অবিচল ছিলেন টানা দ্বিতীয় অর্ধশতক পাওয়া সাকিব। অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে সাব্বির রহমানের সঙ্গে ৪৮ রানের জুটি গড়ে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয় নিশ্চিত করেন টানা দ্বিতীয় ম্যাচে অর্ধশতক করা এই অলরাউন্ডার।

সর্বোচ্চ ৫১ রান করা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ৬২ বলের ইনিংসটি ৫টি চার সমৃদ্ধ।

এর আগে ভারতকে গুঁড়িয়ে দেন টানা দুই ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখানো মুস্তাফিজ। প্রথম ওভারেই তিনি রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে দিলেও শিখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলির ৭৪ রানের জুটিতে ভর করে ২ উইকেটে ১০৯ রানে পৌঁছে যায় ভারত। 

ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পুরো ১০ ওভার বল করা নাসির হোসেন কোহলি ও ধাওয়ানকে ফেরানোর পর রুবেল হোসেন শূন্য রানে ফেরান অম্বাতি রাইডুকে। 

নাসির, রুবেলের দারুণ বোলিংয়ে ১১০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। সেখান থেকে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও সুরেশ রায়নার ৫৩ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে অতিথিরা।

প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে ৩২ রানে এক উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজ দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেন ভয়ঙ্কর হয়ে। দ্বিতীয় স্পেলে ১১ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতকে গুড়িয়ে দেন এই বাঁহাতি পেসার। তার এই স্পেলেই দিক হারায় অতিথিরা।

ব্যাটিং পাওয়ার প্লের প্রথম ওভারে (৩৬তম) দারুণ এক কাটারে রায়নাকে বিদায় করেন মুস্তাফিজ। এক ওভার বিরতির পর দুর্দান্ত দুই বলে ফিরিয়ে দেন ধোনি ও অক্ষর প্যাটেলকে।

স্লোয়ারে পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে সৌম্যকে সহজ ক্যাচ দেন ভারতের ব্যাটিং ভরসা ধোনি আর এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন দলে ফেরা অক্ষর।

মুস্তাফিজ ও মাশরাফির চমৎকার বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ১৭ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারায় ভারত। এই সময়েই ম্যাচ পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় বাংলাদেশ।   

হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেওয়া অশ্বিনকে পরের ওভারেই ফেরান মুস্তাফিজ। এই উইকেটে ব্রায়ান ভিটোরির পাশে বসেন ১৯ বছর বয়সী এই পেসার। ওয়ানডেতে কেবল এই দুই জনেরই নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে পাঁচ উইকেট করে নেওয়ার কৃতিত্ব আছে।

বৃষ্টির কারণে দুই ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হলে মাত্র ৭ বল টেকে ভারতের ইনিংস। নিজের শেষ বলটি করতে আসেন মুস্তাফিজ। এই বলে রবিন্দ্র জাদেজাকে বোল্ড করে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি।

প্রথম ওয়ানডেতে দলের ৭৯ রানের জয়ে ৫০ রানে ৫ উইকেট নেন মুস্তাফিজ। এবার ৬ উইকেট নিতে খরচ করেন ৪৩ রান। এছাড়া নাসির ও রুবেল দুটি করে উইকেট নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৪৫ ওভারে ২০০ (রোহিত ০, ধাওয়ান ৫৩, কোহলি ২৩, ধোনি ৪৭, রাইডু ০, রায়না ৩৪, জাদেজা ১৯, অক্ষর ০, অশ্বিন ৪, ভুবনেশ্বর ৩, ধবল ২*; মুস্তাফিজ ৬/৪৩, রুবেল ২/২৬, নাসির ২/৩৩)

বাংলাদেশ: ৩৮ ওভারে ২০০/৪ (তামিম ১৩, সৌম্য ৩৪, লিটন ৩৬, মুশফিক ৩১, সাকিব ৫১*, সাব্বির ২২*; অশ্বিন ১/৩২, ধবল ১/৪২, অক্ষর ১/৪৮)