মুখে জয়ের কথা, মনে ড্রয়ের ভাবনা!

লক্ষ্য টেস্ট জয়, অথচ একাদশ ঠাসা ব্যাটসম্যান দিয়ে। ভারত খেলছে তিন পেসার নিয়ে, বাংলাদেশ মাত্র একজন। সাকিব আল হাসানের মতো একজন স্পিনিং অলরাউন্ডার থাকার পরও একাদশে আরও তিন স্পিনার! বাংলাদেশ দলের শরীরী ভাষাতেই নেই জয়ের তৃষ্ণা; ফুটে উঠেছে ড্রয়ের ভাবনা!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2015, 03:47 PM
Updated : 10 June 2015, 03:47 PM

ভারতের উদ্বোধনী জুটির শুরুটা ভালো হওয়ার পর বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল বৃষ্টি। ঘণ্টা চারেকের বৃষ্টি-বিরতি, থিতু হয়ে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যানের আবার নতুন শুরুর যন্ত্রণা। শুরুতে একটু নড়বড়ে থাকার কথা। কিন্তু বিরতির পর প্রথম বলটিই তাইজুল ইসলাম করলেন ফুল টস। পরের বল লেগ স্টাম্পে। ব্যাটসম্যানের জড়তা মুহূর্তেই উধাও!

চাইলে এটিকেই ফতুল্লা টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশ দলের প্রতীকী দৃশ্য ধরে নেওয়া যায়। টেস্ট ম্যাচের জন্য প্রয়োজনীয় একাগ্রতা, নিরবিচ্ছিন্ন মনোযোগ, আক্রমণাত্মক মনোভাব - কোনো কিছুর প্রতিফলন ছিল না মাঠে। অবশ্য ভাবনাই যদি হয় ড্র করা, তাহলে শরীরী ভাষা এমনটাই হওয়ার কথা। বাংলাদেশের ওয়ানডে আর টেস্টের পারফরম্যান্সে এতটা ফারাক থাকার মূল কারণও এটিই। ওয়ানডেতে দলের শরীরী ভাষায় যে বারুদ থাকে, সাদা পোশাকে সেটিই হয়ে যায় উধাও।

ফতুল্লা টেস্টের বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম দিন শেষে ভারত করেছে বিনা উইকেটে ২৩৯। দেড়শ ছুয়েঁছেন শিখর ধাওয়ান, তিন অঙ্ক ছোঁয়ার অপেক্ষায় মুরালি বিজয়।

ম্যাচের আগের দিন চন্দিকা হাথুরুসিংহ জোর দিয়ে বলেছিলেন, এই টেস্টে জিততেই নামবে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ কোচের দাবির প্রতিফলন নেই একাদশ সাজানোয়; নেই প্রথম দিনের পারফরম্যান্সে।

গত কয়েক দিনের আলোচনার পর বাংলাদেশের এক পেসার নিয়ে খেলাটা খুব বড় বিস্ময় হয়ে আসেনি। কিন্তু বিস্ময় হয়ে এসেছে অভিজ্ঞ রুবেল হোসেনকে না নিয়ে মাত্র ২ টেস্ট খেলা শহীদকে খেলানোটা।

কোচের যুক্তি, “রুবেল শতভাগ ফিট নন। ফতুল্লার এই উইকেটে লম্বা সময় বোলিং করলে চোট ফেরার শঙ্কা আছে।” যেন ম্যাচটি যে ফতুল্লায় হবে, সেটি আগে জানতেন না কোচ। আর শতভাগ ফিট না হলে সেই বোলারকে স্কোয়াডে বয়ে বেড়ানো কেন?

এক পেসার নেওয়ার ভাবনা যেহেতু আগে থেকেই আছে, স্পিন নির্ভর বোলিং আক্রমণের পরিরকল্পনাও সেভাবে হওয়া উচিত ছিল। ভিন্ন ঘরানার দুই বাঁহাতি স্পিনার, এক অফ স্পিনার ও এক লেগ স্পিনার-কাগজে কলমে বৈচিত্রময় বোলিং আক্রমণ। কিন্তু ক্রিকেট খেলাটা তো আর কাগজে-কলমে হয় না; মাঠে হয়। সেই মাঠেই স্পিনারদের বোলিংয়ে ছিল না পরিকল্পনার ছাপ।

উইকেট না পড়লে অন্তত আঁটসাঁট বোলিং করে রান আটকে ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলা যায়। কিন্তু টানা এক ওভার ভাল জায়গায় বোলিং করতেই দেখা গেল না কোনো বোলারকে। ভারতের দুই ওপেনার তাই রান তুলেছেন ওভারপ্রতি সাড়ে চার করে। ৫ স্পিনার মিলে ৪২ ওভার বোলিং করলেও মেডেন মাত্র একটি!

মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্ব নিয়ে তো নতুন কিছু বলারই নেই। ধারহীন বোলিংয়ের মতো পরিকল্পনাহীন মাঠ সাজানো। অস্বাভাবিক কোনো জায়গায় ফিল্ডার রেখে ব্যাটসম্যানকে চমকে দেওয়া কিংবা ভিন্ন কিছু করে ব্যাটসম্যানদের একটু ভাবানোর কোনো প্রয়াস ছিল না। সারা দিনে দুটি জোর আবেদনের সময় ছাড়া একটি মুহূর্তের জন্যও অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি ভারতের দুই ব্যাটসম্যানকে। যথারীতি মুশফিকের নেতৃত্বে ছিল সৃষ্টিশীলতার অভাব। শরীরী ভাষায় ম্রিয়মান একটি দলকে উজ্জ্বীবিত করার কোনো মন্ত্রও বুঝি জানা ছিল না অধিনায়কের।

দিনের প্রথম আধ ঘণ্টার পরই মনে হয়েছে, যেন উইকেট তুলে নিতে নয়, উইকেট উপহার পাওয়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। ভাবনায় গলদ থাকলে অবশ্য এমনটাই হওয়ার কথা। ভারত ৫০০-৬০০ রান করবে, এটা মেনে নিয়েই যেন মাঠে নামা। তার পর ভালো ব্যাটিং করে টেস্ট ড্র করার চেষ্টা। শুভাগত হোমের একাদশে থাকাও হয়ত এই কারণেই। আট নম্বরেও একজন ব্যাটসম্যান নিয়ে টেস্ট ড্র করাই লক্ষ্য।

এমনিতে নিজের ভাবনা, কৌশল নিয়ে সবসময় বলিষ্ঠ-কণ্ঠ থাকলেও প্রথম দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে ছিলেন বিস্ময়কর রকমের নার্ভাস। বেশ কবার কথা গুলিয়ে গেল, গুছিয়ে উত্তর দিতে পারলেন না, কথা আটকেও গেল বার বার। মনের কথার সঙ্গে মুখের কথার মিল ছিল না বলেই কি অতটা নার্ভাস ছিলেন কোচ? 

ড্র করাই যদি প্রধান লক্ষ্য হয়, তাহলে সেটি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়ার সাহস থাকা উচিত। কোচ-অধিনায়কের মুখে জয়ের কথা, অথচ মনে ড্রয়ের ভাবনা। এসবে ভুল বার্তা যাওয়ার কথা দলের ক্রিকেটারদের কাছে।