বদলে যাওয়া ইমরুলের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস

দলে প্রত্যাবর্তনের পর বদলে গেছেন ইমরুল কায়েস। অনেক পরিণত আর সাবলীল ব্যাট করে খুলনা টেস্টে নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস গড়েন এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2015, 07:23 AM
Updated : 2 May 2015, 01:59 PM

ইমরুল কায়েসের টেস্ট ক্যারিয়ারটা খুব বড় নয়। সাত বছরে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দেখে ফেলেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তবে চড়াই-উতরাই পেরোনো ইমরুলের টেস্ট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে মধুর সময় হয়ত পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনায় এই সিরিজের প্রথম টেস্টটিই।

প্রথম ইনিংসে ৫১ রান করে আউট হওয়া ইমরুল দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হন ১৫০ রান করে। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি ২৪০ বলে খেলেন তিনি।

জুলফিকার বাবরকে সীমানা ছাড়া করতে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে মারতে যান ইমরুল। টাইমিংয়ের হেরফের হয়ে যাওয়ায় লং অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় তাকে। এর আগে ১৬টি বাউন্ডারি মারেন তিনি। আর তিনবার বল সীমানা পার করেন দড়ির ওপর দিয়ে।

আউট হওয়ার আগে তামিম ইকবালের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটির অনন্য এক রেকর্ড গড়েন ইমরুল। দলের ৩১২ রানে তিনি আউট হওয়ার আগেই টেস্ট ক্রিকেটে কোনো দলের দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী রানের জুটির রেকর্ড হয়ে যায়।

এর আগে আগের দিন ২৬৮ রান তোলার পরই যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটির মালিক হয়ে যান তামিম-ইমরুল।  

অনন্য এই জুটির রেকর্ড উপহার দেওয়ায় ইমরুলের ক্যারিয়ার-সেরা ইনিংসটির অবদান অনেক। অথচ অনেক চাপ নিয়েই তামিমের সঙ্গে ব্যাট করতে নেমেছিলেন ইমরুল।

প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রানের বড় লিড নেয় পাকিস্তান। হারের শঙ্কা চোখ রাঙাচ্ছিল বাংলাদেশকে। অপরিসীম এই চাপ নিয়ে খেলতে নেমে অসাধারণ ব্যাটিং করেন তামিম-ইমরুল। বাংলাদেশের ম্যাচ বাঁচানোর ভিত্তি করে দেওয়া এই দুই ব্যাটসম্যান যেন এরই পুরস্কার পেলেন।

চাপ সামলে আপন আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার উদাহরণ নিজের ক্যারিয়ারেও রাখেন ইমরুল। অনায়াসে তার ক্যারিয়ারটাকে দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া যায় - ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত, এবং ২০১৪ সাল থেকে।

ক্যারিয়ারের প্রথমভাগে বেশিরভাগ সময়ই হতাশা সঙ্গী হয়েছে ইমরুলের। বাজে ফর্মের জন্য দল থেকে বাদও পড়তে হয়েছে তাকে। তবে ফিরে এসে যেন বদলে গেছেন বাঁহাতি এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে ব্লুমফন্টেইনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে ক্রিকেটের অভিজাত অঙ্গনে পা রাখেন ইমরুল। ক্রিকেটের এই অঙ্গনটা যে ফুলশয্যা নয় অভিষেক টেস্টেই তা টের পান ইমরুল। প্রথম ইনিংসে ১০ রানে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ৪।

সাদা পোশাকের ক্রিকেটে এই লড়াই ২০১১ সালের অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট পর্যন্ত চলে ইমরুলের। এই সময়ে ১৬টি টেস্ট খেলে মাত্র একটি অর্ধশতক করেন তিনি। ২০১০ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ইনিংসটি ছিল ৭৫ রানের।  

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১১ সালের অক্টোবরে ঢাকা টেস্টের দুই ইনিংসে ২৯ ও ৯ রান করার পর দল থেকে বাদ পড়েন ইমরুল। দলে ফেরেন ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে। তার দলের বাইরে থাকার সময়ে ১১টি টেস্ট খেলে বাংলাদেশ।

ইমরুলের দলে প্রত্যাবর্তনটা অসাধারণ হয়। চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক করেন। ২১৮ বলে ১১৫ রানের ইনিংসটি ছিল ১৭টি চার ও একটি ছয়ে সাজানো।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পরের টেস্টে আবার রান পাননি ইমরুল। সেই সফরে অসুস্থতার কারণে দ্বিতীয় টেস্টে খেলা হয়নি ইমরুলের। খেলা হয়নি জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফরের প্রথম দুই টেস্টেও।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে আবার দলে ফেরেন ইমরুল। আর ফিরেই করেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট শতক। গত নভেম্বরে চট্টগ্রামে ১৩০ রানের সেই ইনিংস এতদিন তার ক্যারিয়ার-সেরা ইনিংস হয়ে ছিল।

সেই ম্যাচের পরই পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচ। ইমরুল কিন্তু সেই ফর্মেই আছেন-টেস্টে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে শতক পেলেন তিনি, সবশেষ চার টেস্টে এটি তার তৃতীয় শতক; খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসও।