সাকিব-সাব্বিরে ঘুচলো টি-টোয়েন্টির আক্ষেপও

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতে উড়তে থাকা বাংলাদেশের সামনে টি-টোয়েন্টিতেও দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তান। সাকিব আল হাসান আর সাব্বির রহমানের অর্ধশতকে এই সংস্করণের ক্রিকেটের অন্যতম সফল দলটিকে সহজেই ৭ উইকেটে হারিয়েছে স্বাগতিকরা।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2015, 12:11 PM
Updated : 24 April 2015, 07:21 PM

পাকিস্তানের বিপক্ষে এই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিতল বাংলাদেশ; আগের সাত ম্যাচেই হেরেছিল তারা। এর আগে ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জেতার পথে পাকিস্তানকে আরেকবার হারাতে ১৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটান মাশরাফিরা।

শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ১৪১ রান করে পাকিস্তান। জবাবে সাকিব ও সাব্বিরের শতরানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ১৬ ওভার ২ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

মোহাম্মদ হাফিজের প্রথম চার বলে ১৪ রান নিয়ে বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন তামিম ইকবাল। তবে সেই ওভারেই রান আউট হয়ে সৌম্য সরকারের বিদায়ে বড় একটা ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি অভিষেকে কোনো বল খেলতে পারেননি তৃতীয় ওয়ানডে অপরাজিত শতক করা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

তৃতীয় ওভারে ফিরে যান তামিমও। উমর গুলের অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে হাফিজের ক্যাচে পরিণত হন তিনি।

ক্রিজে এসেই দারুণ সব শট খেলে দ্রুত রান সংগ্রহ করতে থাকেন মুশফিকুর রহিম। তবে ওয়াহাব রিয়াজের বলে ব্যাটের কানায় লেগে তিনি বোল্ড হয়ে গেলে অস্বস্তিতে পড়ে বাংলাদেশ। মুশফিকের বিদায়ের সময় বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ৩৮ রান।

ওয়ানডে সিরিজে খুব একটা ব্যাটিংয়ের সুযোগ না পাননি সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান। তবে বিপদের সময় তারাই হলেন ত্রাতা। পাল্টা আক্রমণে দ্রুত রান তুলতে থাকেন সাকিব-সাব্বির।

অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেটে ১০৫ রানের জুটি গড়েন সাকিব-সাব্বির। ক্যারিয়ার সেরা ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন সাব্বির। তার ৩২ বলের ইনিংসটি গড়া ৭টি চার ও ১টি ছক্কায়।

চার হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেয়া সাকিব অপরাজিত থাকেন ৫৭ রানে। টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বের সেরা এই অলরাউন্ডারের ৪১ বলের ইনিংসটি ৯টি চারে সাজানো।

এর আগে অভিষিক্ত বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও সাকিবের আঁটসাঁট বোলিংয়ে শুরুতে রানের জন্য লড়াই করতে হয় পাকিস্তানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আহমেদ শেহজাদ ও মুক্তার আহমেদকে।

অতিথিদের উদ্বোধনী জুটি নবম ওভার পর্যন্ত স্থায়ী হলেও এই সময়ে তারা দ্রুত রান তুলতে পারেননি।

তাসকিন আহমেদের করা অফস্টাম্পের একটু বাইরের বলে শেহজাদের তোলা ক্যাচ দারুণ দক্ষতায় লুফে নেন মাশরাফি। ৫০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে শেহজাদের অবদান ১৭ রান।

রানের গতি বাড়াতে তিন নম্বরে নামেন শহিদ আফ্রিদি। সফল হননি তিনি; তরুণ মুস্তাফিজের বলে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফিরে যান তিনি। পাকিস্তানের অধিনায়কের ব্যাটে বল লেগেছিল বলে টিভি রিপ্লেতে মনে হয়নি।

অভিষিক্ত উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মুক্তারকে ফিরিয়ে আরেকটি আঘাত হানেন আরাফাত সানি। তার বল ব্যাটসম্যানকে পুরোপুরি পরাস্ত করে মুশফিকের গ্লাভসে পৌঁছায়; একটু এগিয়ে এসে খেলতে যাওয়া মুক্তার ক্রিজে পৌঁছানোর আগেই দারুণ ক্ষিপ্রতায় স্টাম্প ভেঙে দেন বাংলাদেশ উইকেটরক্ষক।

৭৭ রানে তিন উইকেট হারিয়ে অস্বস্তিতে পড়া পাকিস্তানকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন হাফিজ ও হারিস সোহেল। ৫.৪ ওভারে ৪৯ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে।

পরপর দুই বলে কোনো রান না দিয়ে হাফিজকে চাপে ফেলেন মুস্তাফিজ। পরের বলে হাফিজকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে বিপজ্জনক হয়ে উঠা জুটি ভাঙেন এই তরুণ বাঁহাতি পেসার।

হাফিজের বিদায়ের পর অতিথিদের রানের গতিতে ভাটা পড়ে। শেষ ১৩ বলে ১৫ রানের বেশি সংগ্রহ করতে না পারায় দেড়শ’ পর্যন্তও পৌঁছায়নি পাকিস্তানের সংগ্রহ।

অভিষেক স্মরণীয় করে রেখে ২০ রানে দুই উইকেট নেন মুস্তাফিজ। কোনো উইকেট না পেলেও মাত্র ১৭ রান দেন সাকিব।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৪১/৫ (মুক্তার ৩৭, শেহজাদ ১৭, আফ্রিদি ১২, হারিস ৩০*, হাফিজ ২৬, তানভির ৮; মুস্তাফিজ ২/২০, আরাফাত ১/২৩, তাসকিন ১/২৯)

বাংলাদেশ: ১৬.২ ওভারে ১৪৩/৩ (তামিম ১৪, সৌম্য ০, সাকিব ৫৭*, মুশফিক ১৯, সাব্বির ৫১*; গুল ১/২৩, ওয়াহাব ১/৩৯)

ম্যাচ সেরা: সাব্বির রহমান