আবার ‘বাংলাওয়াশ’ চায় মাশরাফিরা

জিম্বাবুয়ের পর পাকিস্তান; টানা দুই সিরিজে সব ম্যাচ জয়ের হাতছানি মাশরাফি বিন মুর্তজাদের সামনে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫-০ ব্যবধানে জিতে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছিল টাইগাররা; এবার পাকিস্তানকে হারিয়ে নিজেদের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য তাদের।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2015, 02:25 PM
Updated : 21 April 2015, 03:40 PM

বুধবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেটি শুরু হবে বেলা আড়াইটায়।  

প্রথম ম্যাচ ৭৯ রানে ও দ্বিতীয় ম্যাচ ৭ উইকেটে জিতে দশমবারের মতো সিরিজের সব ম্যাচে জয়ের দারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের সব ম্যাচ জয়ের কৃতিত্ব রয়েছে বাংলাদেশের।

গত বছরের শুরুতে একের পর এক ম্যাচ হেরে ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে পৌঁছেছিল। বছরের শেষ দিকে ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় মাশরাফিরা। এরপর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছে নিজেদের নতুন করে চেনায় তারা।

এই সিরিজের আগে ১৬ বছর ধরে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে এবার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত ছিল শুরু থেকেই। নতুন চেহারার পাকিস্তানের বিপক্ষে স্বাগতিকরা নিজেদের ‘ফেভারিট’ দাবি করে আসছিল; প্রথম দুই ম্যাচে দাপুটে জয়ে তারই প্রমাণ দেয় তারা।

শরীরী ভাষা পাল্টে গেছে ক্রিকেটারদের। বিশ্বকাপে চমৎকার পারফরম্যান্সে ক্রিকেটাদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। বেশিরভাগ খেলোয়াড় ছন্দে থাকায় যে কোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সামর্থ্য বাংলাদেশের রয়েছে। এই দলের সঙ্গে পেরে ওঠা আজহার আলির দলের জন্য কঠিনই হবে।

অতীতে দেশের মাটিতে এক বা দুই পেসার নিয়ে খেলতো বাংলাদেশ। এবার তিন পেসার নিয়ে খেলছে তারা। দেশসেরা পেসার মাশরাফির দুই সঙ্গী রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ আছেন দারুণ ছন্দে।

দুই বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান ও আরাফাত সানি গতির বৈচিত্র্যে ভুগাচ্ছেন পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের। দ্বিতীয় ম্যাচে নিখুঁত ছিলেন অফস্পিনার নাসির হোসেনও।

সাকিব, নাসির, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির রহমান ও সৌম্য সরকারের উপস্থিতিতে অনেক বোলিং বিকল্প পাচ্ছেন অধিনায়ক মাশরাফি। বোলিং বিকল্প থাকলে সাফল্য পাওয়া সহজ হয় বলে মনে করেন বাংলাদেশের সহকারী ও স্পিন বোলিং কোচ রুয়ান কালপাগে।

“অধিনায়কের অনেকগুলো বিকল্প থাকলে দলের জন্য ভালো করা সহজ হয়। সাকিব ও নাসির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে; তারা বোলিংয়েও ভালো। এটা দলের জন্যও ভালো। আশা করি, টি-টোয়েন্টিতে শক্তি বাড়াতে সাব্বিরও বল করবে। আমাদের তিন জন ব্যাটসম্যান থাকবে যারা বল করতে পারে এটা দলকে ভালো ভারসাম্যে রাখবে।”

টানা দুই ম্যাচে শতক করে বাংলাদেশের জয়ে দারুণ অবদান রাখেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে টানা তিনটি শতক করার সুযোগ রয়েছে তার সামনে। ছন্দে থাকা মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে দুই ম্যাচেই ভালো সহায়তা পান তিনি।

শুরুটা ভালো হলেও নিজের ইনিংস বড় করতে পারছেন না সৌম্য। তবে বড় একটি ইনিংস খেলতে চাইবেন তিন নম্বরে ব্যাট করা মাহমুদউল্লাহ। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রনি তালুকদার বা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক একটি সুযোগ পেতে পারেন।

কালপাগে অবশ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। র‌্যাঙ্কিং পয়েন্ট বাড়াতে জয় চাই-ই স্বাগতিকদের। তাই ‘উইনিং কম্বিনেশন’ ধরে রেখে জয়ের দিকেই বেশি মনোযোগ তাদের।

পাকিস্তান দলে একটি পরিবর্তন অনিবার্য। চোটে পড়েছেন পেসার রাহাত আলি। তার জায়গায় ফিরতে পারেন এহসান আদিলের চোটে দলে আসা উমর গুল।

টানা দুই ম্যাচ হারা পাকিস্তান একটি সুংসবাদ পেয়েছে মঙ্গলবার। বোলিং অ্যাকশন শুধরে আন্তর্জাতিক ম্যাচে বল করার অনুমতি পেয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজ। পঞ্চম বোলার নিয়ে ঝামেলায় থাকা অতিথিরা স্বস্তি পেতে পারে হাফিজের বোলিংয়ের অনুমতি মেলায়।

সাইদ আজমলের আন্তর্জাতিকে প্রত্যাবর্তনের শুরুটা ভালো হয়নি। তবে প্রথম ম্যাচের চেয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে ভালো বল করেন তিনি। এই ম্যাচে মাহমুদউল্লাহকে আউট করে প্রত্যাবর্তনের পর প্রথম উইকেটও পান এই অফস্পিনার।

পাকিস্তানের পেসাররা খুব একটা ভালো বল করতে পারেননি। পুরোপুরি অনুজ্জ্বল ছিলেন দুই পেসার জুনায়েদ খান ও রাহাত আলি। দুই ম্যাচে মাত্র এক উইকেট পান সোহেল খানের চোটে দলে আসা জুনায়েদ।

১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জয়ের পর কয়েকবারই তাদের বিপক্ষে জেতার মতো জায়গা থেকে হারে বাংলাদেশ। মাশরাফি মনে করেন, এবার ছক উল্টে গেছে, জয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন তারা। এই ধারাবাহিকতা পুরো সিরিজে ধরে রাখতে চান তারা। তামিমরা যেমন আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেট খেলছেন তাতে লক্ষ্য পূরণ কঠিন হওয়ার কথা নয় স্বাগতিকদের।