পাকিস্তানের বিপক্ষে অনেক অপেক্ষার জয় 

পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ তিনটি ওয়ানডেতে জয়ের খুব কাছ থেকে ফিরতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার শেষটা আর বেদনার হয়নি। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের শতকে ১৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পাকিস্তানকে হারিয়েছে তারা।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2015, 08:06 AM
Updated : 18 April 2015, 10:13 AM

পাকিস্তানকে ৭৯ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে প্রথম ও শেষবার পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৩২৯ রান করে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এটাই তাদের সর্বোচ্চ রান। আগের সর্বোচ্চও ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে, গত বছর এশিয়া কাপে করা ৩ উইকেটে ৩২৬ রান। জবাবে ৪৫ ওভার ২ বলে ২৫০ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান।

৩৩০ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সরফরাজ আহমেদের সঙ্গে ৫৩ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন পাকিস্তানের অধিনায়ক আজহার আলি। সরফরাজকে সীমানায় নাসির হোসেনের ক্যাচে পরিণত করে ১০.২ ওভার স্থায়ী জুটি ভাঙেন আরাফাত সানি। তার পরের ওভারে মোহাম্মদ হাফিজ রান আউট হয়ে গেলে অস্বস্তিতে পড়ে অতিথিরা।

তৃতীয় উইকেটে ৮৯ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন আজহার ও হারিস সোহেল। অর্ধশতক পাওয়া এই দুই ব্যাটসম্যানকে বিদায় করে স্বাগতিকদের খেলায় ফেরান তাসকিন আহমেদ।

আজহার মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন আর মিডঅনে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দেন সোহেল। ৭৩ বলে আজহারের ৭২ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংসটি গড়া ৭টি চারে। ৬৪ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কার সাহায্যে ৫১ রান করেন হারিস।

দ্রুত রান তুলে স্বাগতিক বোলারদের চাপে ফেলার চেষ্টা করেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ফাওয়াদ আলম। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে (৪০তম) ফাওয়াদকে মিডঅফে সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত করে ৪২ রানের জুটি ভাঙেন অরাফাত। সেই ওভারের শেষ বলে সাদ নাসিমকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে চালকের আসনে নিয়ে আসেন এই বাঁহাতি স্পিনার।

অভিষিক্ত রিজওয়ান ছিলেন বলে তখনো আশা বেঁচে ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু পরপর দুই ওভারে তাসকিন ওয়াহাব রিয়াজকে ও রুবেল হোসেন রিজওয়ানকে ফিরিয়ে দিলে বাংলাদেশের জয় সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়।

সীমানায় নাসিরের ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ৬৭ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেন রিজওয়ান। এরপর সাইদ আজমলের রান আউটে জয়ের আরো কাছে যায় বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের বলে জুনায়েদ খান এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়লে বাংলাদেশের ১৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটে।

তিনটি করে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার তাসকিন ও আরাফাত।

এর আগে তামিমের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করেন সৌম্য। শুরুতে রাহাত আলির বলে রান নিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন তামিম ও সৌম্য। ষষ্ঠ ওভার শেষে রাহাতকে বোলিং থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর স্বাগতিকদের রানের গতিতে ভাটা পড়ে।

ইনিংসের প্রথম দিকে জুনায়েদ, ওয়াহাব ও আজমলের বলে রান নিতে লড়াই করতে হচ্ছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। ৬ ওভার শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩১ রান সংগ্রহ করার পর পরের ৭ ওভার ২ বলে যোগ হয় মাত্র ১৭ রান।

রানের গতি কমে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। দ্রুত সিঙ্গেলস নিয়ে চাপ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন এই দুই জন। সেই চেষ্টা করতে গিয়েই সৌম্যের রান আউটে ভাঙে ৪৮ রানের জুটি।

শুরুতে সহজ রান দেয়া রাহাত দ্বিতীয় স্পেলে হিসেবি বোলিং করে বাংলাদেশের ওপর চাপ আরও বাড়ান। ১৮ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ৫৯ রান।

চার বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে খেলা পাকিস্তানকে ১০ ওভার করাতে হয় নাসিম, হারিস ও আজহারকে দিয়ে। তাদের ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭৯ রান সংগ্রহ করে নিজেদের ওপর থেকে চাপটা সরিয়ে নেয় স্বাগতিকরা।

উইকেটে ততক্ষণে খুব ভালোভাবে মানিয়ে নেন তামিম ও মুশফিক। এরপর অতিথি দলের বিশেষজ্ঞ বোলাররা ফিরলেও আর রানের গতি বেধে রাখতে পারেননি। ব্যাটিং পাওয়ার প্লের ৫ ওভারে (৩৬ থেকে ৪০) ৫৫ রান যোগ করে বাংলাদেশ।

২০তম ওভারের শেষ বলে রাহাতের বলে মাহমুদউল্লাহ বোল্ড হলে তামিমের সঙ্গে জুটি গড়েন মুশফিক। তৃতীয় উইকেটে ২১ ওভার ৪ বলে ১৭৮ রানের দারুণ এক জুটি উপহার দেন এই দুজন।

২৪তম ওভারে হারিসের বলে এক রান নিয়ে অর্ধশতকে পৌঁছান তামিম। ৭৫ বলে অর্ধশতকে পৌঁছানো এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নিজের রান তিন অঙ্কে নিয়ে যান ১১২ বলে।

অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন তামিম। ২৮তম ওভারে হারিসের বলে মিড উইকেট দিয়ে ম্যাচের প্রথম ছক্কাটি হাঁকান তিনি। পরের বলটিও একই জায়গা দিয়ে আবার উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করেন তিনি। এটি ছিল আরও বিশাল, গ্যালারিতে উল্লসিত ভক্তদের মাঝে গিয়ে পড়ে সেই বল।

পরের ওভারে আজহারের বলে জীবন পান মুশফিক। সে সময় ৩৫ রানে ব্যাট করছিলেন তিনি। এর আগে সাদ নাসিমকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান সে সময় ৪৭ রানে ব্যাট করা তামিম।

৩৫তম ওভারে আজমলের বলে চার হাঁকিয়ে অর্ধশতকে পৌঁছান মুশফিক। সেই ওভারেই তিন বলের দুবার সীমানার বাইরে বল পাঠিয়ে নিজের পঞ্চম শতকে পৌঁছান তামিম। ২০১৩ সালের পর ওয়ানডেতে এই প্রথম শতক পেলেন তিনি।

ওয়াহাবের বলে রিজওয়ানের ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ১৩২ রানের দৃঢ়তাভরা ইনিংস খেলেন তামিম। তার ১৩৫ বলের ইনিংসটি ১৫টি চার ও ৩টি ছক্কা সমৃদ্ধ।

তামিম ফিরে গেলেও অবিচল ছিলেন মুশফিক। চতুর্থ উইকেটে সাকিবের সঙ্গে মাত্র ৩৪ বলে ৫০ রানের জুটি উপহার দেন তিনি। এই জুটি গড়ার পথে নিজের ৬৯ বলে তৃতীয় শতকে পৌঁছান মুশফিক। তামিমের মতো আজমলের বলে দুটি চার হাঁকিয়ে নিজের রান তিন অঙ্কে নিয়ে যান তিনি।

মাত্র ৭৭ বলে খেলা মুশফিকের ১০৬ রানের ঝড়ো ইনিংসটি ১৩টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো। এই প্রথম কোনো একই ওয়ানডেতে শতক পেলেন বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান।

ওয়াহাবের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে মুশফিক ফিরে গেলেও বাংলাদেশের ইনিংসে তার কোনো প্রভাব পড়তে দেননি সাকিব ও সাব্বির রহমান। পঞ্চম উইকেটে ১৪ বলে ৩০ রানের জুটি গড়েন এই দুজন।

শেষ ওভারে সাকিব ও সাব্বিরকে ফেরানো ওয়াহাব পাকিস্তানের সেরা বোলার। ৫৯ রানে ৪ উইকেট নেন এই বাঁহাতি পেসার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩২৯/৬ (তামিম ১৩২, সৌম্য ২০, মাহমুদউল্লাহ ৫, মুশফিক ১০৬, সাকিব ৩১, সাব্বির ১৫, নাসির ৩*; ওয়াহাব ৪/৫৯, রাহাত ১/৫৬)

পাকিস্তান: ৪৫.২ ওভারে ২৫০ (আজহার ৭২, সরফরাজ ২৪, হাফিজ ৪, হারিস ৫১, রিজওয়ান ৬৭, ফাওয়াদ ১৪, নাসিম ০, ওয়াহাব ৮, আজমল ০, জুনায়েদ ০, রাহাত ১*; তাসকিন ৩/৪২, আরাফাত ৩/৪৭, রুবেল ১/৪৫, সাকিব ১/৪৫)

ম্যাচ সেরা: মুশফিকুর রহিম