পাকিস্তান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উন্মুখ বাংলাদেশ

বিশ্বকাপে নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করার পর বাংলাদেশ এবার নিজেদের অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। তবে শক্তিশালী পাকিস্তানের মোকাবেলায় মোটেও ভয় পাচ্ছেন না সাকিব আল হাসানরা। বরং ১৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এবার জয় চাই-ই তাদের।

শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ওয়ানডের সিরিজের প্রথম ম্যাচটি শুরু হবে বেলা আড়াইটায়।

২০১১ সালের ডিসেম্বরের পর এই প্রথম দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে খেলছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। মাঝে ২০১২ সালে বাংলাদেশ দুইবার পাকিস্তান সফর বাতিল করায় দুই দেশের বোর্ডের সম্পর্কের অবনতি হয়। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেদের খেলোয়াড়দের পাঠানো বন্ধ করে দেয় পিসিবি। আর এবারের সিরিজের আগে তারা আয়ের ভাগ চাওয়ায় খেলা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়। পরে বিসিবি বাতিল করা দুটি সিরিজের ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হলে সমস্যার সমাধান হয়।

সংশয় পেছনে ফেলে শুরু হতে যাওয়া সিরিজে চাপেই থাকার কথা পাকিস্তানের। মিসবাহ-উল-হক, শহিদ আফ্রিদির অবসরের পর ওয়ানডে দল পুনর্গঠন করতে হচ্ছে তাদের।

সুযোগটি কাজে লাগাতে কোনো ভুল করতে রাজি নয় বাংলাদেশ। আমরাই ফেভারিট বলে অতিথিদের ওপর চাপটা আগে থেকেই বাড়িয়ে রেখেছে তারা। একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে দ্বিতীয় সারির দলের কাছে হারের পর পাকিস্তানের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপটা আরও বেড়েছে।

বাংলাদেশ এগিয়ে আছে মানতে আপত্তি নেই পাকিস্তানের কোচ ওয়াকার ইউনিসেরও। গত কয়েক বছরে অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। তাই স্বাগতিকরা জিতলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার অনুপস্থিতিতে প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক দলকে নেতৃত্ব দেবেন সাকিব। প্রথম ওয়ানডের একাদশ এখনো ঠিক করা হয়নি বলেন জানান তিনি। বাংলাদেশ দুই না তিন পেসার নিয়ে খেলবে তার কোনো আভাসও দেননি।

তবে বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারের সঙ্গে এই ম্যাচে দ্বিতীয় বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে থাকবেন আরাফাত সানি।

পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে স্পিনারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। দুই অফস্পিন অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও নাসির হোসেনের বোলিংয়ের দিকেও তাকিয়ে থাকবে স্বাগতিকরা।

“এখানে পেস বোলারদের ভালো বোলিং করাও গুরুত্বপূর্ণ। আমার ধারণা, আমরা স্পিনাররা দেশে খেলার সময় বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলি। আশা করি, এর ধারাবাহিকতা আমরা ধরে রাখতে পারবো। আমার মনে হয়, পেস বোলারদেরও এখন অনেক বেশি দায়িত্ব রয়েছে।”

অলরাউন্ডার আবুল হাসানের খেলার সম্ভাবনা কমই। বিশ্বকাপে ভালো খেলা দুই পেসার রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদের ওপরই আস্থা রাখতে পারে বাংলাদেশ।

উদ্বোধনী জুটি নিয়ে দুর্ভাবনা কাটছে না বাংলাদেশের। প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের ইনিংস উদ্বোধন করা তামিম ইকবাল ও রনি তালুকদার সেই ম্যাচে ভালো করতে পারেননি। তবে তাদের ওপর আস্থা রাখবে স্বাগতিকরা। তাই রনির ওয়ানডে অভিষেক নিশ্চিত।

সাকিব জানান, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভালো করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তরুণদের। সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমানদের মতো তরুণদের দিকে এই সিরিজেও তাকিয়ে থাকবে দল। 

ওয়ানডে সেরা টুর্নামেন্টে ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান সাকিব। সাফল্য পেতে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহদের কাছ থেকে ভালো সহায়তা প্রয়োজন হবে তার।

চোটের কারণে স্পিনার ইয়াসির শাহের সিরিজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তানের চার পেসার নিয়ে খেলা প্রায় নিশ্চিত। জুনায়েদ খান, ওয়াহাব রিয়াজ যথারীতি থাকবেন বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বে। রাহাত আলি ও এহসান আদিলের সহায়তাও পাবেন তারা।

অতিথি পেসারদের ব্যাপারে কোনো ভীতি কাজ করছে না হাথুরুসিংহের শিষ্যদের মনে। নেটে বেশ কয়েকজন বাঁহাতি পেসারের বলে অনুশীলন করে এই সিরিজের প্রস্তুতি নিয়েছেন স্বাগতিক খেলোয়াড়রা।

সাকিবের বিশ্বাস, পাকিস্তানের বোলারদের সামলানোর সামর্থ্য বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের রয়েছে। তাদের জন্য সাইদ আজমল বড় এক পরীক্ষা হতে পারেন। এই অফস্পিনার গত বছরের ৩০ অগাস্টের পর থেকে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি।   

আজমলের জন্যও বড় পরীক্ষা হবে এই সিরিজ। বোলিং অ্যাকশন সংশোধনের পর তার বোলিংয়ে আগের সেই ধার আছে কী না, তার প্রথম পরীক্ষা নেবেন সাকিব-মাহমুদুল্লাহ-মুশফিকরা।

পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র জয়টি এসেছিল ১৯৯৯ সালে। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে জিতে নিজেদের র‌্যাঙ্কিং পয়েন্ট বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের সামনে। ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে নবম স্থানে থাকা দলটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ব্যবধান যতটা সম্ভব কমাতে চায়। ৯২ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম স্থানে আছে ক্যারিবীয়রা।