অস্ট্রেলিয়ার নয়, রনকি শুধুই নিউ জিল্যান্ডের

অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে ব্যাটটা কি একটু থেমে থেমে যাবে লুক রনকির? উইকেটের পেছনে কোনো ক্যাচ নিতে অথবা কোনো স্টাম্পিং করতে গিয়ে মনের মধ্যে কোনো উথালপাথাল হবে নিউ জিল্যান্ডের এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের?

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2015, 04:32 PM
Updated : 28 March 2015, 04:32 PM

আগামী রোববার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনালের আগে এই ধরণের প্রশ্ন শুনতে হলো রনকিকে। এর কারণও আছে-নিউ জিল্যান্ডে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার জীবনের বড় একটা অংশ কাটান অস্ট্রেলিয়ায়।

অস্ট্রেলিয়ার জল-হাওয়ায় বেড়ে ওঠাই শুধু নয়, ক্রিকেটের হাতেখড়িও তার এই দেশেই। এমনকি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার আবির্ভাবও অস্ট্রেলিয়া দলের সোনালি জার্সি গায়েই হয়েছে।

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে রনকি পেশাদারিত্বের চরম রূপটাই শুধু দেখাননি, জন্মভূমির প্রতি পরম মমতার দিকটিও তুলে ধরেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালো কিছু করে নিউ জিল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপার দিকে নিয়ে যেতে তার মনে বিন্দুমাত্র যাতনা হবে না বলেই জানান তিনি।

রনকির বিশ্বস্ততা দুই দিকে নয়, একদিকেই। আর সেটা শুধুই নিউ জিল্যান্ডের প্রতি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জীবনের শুরুর দিকে দুই দশকেরও বেশি সময় অস্ট্রেলিয়ায় কাটান লুক রনকি। তাসমান সাগর পাড়ি দিয়ে ৭ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়েছিলেন রনকি।

ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয় রনকির। ২০০২ সালে ওয়ারিয়র্সে অভিষেক হয় তার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২০০৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় রনকির।

তবে অস্ট্রেলিয়ার ১৬৬তম ওয়ানডে খেলোয়াড় যখন তারই সাবেক দলের বিপক্ষে এমসিজিতে খেলতে নামবেন, তার বিশ্বস্ততা নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকার প্রশ্নই আসে না। তার পরিবারের বড় একটা অংশও চাইবে কিউইরা বিশ্বকাপ জিতুক।

২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়া রনকি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জন্মভূমির প্রতি বিশ্বস্ত থাকার কথাই বলেন।

“আমি সেখানে জন্মেছি এবং জীবনের সাতটি বছর সেখানে কাটিয়েছি; এমনকি আমি যখন অস্ট্রেলিয়ায় ছিলাম…আমি অস্ট্রেলিয়া দলে খেলতে চেয়েছি, আমি ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে চেয়েছি। এটা সবসময়ই আমার স্বপ্ন ছিল এবং এটা আমি করতে চেয়েছি।”

এরপর রনকি যোগ করেন, “কিন্তু তখনও আমি কিউই ছিলাম।… আর এখন আমি নিজেকে সত্যিকার অর্থেই কিউই বলতে পারি।”

সবকিছুর পরেও রনকির অবস্থাটা একদমই আলাদা। অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ক্রিকেট খেলা একমাত্র খেলোয়াড় তিনিই। আর ক্রিকেটের ইতিহাসে দুই দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলা ২৩তম ক্রিকেটার রনকি।

এমসিজিতে রোববারের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া দলের অনেকেই রনকির বন্ধু অথবা সাবেক সতীর্থ ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক, অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন ও ফাস্ট বোলার মিচেল জনসন রনকির অভিষেক ম্যাচের একাদশে খেলেন।

অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান অ্যারন ফিঞ্চ ক্রিকেট একাডেমিতে তার রুমমেট ছিলেন। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া দলে রনকির সতীর্থ ছিলেন মিচেল মার্শ।   

সাবেক সতীর্থদের বিপক্ষে খেলা রনকির জন্য অবশ্য এটাই প্রথম নয়। ৩৩ বছর বয়সী এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের এই অম্লমধুর অভিজ্ঞতা তৃতীয়বারের জন্য হতে চলেছে। এর মধ্যে শেষটি তিনি খেলেন এই বিশ্বকাপেই, গ্রুপ পর্বে অকল্যান্ডের সেই ম্যাচে এক উইকেটে জেতে রনকির দল।

এজবাস্টনে ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে অকল্যান্ডের ম্যাচটি তার জন্য মানসিকভাবে সহজ ছিল বলে উল্লেখ করেন রনকি।

“প্রথমবার আমি যখন ইংল্যান্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলি, সেটা ছিল অন্যরকম এক অনুভূতি। এই ছেলেদের বিপক্ষে খেলা…আমি এদের সঙ্গে থেকেছি, এদের সঙ্গে আমি খেলেছি, এদের সঙ্গে আমি বেড়ে উঠেছি।”

পুরানো বন্ধুদের বিপক্ষে আবার খেলতে হচ্ছে। তাও আবার এমন এক জায়গায়, যেখানে তার পদচারণা ছিল। যেখানে তাদের সঙ্গে খেলেছেন, সুখ-দু:খ ভাগাভাগি করেছেন। এবার কেমন লাগবে রনকির?

“এখন আপনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মঞ্চে নামছেন। তাদের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ফাইনাল। এটা দারুণ।”