গাপটিলের রেকর্ডে নিউ জিল্যান্ডের বড় জয়

মার্টিন গাপটিলের রেকর্ড গড়া ইনিংসের পর ম্যাচের ফল নিয়ে খুব একটা সন্দেহ ছিল না। এরপরও চেষ্টা করেছিলেন ক্রিস গেইল, কিন্তু চারশ’ রানের কাছাকাছি লক্ষ্য তাড়া করায় তার এই প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল না। ট্রেন্ট বোল্টের তোপে বড় জয়ে সেমি-ফাইনালে পৌঁছায় নিউ জিল্যান্ড।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2015, 01:31 AM
Updated : 21 March 2015, 08:02 AM

শনিবার ওয়েলিংটনের ওয়েস্টপ্যাক স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার-ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৩ রানে হারায় নিউ জিল্যান্ড। আগামী মঙ্গলবার অকল্যান্ডে সেমি-ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকরা। 

টানা দ্বিতীয় শতক পাওয়া গাপটিলের দৃঢ়তা ভরা ব্যাটিংয়ে ৬ উইকেটে ৩৯৩ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে নিউ জিল্যান্ড। শেষ ১০ ওভারে ১৫৩ রান সংগ্রহ করে ম্যাচটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যায় তারা।

চারশ’ রানের কাছাকাছি লক্ষ্য তাড়া করে জিততে গেইল, মারলন স্যামুয়েলসদের ব্যাট থেকে বড় ইনিংস দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। শুরু করলেও কোনো ব্যাটসম্যানই নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। টানা ১০ ওভার বল করা বোল্টের তোপে ৩০ ওভার ৩ বলে ২৫০ রানে অলআউট হয়ে যায় ক্যাবিরীয়রা। 

প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে তিনশ’ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতার চেষ্টায় ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের গতি সচল রেখেছিলেন গেইল। তবে অন্য প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় ক্যারিবীয়দের শেষরক্ষা হয়নি।

১০ ওভারের মধ্যে চার উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাজটা ভীষণ কঠিন করে তুলেন বোল্ট। ৪৪ রানে চার উইকেট নিয়ে বাঁহাতি এই পেসারই নিউ জিল্যান্ডের সেরা বোলার।

জনসন চার্লসকে বোল্ড করে দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হানেন বোল্ট। ষষ্ঠ ওভারে স্লিপে লেন্ডল সিমন্সকে গাপটিলের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। আর দশম ওভারে সবচেয়ে বড় আঘাতটা হানেন এবারের আসরের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক।

বোল্টের বলে ডিপ থার্ড ম্যানে ড্যানিয়েল ভেটোরির দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হন স্যামুয়েলস। সীমানায় লাফিয়ে ৩৬ বছর বয়সীর এক হাতে তালুবন্দি করার দৃশ্যটি বিশ্বাসই হচ্ছিল না তার। সেই ওভারেই দিনেশ রামদিনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন বোল্ট।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও অবিচল ছিলেন দলে ফেরা গেইল। অ্যাডাম মিল্নের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৬১ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তার ৩৩ বলের ইনিংসটি ৮টি ছক্কা ও ২টি চার সমৃদ্ধ।

গেইল ফিরে গেলেও রানের গতি কমেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তিন অলরাউন্ডার ড্যারেন স্যামি, আন্দ্রে রাসেল ও জ্যাসন হোল্ডার দ্রুত গতিতে রান তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু অতিরিক্তি আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের মাশুল দিয়ে ফিরতে হয় তাদের। 

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় নিউ জিল্যান্ড। ৮ বলে ১২ রান করে ফিরে যান অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। গাপটিলের সঙ্গে ৬২ রানের সম্ভাবনাময় জুটি গড়ে ফিরে যান কেন উইলিয়ামসন।

তবে তৃতীয় উইকেটে রস টেইলরের সঙ্গে ১৪৩ রানের জুটি উপহার দিয়ে দলকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যান ম্যাচ সেরা গাপটিল। রান আউট হয়ে টেইলরের বিদায়ে ভাঙে ১৩৫ বল স্থায়ী জুটি।

টেইলরের বিদায়ের পর রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হয় নিউ জিল্যান্ড। শেষ ১৫ ওভারে ২০৬ রান সংগ্রহ করে বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিটরা।

এই সময়ে কোরি অ্যান্ডারসনের সঙ্গে ২৯ বলে ৪৬ ও গ্র্যান্ট এলিয়টের সঙ্গে ১৯ বলে ৫৫ রানের দুটি বিধ্বংসী জুটি উপহার দেন গাপটিল।

শুরুতে দেখেশুনে খেলে ৬৪ বলে অর্ধশতকে পৌঁছান গাপটিল। এরপর রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হন তিনি। ৪৭ বলে দ্বিতীয় অর্ধশতকটি করেন তিনি। অর্থাৎ ১১১ বলে নিজের রান তিন অঙ্কে নিয়ে যান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

শতকে পৌঁছানোর পথে কোনো ছক্কা হাকাননি গাপটিল, এই সময়ে তার ব্যাট থেকে আসে ১২টি চার। তবে টানা দ্বিতীয় শতকে পৌঁছানোর পর খুনে মেজাজে ব্যাটিং করেন তিনি। এই সময়ে চারের পাশাপাশি উড়িয়েও কয়েকবার সীমানা পার করেন তিনি।

বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই শতক করেছিলেন নিউ জিল্যান্ডের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান গাপটিল।

নিউ জিল্যান্ডের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের তৃতীয় অর্ধশতকটি আসে ২৩ বলে। তার চতুর্থ অর্ধশতক আসে মাত্র ১৮ বলে। অর্থাৎ দ্বিতীয় শতকটি করেন মাত্র ৪১ বলে। এই সময়ে ৯টি চার ও ৮টি ছক্কা উপহার দেন গাপটিল।

লুক রনকির সঙ্গে ১৩ বলে ৩২ ও ড্যানিয়েল ভেটোরির সঙ্গে ৮ বলে ২৮ রানের দুটি জুটি গড়েন গাপটিল। অর্থাৎ শেষ ২১ বলে ৬০ রান সংগ্রহ করে নিউ জিল্যান্ড।

৪৮তম ওভারে রাসেলের বলে লংঅফ দিয়ে চার হাকিয়ে দ্বিশতকে পৌঁছে যান গাপটিল। গেইলের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে দ্বিশতক পান তিনি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড নিজের করে নেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৫ রান করেছিলেন গেইল।

দলকে চারশ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার পথে ২৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন গাপটিল। তার ১৬৩ বলের ইনিংসটি ২৪টি চার ও ১১টি ছক্কা সমৃদ্ধ।

শূন্য রানেই ফিরে যেতে পারতেন গাপটিল। পেসার জেরোম টেইলরের করা প্রথম ওভারে স্কয়ার লেগে স্যামুয়েলসের হাতে জীবন পান তিনি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৯৩/৬ (গাপটিল ২৩৭*, ম্যাককালাম ১২, উইলিয়ামসন ৩৩, টেইলর ৪২, অ্যান্ডারসন ১৫, এলিয়ট ২৭, রনকি ৯, ভেটোরি ৮*; টেইলর ৩/৭১, রাসেল ২/৯৬)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩০.৩ ওভারে ২৫০ (গেইল ৬১, চার্লস ৩, সিমন্স ১২, স্যামুয়েলস ২৭, রামদিন ০, কার্টার ৩২, রাসেল ২০, হোল্ডার ৪২, টেইলর ১১, বেন ৯*; বোল্ট ৪/৪৪, ভেটোরি ২/৫৮, সাউদি ২/৮২, অ্যান্ডারসন ১/২৪, মিল্ন ১/৪২)

ম্যাচ সেরা: মার্টিন গাপটিল।