দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের রুদ্ধশ্বাস জয়

চেষ্টার কমতি ছিল না এবি ডি ভিলিয়ার্সের। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়কের ব্যাটিং বীরত্বও ঠেকাতে পারেনি পাকিস্তানকে। বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিটদের ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ২৯ রানে হারিয়ে টানা তৃতীয় জয় তুলে নিয়েছে সাবেক চ্যাম্পিয়নরা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2015, 01:30 AM
Updated : 7 March 2015, 02:37 PM

এক সময়ে বড় সংগ্রহের সম্ভাবনাই জাগিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু শেষ দিকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় আড়াইশ’ পর্যন্তও যেতে পারেনি তারা। দুই বল বাকি থাকতে ২২২ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান।

দুইবার বৃষ্টির বাধায় পড়া ম্যাচে ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৩২ রান।

পাকিস্তানের পেসারদের মারাত্মক বোলিংয়ে ভীষণ বিপদে পড়া প্রোটিয়াদের লড়াইয়েই রেখেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি, ৩৩ ওভার ৩ বলে ২০২ রানে অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটাই পাকিস্তানের প্রথম জয়। আগের তিন বারই প্রোটিয়াদের কাছে হেরেছিল তারা। টানা তৃতীয় এই জয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালের পথে আরেক ধাপ এগিয়েছে পাকিস্তান। শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে হারালে কোনো সমীকরণই কষতে হবে না সাবেক চ্যাম্পিয়নদের।

শনিবার অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে ২৩২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। দ্বিতীয় বলেই কুইন্টন ডি কককে হারায় তারা। মোহাম্মদ ইরফানের বলে সরফরাজ আহমেদের গ্লাভসবন্দি হয়ে যান এই ডান হাতি ব্যাটসম্যান।

দ্বিতীয় উইকেটে হাশিম আমলা ও ফাফ দু প্লেসির ৬৭ রানের জুটিতে দ্রুত এগুতে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। দু প্লেসিকে ফিরিয়ে ৯.১ ওভার স্থায়ী প্রতিরোধ ভাঙার কৃতিত্ব রাহাত আলির।

এক সময়ে ১ উইকেটে ৬৭ করা করা দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৫ রান যোগ করতে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে।

১০২ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকা তাকিয়ে ছিল অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্সের দিকে। ডেল স্টেইন, কাইল অ্যাবটকে নিয়ে দলকে ৮ উইকেটে ২০০ রানে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি।

জয়ের জন্য আর ৩২ রান প্রয়োজন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। এমন সময় সোহেল খানের বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে সরফরাজের গ্লাভসবন্দি হন ডি ভিলিয়ার্স। ৫৮ বলে ৭টি চার ও ৫টি ছক্কার সাহায্যে ৭৭ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন তিনি।

পরের ওভারেই ওয়াহাব রিয়াজ ইমরান তাহিরকে সরফরাজের গ্লাভসবন্দি করলে অসাধারণ এক জয় পায় পাকিস্তান।

দলে ফিরেই ৬টি ক্যাচ গ্লাভসবন্দি করে ওয়ানডের বিশ্বরেকর্ড ছুঁয়েছেন ম্যাচ সেরা সরফরাজ।

পাকিস্তানের জয়ে দারুণ অবদান তিন পেসার ইরফান, ওয়াহাব ও রাহাতের। তিন বাঁহাতি পেসারই তিনটি করে উইকেট নেন।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই হয় পাকিস্তানের। টানা চার ম্যাচে ব্যর্থতার পর পরিবর্তন আনা হয় পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটিতে। শেহজাদের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করেন দলে ফেরা উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান সরফরাজ।

পেছন দিকে অনেকটা দৌড়ে শেষ মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে শেহজাদের দারুণ ক্যাচ নেন ডেল স্টেইন। তার কৃতিত্বে ৩০ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর সরফরাজ ও ইউনুস খানের দৃঢ়তায় প্রতিরোধ গড়ে পাকিস্তান।
হারিস সোহেলের চোটে দলে আসা ইউনুসের সঙ্গে ৬২ রানের জুটি উপহার দেন সরফরাজ। রানআউট হওয়ার আগে ৪৯ বলে খেলা সরফরাজের ৪৯ রানের ইনিংস গড়া ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায়।

মিসবাহর সঙ্গে ৪০ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন ইউনুস। ডি ভিলিয়ার্সের বলে রাইলি রুশোর হাতে ক্যাচ দেন তিনি।

ফারহান বেহারদিনের জায়গায় দলে ফেরা জেপি ডুমিনির সঙ্গে পঞ্চম বোলারের কাজটা সারেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক। ৬ ওভার বল করে ৪৩ রান দিয়ে ইউনুসের উইকেটটি নেন ডি ভিলিয়ার্স।

এক প্রান্তে মিসবাহ অবিচল থাকলেও অন্য প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান। শোয়েব মাকসুদ (৮), আকমল (১৩) ও শহিদ আফ্রিদির (২২) দ্রুত বিদায়ে শেষ দিকে পাকিস্তানের রানের গতিতে ভাটা পড়ে।

এক সময়ে পাকিস্তানের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ২১২ রান। সেখান থেকে ১০ রান যোগ করতেই শেষ ৫ উইকেট হারায় তারা।

ডেল স্টেইনের বলে সীমানায় মর্নে মরকেলের ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ৫৬ রান করেন মিসবাহ। ক্যারিয়ারের ৪২তম অর্ধশতকে পৌঁছানোর পথে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক পার হন পাকিস্তানের অধিনায়ক।

শেষ দিকে রীতিমত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন স্টেইন। মিসবাহ, আফ্রিদি ও রাহাতকে ফিরিয়ে দেন তিনি। ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে এই পেসারই দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান: ৪৬.৪ ওভারে ২২২ (সরফরাজ ৪৯, শেহজাদ ১৮, ইউনুস ৩৭, মিসবাহ ৫৬, মাকসুদ ৮, আকমল ১৩, আফ্রিদি ২২, ওয়াহাব ০, সোহেল ৩, রাহাত ১, ইরফান ১*; স্টেইন ৩/৩০, মরকেল ২/২৫, অ্যাবট ২/৪৫, তাহির ১/৩৮, ডি ভিলিয়ার্স ১/৪৩)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৩.৩ ওভারে ২০২ (ডি কক ০, আমলা ৩৮, দু প্লেসি ২৭, রুশো ৬, ডি ভিলিয়ার্স ৭৭, মিলার ০, ডুমিনি ১২, স্টেইন ১৬, অ্যাবট ১২, মরকেল ৬*, তাহির ০; রাহাত ৩/৪০, ওয়াহাব ৩/৪৫, ইরফান ৩/৪০)

ম্যাচ সেরা: সরফরাজ আহমেদ।