মিয়াঁদাদের কলাম: হারার ভয় পেলে চলবে না পাকিস্তানের

পাকিস্তান কক্ষপথে ফিরেছে টানা দুই জয়ে। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অগ্নিপরীক্ষা। সেখানে পাকিস্তানের একাদশে পরিবর্তনের পরামর্শ জাভেদ মিয়াঁদাদের। সঙ্গে ভয়হীন ক্রিকেট খেলার তাগিদও এই কিংবদন্তির কণ্ঠে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2015, 11:56 AM
Updated : 6 March 2015, 11:56 AM

টানা দুই হারের পর টানা দুই জয়। পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে নিঃসন্দেহে। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে তাদের ভঙ্গুর ব্যাটিং লাইনও আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছে একটু একটু করে।

ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারের পর জিম্বাবুয়ের বোলাররাও শক্ত পরীক্ষা নেয় পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানদের। আত্মবিশ্বাস ফেরানোর জন্য তাদের তাই খুব প্রয়োজন ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো প্রতিপক্ষ। সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে মিসবাহর দল।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্দান্ত বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে সমীকরণ একেবারে আলাদা। এ দিন পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের সতর্ক থাকতে হবে বেশি। বিশেষত সামলাতে হবে ডেল স্টেইন ও মরনে মরকেলের নতুন বল। নইলে এবি ডি ভিলিয়ার্সের নেতৃত্বাধীন দুর্দান্ত ব্যাটিং লাইনের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া সম্ভব হবে না। এক নাসির জামশেদকে বাদ দিলে বাদবাকি ব্যাটসম্যানরা সর্বশেষ দুই ম্যাচে কিছুটা ফর্ম ফিরে পেয়েছে। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজে দেবে।

প্রথম চার ম্যাচে নিয়মিত উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদকে কেন খেলোনো হয়নি, এটি ব্যাখ্যা করেছে কোচ ওয়াকার ইউনিস। তার যুক্তি পড়ে আমি অবাক হইনি মোটেও। টিম ম্যানেজম্যান্ট সরফরাজকে বিবেচনা করছে কেবল উইকেটরক্ষক হিসেবে। অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেটে দুর্বল টেকনিকের কারণে ওকে ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখছে না তারা।

ওদিকে নাসির জামশেদের ফর্ম মাথাব্যথা বাড়িয়ে দিয়েছে মিসবাহ ও ওয়াকারের। ও ব্যর্থ হয়েছে টানা তিন ম্যাচে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দুর্বল দলের বিপক্ষেও শর্ট বলে হয়েছে আউট। যেমনটা হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও। আমার মনে হয় বিশ্বকাপের মঞ্চে তিনটি সুযোগ যথেষ্ট। আর ভারতের বিপক্ষে যদি ওপেনার হিসেবে ইউনিস খানকে খেলানো যায়, তাহলে অন্যদের দিয়ে চেষ্টা করানোয় দোষ কোথায়!

এখানে আমি ওয়াকারের যুক্তির সঙ্গে দ্বিমত করছি। এমন বিরুদ্ধ কন্ডিশনে সরফরাজের ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে সন্দিহান কোচ। ইনফর্ম অন্য কোনো ব্যাটসম্যানকে আহমেদ শেহজাদের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠিয়ে সরফরাজকে নীচের দিকেও তো নামানো যায়। তাতে পাকিস্তানের ভালো হবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর ওয়াকারের নিশ্চয়ই সরফরাজের উইকেটরক্ষণের সামর্থ্য নিয়ে কোনো সংশয় নেই। ও স্ট্যাম্পের পেছনে নিশ্চিতভাবেই উমর আকমলের চেয়ে ভালো, নাকি?

মিসবাহর রক্ষণাত্মক মানসিকতা নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে অনেক। তবে ওর দলে যেমন ক্রিকেটার রয়েছে, তাদের নিয়ে যে কোন অধিনায়কই এমন খোলসে ঢুকে যেত। হ্যাঁ, ব্যাটসম্যান হিসেবে অনেক বেশি ডট বল খেলছে মিসবাহ। অন্য প্রান্তে উইকেট হারানোর আশঙ্কা থেকেই ও হয়তো স্ট্রাইকরেট বাড়াতে পারছে না। আমার মনে হয়, অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানের উপর মিসবাহর আস্থা রাখা উচিত এক-দুই রান করে নিয়ে। তেমনটা করলে প্রতিপক্ষের জন্য এর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক আর কিছু হতে পারে না।

পাকিস্তানের আরো উচিত হবে মন থেকে হারের ভয় ঝেড়ে ফেলা। হয়তো ওই ভীতির কারণেই আমরা মোহাম্মদ ইরফানকে দিয়ে এত এত বোলিং করালাম। ওর উচ্চতার বোলারের পক্ষে সাত দিনে তিন ম্যাচে খেলা সহজ না। বিশেষত সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ইয়াসির শাহ কিংবা এহসান আদিলকে খেলানো যেত সহজেই। তাতে সতেজ হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ থাকত ইরফানের। এই টুর্নামেন্টে খেলা ও একমাত্র বোলার, যে কিনা পিচ থেকে বাড়তি বাউন্স আদায় করে ব্যাটসম্যানদের কোণঠাসা রাখছে।

আমি মোটেও অবাক হইনি, যখন সাত ফুট উচ্চতার ইরফান সর্বশেষ ম্যাচে তিন ওভার বোলিং শেষে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠ ছাড়ল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের জন্য ওর ফিট না হওয়াটা হবে পাকিস্তানের জন্য বড় ধাক্কার। প্রোটিয়া টপ অর্ডারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য ইরফানকে পাকিস্তানের প্রয়োজন খুব। ওকে ছাড়া দলটির বোলিং সামর্থ্য অত উঁচু পর্যায়ের না।

যদি ইরফান আনফিটই থাকে, তাহলে একাদশে ইয়াসির শাহকে খেলানোর কথা ভাবতে পারে পাকিস্তান। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের আক্রমণ করার জন্য ফাস্ট বোলিংয়ের চেয়ে স্পিন বড় অস্ত্র। ভারতীয় স্পিনারদের সামনে প্রোটিয়াদের গুটিয়ে যাওয়াটা আমরা দেখেছি চলতি বিশ্বকাপেই।

তবে ওই হারের পর বিশ্বকাপ সম্ভাবনায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রত্যাবর্তনটা হয়েছে চোখ ধাঁধানো। টানা দুই খেলায় তুলেছে চারশর ওপর রান। হাশিম আমলা, ফাফ দু প্লেসি, ডি ভিলিয়ার্স, ডেভিড মিলাররা আছে ফর্মের শিখরে। অন্য দলগুলোর সঙ্গে তাদের পার্থক্য আক্রমণত্মক মানসিকতায়। মুখোমুখি হলে অন্য ব্যাটসম্যানরা ডট বল দেবে, এমন অনেক ডেলিভারিতে এইসব প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা মেরে দেয় বাউন্ডারি। একটা মাত্র উপায়েই তাদের জবাব দেওয়ার আছে। ধারাবাহিকভাবে নিখুঁত লাইন-লেন্থে বোলিং করে ওদের ভুল করতে বাধ্য করা।

দক্ষিণ আফ্রিকার নির্দয় পাওয়ার হিটিং ব্যাটিংয়ের মানদণ্ডটা নিয়ে গেছে অনেক উঁচুতে। অন্য যে কোনো দলের জন্য তাদের রোখা কঠিন। পাকিস্তানকে তাই আরো উদ্ভাবনী/সৃজনশীল হতে হবে। চেষ্টা করতে হবে ডি ভিলিয়ার্সের দলকে চমকে দেওয়ার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ‘সুপার সানডে’তে পাকিস্তান দলের কাছ থেকে অমন ‘সুপার’ অ্যাপ্রোচের অপেক্ষায় রইলাম।